ঘরের আয়না কন্যাশিশু
পূর্ব প্রকাশিতের পর
নূরুল আবছার : সংবিধানেও এ বিষয়টা উল্লেখ রয়েছে। এখন প্রয়োজন সমান সুযোগ, সমান অধিকার ও নিরাপত্তার প্রশ্নে কন্যাশিশু ও নারীর জন্য অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা। কন্যাশিশুর সুরক্ষায় প্রয়োজন ব্যক্তি পর্যায়ে, পারিবারিক পর্যায়ে এবং সামাজিক পর্যায়ে সচেতনতা। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে কন্যাশিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই হবে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাদ সুস্থ-সবল, শিক্ষিত, দক্ষ ও কর্মোদ্যমী প্রাপ্তবয়স্ক নারী কর্মী, নারী উদ্যোক্তা-সমাজকর্মী, পরিকল্পনাবিদ তৈরির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস-২০১৫ এর প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছিল- ‘কিশোরীর সক্ষমতা ও শক্তি : দৃশ্যকল্প ২০৩০’। এ প্রতিপাদ্যটি কন্যাশিশুদের পেছনে, বিশেষ করে তার শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক দক্ষতার বিষয়ে বিনিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে, যাতে ২০১৫ সালের কিশোরীরা ১৫ বছর পর ২০৩০ সালে এসে সুস্থ-সবল, শিক্ষিত, দক্ষ ও কর্মক্ষম প্রাপ্তবয়স্ক নারী হিসেবে নিজেদের কাজের উপযোগী করে তৈরি করতে পারে।
যেন কিশোরীদের জন্য বিনিয়োগে সমতাপূর্ণ ও টেকসই উন্নয়নের সুফলগুলো আরও নিশ্চিত হয়। তাছাড়া কিশোরীদের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং পরিবেশগত উন্নয়নও নিশ্চিত হয়।
কন্যাশিশুকে পরিবার থেকেই শিক্ষা দিতে হবে, যাতে তারা প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারে, শরীর-মনের যত্ন নিতে শেখে এবং অধিকার সচেতন হয়ে ওঠে। এ অর্জনই তাদের আগামী দিনে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কিশোরীদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ বৃদ্ধির জন্য আরও বিনিয়োগ করতে হবে, যাতে তারা জীবন, কর্ম ও নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত হতে পারে।
কৈশোরে স্বাস্থ্য ও পুষ্টির জন্য বিনিয়োগ, বয়ঃসন্ধিকালীন শিক্ষা, ঋতুকালীন সুস্থ থাকার উপায় এবং যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক শিক্ষা ও সেবা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। কিশোরীদের শারীরিক, মানসিক ও যৌন নিপীড়ন বা সহিংসতার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করতে হবে। বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে ও নারীর যৌন স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় উদ্যোগ নিতে হবে। কিশোরীর সৃজনশীলতা ও মেধাবিকাশের সুযোগ তৈরি করতে হবে।
কিশোরীদের জন্য প্রযোজ্য জেন্ডারবিষয়ক আইন এবং নীতিমালা সম্পর্কে সবাইকে বিশেষ করে প্রতিবন্ধী, অরক্ষিত ও প্রান্তিক এবং মানব পাচার ও যৌন নিপীড়নের ঝুঁকিতে থাকা কিশোরীদের জানাতে হবে।
লেখক : কলামিস্ট ও শিশু গবেষক
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়