ঘরের আয়না কন্যাশিশু
পূর্ব প্রকাশিতের পর
নূরুল আবছার : কিশোরীদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর অঙ্গীকার থাকলে এবং সে অঙ্গীকার বাস্তবে রূপ নিলে তারা শক্তিশালী ও ইতিবাচক পরিবর্তনের দিশারিতে পরিণত হবে। এতে তারা নিজেদের ক্ষমতায়নের জন্য জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠা ও বাংলাদেশের টেকসই অগ্রগতির জন্য কাজ করতে পারবে।
আজকে যারা কিশোরী আগামীতে তারা প্রাপ্তবয়স্ক হবে, নিজেদের সক্ষমতা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে পরিবার, সমাজ, দেশ এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে অবদান রাখবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এর জন্য দরকার কন্যাশিশুর শিক্ষার প্রত্যাশিত অগ্রগতি যা আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার প্রাথমিক পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে। ঝরে পড়ার হার কমেছে। ফলে কন্যাশিশুরা মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহী হচ্ছে। মানসম্পন্ন শিক্ষা অর্জনের ব্যাপারে আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে, যত্নশীল হতে হবে। সে সঙ্গে স্বাবলম্বী না হয়ে কিশোরীদের বিয়ে না করার বিষয়ে উৎসাহিত করতে হবে।
বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন সুদূরপ্রসারী ও টেকসই করতে হলে উন্নয়নের সামগ্রিক কর্মকা-ে কন্যাশিশু ও নারীদের সমান অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন নারীরা তাদের কাজের ন্যায্য মজুরি পান, তখন তাদের পরিবারের উন্নতি হয়। গবেষণায় দেখা যায়, নারীরা তাদের উপার্জনের একটি বড় অংশ সন্তানের স্বাস্থ্য, লেখাপড়া ও পরিবারের উন্নতির কাজে ব্যয় করেন। অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণকে সমর্থন জোগানো এবং সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা শুধু নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের পথ নয়, এর মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন ও ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি লাভ করা সম্ভব। কন্যাশিশু ও নারীরা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। তারা ভোক্তা, চাকরিজীবী ও উদ্যোক্তা হিসেবে বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। কিন্তু খাদ্য উৎপাদন ও অন্যদের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে নারীর যে অবদান, তা অবৈতনিক এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এর কোনো স্বীকৃতি নেই।
টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে অবদান রাখা সত্ত্বেও কন্যাশিশু ও নারীরা বিশ্বের দরিদ্রতম গোষ্ঠী। পুরুষের তুলনায় তাদের আয় অনেকাংশে কম। তারা বেশি সময় কাজ করেন কিন্তু জমি, প্রাকৃতিক সম্পদ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অধিকার থেকে প্রায়ই বঞ্চিত হন। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুশিক্ষিত নারী শ্রম বাজারের বড় সম্পদ। কন্যাশিশুরা কৈশোরে, প্রাপ্ত বয়সে বা পরিণত বয়সে যেন বঞ্চনার শিকার না হন সে দিকে সবার সচেতন হতে হবে।
লেখক : কলামিস্ট ও শিশু গবেষক
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়