গ্যাসের দামবৃদ্ধি নয় চুরি ও সিস্টেম লস কমান
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : কিছু হলেই দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কমানোর চিন্তা করতে থাকি। তা কতটুকু যুক্তিগ্রাহ্য বা যুক্তিসংগত তা ভাবা উচিত। সময়ের ব্যবধানে প্রতিটি ক্ষেত্রেই তদন্ত হলে বাস্তবতা বেরিয়ে আসবে। এখনো দুদক দাঁত বসাতে পারছে না সর্বত্র। সবখানে তাদের অভিযান পরিচালনাও সম্ভব হচ্ছে কতটুকু? বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ভর্তুকি কমানোর জন্য মূল্যবৃদ্ধির শর্টকাট রাস্তায় চলে।
অথচ দুর্নীতি, সিস্টেম লস বন্ধসহ নানা উপায়ে আয় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সেটি করা গেলে জনসাধারণকে আর বাড়তি পয়সা গুনতে হতো না। খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে দাম বাড়ালে শেষ পর্যন্ত এর সুফল পাওয়া যায় না। ভোক্তা অধিকারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলে মূল্যবৃদ্ধির এ অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের দিকে যেতে হয় না। আমরা আশা করব, জনসাধারণের সার্বিক দুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তারও আগে চলমান গ্যাস সংকট দূর করতে হবে।
দেশে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ গ্যাস চুরি হয় বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়। পুরনো সার কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পে কয়েক কোটি ঘনফুট গ্যাস অপচয় হয়। এ চুরি ও অপচয় বন্ধ করলে গ্যাস আমদানির প্রয়োজন পড়বে না। তাই চুরি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি অযৌক্তিক। ফলে এ কার্যক্রমই স্থগিত রাখা উচিত। তবে সরকারের ঝোঁক এলএনজি আমদানির দিকে। অথচ প্রিপেইড মিটার স্থাপন করলেই কলকারখানা ও গৃহস্থালিতে চুরি বন্ধ করা সম্ভব। এখনো জ্বালানি নীতিও ঠিক হয়নি অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার নিয়ে। মূল্যবান গ্যাস প্রাইভেট কারের জ্বালানি হবে, গণপরিবহনে ব্যবহার হবে, চুলায় জ্বলবে, নাকি শিল্প-কারখানায় ব্যবহার হবে? গ্যাস সরবরাহের পদ্ধতিই বা কী হবে? পাইপলাইনের মাধ্যমে, নাকি সিলিন্ডারে? ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ বিষয়গুলোর দিকেও নজর দেয়াটা জরুরি পড়েছে।
ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের ফলে বাংলাদেশ সমুদ্রে গ্যাস ও তেল অনুসন্ধানের মাধ্যমে গ্যাস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় পরিবর্তন আনা সম্ভব। গ্যাস যেহেতু ফুরিয়ে যাচ্ছে, সেজন্য বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ মূল জ্বালানি কী হবে, সেটি নির্ধারণপূর্বক অবকাঠামো নির্মাণ করা বাঞ্ছনীয়। উৎপাদন পর্যায়ে গ্যাসের দাম নিয়ন্ত্রণে বিইআরসির ভূমিকা নেই। এ বিষয়ে সংস্কার দরকার। উৎপাদন, সরবরাহ সব ক্ষেত্রেই কমিশনের নিয়ন্ত্রণ জরুরি।