গাজার ক্ষুধায় ভুগছে অর্ধেক মানুষ

গাজার ক্ষুধায় ভুগছে অর্ধেক মানুষ

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: নিরাপত্তা পরিষদে তোলা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোয় বানচাল হওয়ার পর গাজায় ইসরায়েলি হামলা আরো জোরেশোরে চলছে। অবরুদ্ধ উপত্যকাটির মানুষের দুর্ভোগ সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এদিকে জাতিসংঘ গতকাল শনিবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, গাজার জনগোষ্ঠীর অর্ধেক ক্ষুধায় ভুগছে। সেখানে ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই প্রতিদিন খেতে পাচ্ছে না।

হামলা থেকে বাঁচার জন্য ফিলিস্তিনিদের সরে যাওয়ার জায়গাও আর কার্যত নেই। উত্তর গাজা প্রায় জনহীন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ার পর দক্ষিণের প্রধান শহর খান ইউনিসে ঘরে ঘরে চলছে ইসরায়েলি সেনা ও হামাসের মুখোমুখি লড়াই।

লাগামহীন বেসামরিক প্রাণহানি নিয়ে বিশ্বব্যাপী তীব্র উদ্বেগের মধ্যেও ইসরায়েলি হামলার বিরাম নেই। বিমান থেকে ফেলা বোমায় ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠছে গাজার নানা প্রান্ত।

উত্তর গাজায়ও ইসরায়েলের ট্যাংক গোলাবর্ষণ করে চলেছে। তাদের মোকাবেলায় সাধ্যমতো লড়ছে হামাসও। ইসরায়েলে চালানো হচ্ছে বিক্ষিপ্ত রকেট হামলা।

যুদ্ধবিরতিতে আবার মার্কিন বাধা

শুক্রবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ওঠা মানবিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ভেটো দিয়ে নাকচ করে দেয়।

এর পরদিন গতকাল দিনভর এই ছিল গাজার পরিস্থিতি। নিন্দার মুখে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এখন যুদ্ধবিরতি হলে হামাস আবার হামলার সুযোগ পাবে। যুক্তরাষ্ট্র আরো বলেছে, প্রস্তাবে তাদের কোনো পরামর্শই গ্রহণ করা হয়নি। অন্যদিকে ভোটদানে বিরত থাকা যুক্তরাজ্যের ভাষ্য, হামাসের হামলার নিন্দা করা হয়নি বলে তারা ভোট দেয়নি। তবে এটিকেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কিছুটা হলেও মতান্তর হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রাশিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশ ও মানবাধিকার সংগঠন যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর নিন্দা করেছে। এ নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে কয়েক দফা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নাকচ হয়ে গেল। তবে কাতারের মধ্যস্থতায় মাঝে জিম্মিমুক্তির বিনিময়ে সাত দিন যুদ্ধ বন্ধ ছিল।

মানবিক দুর্ভোগ চরমে

রাফাহতে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনিবিষয়ক সাহায্য সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, সেখানে হাজার হাজার মানুষ খোলা আকাশের নিচে। শত শত মানুষের জন্য একটি করে টয়লেট। শিশুদের মুখে একটু খাবার তুলে দিতে ময়দার জন্য ছোটাছুটি করছেন অভিভাবকরা। তিনি বলেন, বোমায় না মরলেও এদের প্রাণ যাবে হয় অসুখবিসুখে, নয়তো শীত আর বৃষ্টিতে।

খান ইউনিসসহ গাজার বিভিন্ন স্থানে বোমারু বিমানের গর্জন আর বিস্ফোরণে কান পাতা দায়। খান ইউনিসের এক হাসপাতালের প্রধান বলেছেন, তাঁর কর্মীরা হাসপাতালটিতে আসা মৃত ও আহতদের সংখ্যার চাপে ‘নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন’।

উত্তরের জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরও ঘেরাও করেছে ইসরায়েলি সেনারা। এক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনির বক্তব্য অনুসারে, হাজার হাজার মানুষ খাবার ও পানি ছাড়াই সেখানে কয়েক দিন ধরে আটকা পড়েছে।

খান ইউনিসে তুমুল লড়াই

দক্ষিণ গাজার প্রধান শহর খান ইউনিসে তুমুল লড়াই চলছে। সেখানকার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নির্দেশমতো উপকূলের দিকে সরে গেছে। অনেকে গাজার একেবারে দক্ষিণে মিসর সীমান্তের দিকেও যাচ্ছে।

তবে গাজায় কথিত নিরাপদ এলাকায় ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি মানুষ থাকছে। ইসরায়েলি বাহিনী উপকূলের কাছে যে একটুকরা জায়গায় লোকজনকে আশ্রয় নিতে কিছুদিন ধরেই বলে আসছে, সে সম্পর্কে একজন ফিলিস্তিনি বলেছেন—ওই জায়গা মানুষের থাকার জন্য উপযোগী নয়।

ইসরায়েলি বাহিনী বলেছে, হামাস নেতারা খান ইউনিসেই লুকিয়ে আছেন বলে তাদের ধারণা। সংগঠনটির নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার খান ইউনিসেরই লোক। খান ইউনিসের সুড়ঙ্গে সুড়ঙ্গেও লড়াই চলছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। শহরটি দুই দিক থেকে ইসরায়েলি ট্যাংক ঘিরে ফেলেছে।

যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ বাড়বে

বিশ্লেষকরা বলছেন, শুক্রবার ভেটো দিলেও যুদ্ধবিরতির চাপ উপেক্ষা করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একসময় কঠিন হয়ে উঠতে পারে। নিরাপত্তা পরিষদের ১৩ সদস্য যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দেয়। এতে সমর্থন ছিল সাধারণ পরিষদের সদস্য প্রায় ১০০ দেশের। ওয়াশিংটনের মিত্র যুক্তরাজ্য ভোটদানে বিরত থাকায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে আন্তর্জাতিক মহলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান চাপের ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে।

উদ্ধার করতে গিয়ে জিম্মি নিহত

শুক্রবার ইসরায়েলি বাহিনী বলেছে, জিম্মি উদ্ধার করতে গিয়ে তাদের দুজন সেনা গুরুতর আহত হয়েছে। তবে এ সময় কাউকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে হামাস একজন কথিত জিম্মির রক্তাক্ত মৃতদেহের ভিডিও প্রকাশ করেছে, যার সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।

সূত্র : বিবিসি, এএফপি, আলজাজিরা 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *