গ্যাস কিনতে খরচ বাড়বে ২৭ হাজার কোটি টাকা

গ্যাস কিনতে খরচ বাড়বে ২৭ হাজার কোটি টাকা

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : দেশে বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতের গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে উৎপাদনে রেকর্ড ব্যয় বাড়বে। গ্যাসের দাম নতুন করে বৃদ্ধির কারণে জ্বালানি গ্যাসের খরচ বাবদ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো এবং শিল্প-কারখানাগুলোকে বাড়তি ২৭ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। জ্বালানি খরচ বাড়ায় ছোট, বড় এবং মাঝারি আকারের শিল্পে উৎপাদিত পণ্য ও সেবার সার্বিক দাম বাড়বে। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির হার ও পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে পণ্যের দাম নির্ধারণে হিসাব কষছেন শিল্পমালিকরা। পেট্রোবাংলা এবং কয়েক জন ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

দেশে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের জোগান বাড়ানো এবং এ খাতে ভর্তুকি কমানোর উদ্দেশ্যে গত বুধবার বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্য শ্রেণির গ্রাহকদের জন্য গ্যাসের দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। গত জুনে সিএনজি বাদে সব শ্রেণির গ্রাহকদের গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর এ দফায় বিদ্যুৎ, শিল্পের নিজস্ব বিদ্যুৎ (ক্যাপটিভ), শিল্প এবং বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য দাম বাড়ানো হয়। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন মূল্যহার কার্যকর হবে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৫ টাকা ২ পয়সা থেকে ৮ টাকা ৯৮ পয়সা বাড়িয়ে ১৪ টাকা এবং ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ (শিল্প কারখানার নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র) খাতে গ্যাস প্রতি ঘনমিটারে দাম ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও বৃহৎ শিল্পে ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা, মাঝারি শিল্পে ১১ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা এবং ক্ষুদ্র শিল্পে ১০ দশমিক ৭৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। আগে বড়, মাঝারি ও ছোট শিল্পের জন্য পৃথক মূল্যহার থাকলেও এবার তিন ধরনের শিল্পের জন্য গ্যাসের একই দর নির্ধারণ করা হয়। বাণিজ্যিক গ্যাস সংযোগে (হোটেল, রেস্টুরেন্ট, মার্কেট ও অন্যান্য) প্রতি ঘনমিটারের দাম ২৬ টাকা ৬৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কৃষি সেচ মৌসুম, আসন্ন রমজান ও গরমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের বর্ধিত চাহিদা মেটানো, শিল্প খাতে উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখা এবং রপ্তানিমুখী কল-কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে মূল্য বাড়ানো হয়েছে বলে জ্বালানি বিভাগের এক ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে। তবে জ্বালানি বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, দাম বাড়লেও বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পে চাহিদার পুরোটুকু গ্যাস সরবরাহ করা যাবে না। তবে পরিস্থিতি অন্তত: ২০২০-২১ সালের মতো রাখতে চায় সরকার। পেট্রোবাংলার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০-২১ সালে ২ হাজার ৮৮১ কোটি ঘনমিটার গ্যাস গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রি হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ২১০ কোটি ঘনমিটার গ্যাস বিদ্যুৎকেন্দ্রে, ক্যাপটিভ বিদ্যুতে ৪৯০ কোটি ঘনমিটার, ছোট-বড়-মাঝারি শিল্পে ৫১৯ কোটি ঘনফুট গ্যাস ব্যবহৃত হয়।

একাধিক ব্যবসায়ী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চূড়ান্ত বিচারে বাড়তি খরচের টাকা জনগণকে পরিশোধ করতে হবে। তাই দর কমানোর জন্য সরকারের শীর্ষ মহলে যোগাযোগ করছেন তারা। এদিকে গ্যাসের দাম বাড়ায় বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা দাম আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চেই বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এক শীর্ষ কর্মকর্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *