ঘরের আয়না কন্যাশিশু
পূর্ব প্রকাশিতের পর
নূরুল আবছার : বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কন্যাশিশুদের প্রতি বৈষম্য, নিরাপত্তাহীনতা যথা- শিক্ষা ও পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণে সমান সুযোগ না দেওয়া, ইভটিজিং, এসিড সন্ত্রাস এবং যৌন নির্যাতনসহ কন্যাশিশুর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা বন্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং সচেতনতা সৃষ্টি করাই বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া কন্যাশিশুদের মনে সাহস সঞ্চার করা, অধিকারবোধ, চেতনাবোধ জাগিয়ে তোলা, নিজেদের অধিকার আদায়ে লড়াই করার প্রেরণা দেওয়া প্রতিটি পরিবারের দায়িত্ব।
পৃথিবীর দেশে দেশে সমাজে কন্যাশিশুরা বিভিন্ন দিক দিয়ে বৈষম্যের শিকার। এ অবস্থায় শিশু অধিকার রক্ষাকল্পে জাতিসংঘ কর্তৃক এক প্রস্তাবে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর একদিন ‘কন্যাশিশু দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দিনটিকে স্মরণীয় করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানামুখী বর্ণিল কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো নিজ উদ্যোগে বর্ণিল কার্যক্রম পরিচালনা করে। ফলে সহজেই কর্মসূচি সাধারণ মানুষের নজরে আসে। প্রতিটি রাষ্ট্র নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরে বিভিন্ন মনোজ্ঞ আয়োজনের মাধ্যমে দিনটি পালন করে।
কন্যাশিশু দিবসের সারকথা হলো সারা বিশ্বের কন্যাশিশুর স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা বাড়ানো। তাদের সার্বিক কল্যাণে সামাজিক বিভিন্ন কর্মসূচি সম্প্রসারিত করা, বিশ্বের নানামুখী সমাজব্যবস্থায় লিঙ্গবৈষম্য দূর করাও এ দিবসের অন্যতম উদ্দেশ্য। এছাড়া কন্যাশিশুর স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, পুষ্টিমান সম্পন্ন খাবার প্রাপ্তির অধিকার, আইনি সহায়তা ও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার, চিকিৎসা সুবিধা ও বৈষম্য থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার অর্জন, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বলপূর্বক তথা বাল্যবিয়ে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ৪৪ শতাংশ শিশু, যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ ১৯৮৯, জাতীয় শিশু নীতি-২০১১ এবং শিশু আইন-২০১৩ অনুযায়ী অনূর্ধ্ব ১৮ বছরের জনগোষ্ঠীকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়। এ শিশুদের অর্ধেক কন্যা শিশু।
শিশু নির্যাতন একটি বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায়ই সংবাদ মাধ্যমে শিশু নির্যাতন, শিশু ধর্ষণের খবর পাওয়া যায়। শিশুদের বিষয়ে অগ্রগতি হলেও সব শিশুর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতের বিষয়টি স্লােগানেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হলে দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত শিশু, বিশেষ করে মেয়েশিশুদের অগ্রাধিকার দিয়ে বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। সংবিধানেও এ বিষয়টা উল্লেখ রয়েছে। এখন প্রয়োজন সমান সুযোগ, সমান অধিকার ও নিরাপত্তার প্রশ্নে কন্যাশিশু ও নারীর জন্য অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা। কন্যাশিশুর সুরক্ষায় প্রয়োজন ব্যক্তি পর্যায়ে, পারিবারিক পর্যায়ে এবং সামাজিক পর্যায়ে সচেতনতা। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে কন্যাশিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই হবে।