গাজায় গণহত্যার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে নিবন্ধ বাদ দিয়ে সমালোচিত হার্ভার্ড

গাজায় গণহত্যার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে নিবন্ধ বাদ দিয়ে সমালোচিত হার্ভার্ড

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান গণহত্যায় ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করে লেখা একটি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ বাদ দেওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছে হার্ভার্ড ল স্কুলের খ্যাতনামা জার্নাল দ্য হার্ভার্ড ল রিভিউ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জার্নালটির সম্পাদকমণ্ডলী সমালোচনার ভয়েই নিবন্ধটি প্রকাশ করেননি।

দ্য হার্ভার্ড ল রিভিউ পরিচালনায় থাকেন শিক্ষার্থীরাই। জার্নালটির জন্য ‘দ্য অনগোয়িং নাকবা: টুওয়ার্ডস আ লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক ফর প্যালেস্টাইন’ নামে ২ হাজার শব্দের একটি নিবন্ধ লেখেন ফিলিস্তিনের ডক্টরাল প্রত্যাশী রাবেয়া এগবারিয়াহ। সম্পাদনা ও ফ্যাক্ট চেকের পর প্রকাশের জন্য প্রাথমিকভাবে অনুমোদিতও হয়েছিল লেখাটি। কিন্তু এরপর লেখাটি আর প্রকাশিত হয়নি। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের পর গাজায় ইসরায়েলের হামলার ঘটনা নিয়ে এই নিবন্ধই ছিল হার্ভার্ড ল রিভিউর জন্য ফিলিস্তিনি কোনো স্কলারের প্রথম লেখা।

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে এ পর্যন্ত ১৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিবন্ধটিতে যুক্তি দিয়ে দেখানো হয় যে, জাতিসংঘের কনভেনশন দ্বারা সংজ্ঞায়িত গণহত্যার সব শর্তই গাজায় ইসরায়েলি হামলায় পূরণ হয়েছে। ১৯৪৮ সালের মতো নাকবা সংগঠিত হচ্ছে বলেও দাবি জানানো হয় এই নিবন্ধে। উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার সময় ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমি থেকে জোরপূর্বক অপসারণকে বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয় আরবি শব্দ নাকবা।

শতাধিক সম্পাদকের এক সংকটকালীন বৈঠকে আটকে যায় ব্লগপোস্ট হিসেবে নিবন্ধটি প্রকাশের প্রক্রিয়া। নিবন্ধটির প্রকাশ অনুমোদন করলে সম্পাদকদের যে সমালোচনার সম্মুখীন হতে হবে, তাতে তাদের ক্যারিয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়। সম্পাদকদের প্রকাশ্যে সমালোচিত হওয়ার ভয়ও নিবন্ধটির প্রকাশ আটকে দেওয়ার পেছনে কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নিবন্ধটি প্রকাশ না করার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন ২৫ জন সম্পাদক। তাঁরা বলেছেন, ভয়ের কারণে কোনো নিবন্ধ প্রকাশ না করার ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। তাঁাঁ লিখেছেন, ‘প্রকাশ্য সমালোচনার ভয়ে ল রিভিউর সম্পাদকেরা নিবন্ধটি প্রকাশ করা বন্ধ রেখেছেন। সম্পাদকমণ্ডলীর কেউই ফিলিস্তিনি নন এবং তারা নিবন্ধটি অপ্রকাশিত রাখার সিদ্ধান্তের পক্ষেই ভোট দিয়েছেন। এভাবে কোনো নিবন্ধের প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ঘটনা আগে ঘটেছিল বলে আমরা অবগত নই।’

হার্ভার্ড ল রিভিউর সম্পাদক আপসারা আইয়ার নিবন্ধটির লেখক এগবারিয়াহকে একটি ই-মেইল দিয়ে বলেছেন, সিদ্ধান্তটি নেওয়ার পেছনে লেখকের পরিচয় বা দৃষ্টিভঙ্গি কোনো প্রভাব ফেলেনি।

রাবেয়া এগবারিয়াহকে আরেকটি ই-মেইল করেছেন হার্ভার্ড ল রিভিউর সম্পাদক তাসা শাহরিয়ারি-পারসা। সেখানে পারসা লেখেন, ‘সম্পাদকদের আলোচনায় নিবন্ধটির মৌলিক কিছু নিয়ে আলোচনা হয়নি। বরং আলোচনা হয়েছে সম্পাদকদের নিবন্ধটির বিরোধিতা করা, নিবন্ধটি প্রকাশিত হলে আমাদের সম্পাদকমণ্ডলী ও কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখানো হতে পারে কি না—সেসব নিয়ে।’

ই-মেইলটির জবাবে মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী ও নিবন্ধটির লেখক রাবেয়া এগবারিয়াহ বৈষম্যমূলক আচরণ ও সেন্সরশিপের অভিযোগ তোলেন। ‘গাজায় গণহত্যা সম্পর্কে নিবন্ধটি প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল দ্য হার্ভার্ড ল স্কুল’ শিরোনামে শুরুতে নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল দ্য নেশনে। এতে এগবারিয়াহ বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের উদ্ধৃতি দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা সেখানে যুক্তি দেন যে, গাজায় ইসরায়েলি কার্যকলাপ গণহত্যার আইনি মানদণ্ড পূরণ করেছে।

এসব উদ্ধৃতি দেওয়ার পর এগবারিয়াহ বলেন, এখনো যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় আইন স্কুল এবং আইনি বিশেষজ্ঞরা তাঁদের নীরবতাকে নিরপেক্ষতা এবং অস্বীকৃতিকে সূক্ষ্মতা বলে মনে করছেন। ফিলিস্তিন হলো সেই জায়গা, যেখানে ‘সভ্যতার শত্রুদের’ বিরুদ্ধে ‘সভ্য বিশ্বের’ লড়াই হিসেবে গণহত্যা চালানো যেতে পারে। গণহত্যার ব্যাপারে ইউরোপীয় মতাদর্শ যখন ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের জন্য সমানভাবে কাজ করে না, তখন ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিকীকরণের কোনো সুযোগই আর অবশিষ্ট থাকে না।

যুদ্ধবিরতির আগের রাতেও ব্যাপক বোমাবর্ষণ, গাজায় নিহত ছাড়াল ১৪৫০০যুদ্ধবিরতির আগের রাতেও ব্যাপক বোমাবর্ষণ, গাজায় নিহত ছাড়াল ১৪৫০০
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদিদের ওপর জার্মানির গণহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনে গণহত্যাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে নিবন্ধটিতে উল্লেখ করেছেন এগবারিয়াহ। সেই অনুসারে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের হামলাকে আইনগতভাবে সংজ্ঞায়িত করা হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি।

এগবারিয়াহ বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই কল্পনা করতে হবে যে, একদিন নাকবা একটি অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত হবে এবং জাতিগত নির্মূলের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়ানো একটি মতাদর্শ হিসেবে ইহুদিবাদ চিহ্নিত ও পরিত্যাক্ত হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *