৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ২৫শে মাঘ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ , ১৬ই রজব, ১৪৪৪ হিজরি
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : পাঁচ বছর আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানের সময় ঘরবাড়ি হারিয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় আশ্রয় নিয়েছিল চার হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা। এত দিন তারা এখানেই বসবাস করে আসছিল। কিন্তু গত বুধবার দুই সশস্ত্র রোহিঙ্গা বাহিনীর গোলাগুলি ও আগুনের ঘটনায় শেষ আশ্রয় হারিয়ে এখন তারা নিঃস্ব।
সংঘর্ষের পর আশ্রয়হারা এসব রোহিঙ্গা তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ এর আশপাশে ঠাঁই নিয়েছে। ৫০০-র মতো রোহিঙ্গা গাদাগাদি করে আশ্রয় নিয়েছে বিদ্যালয়ে। অনেকে স্থানীয়দের ঘরের বারান্দায় থাকছে। কেউ কেউ বিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় ত্রিপল টানিয়ে নতুন করে বানিয়েছে ‘আশ্রয়শিবির’।
ঘুমধুম ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ আবদুল জব্বার জানান, ‘আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে যত দূর সম্ভব রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। বিজিবিও আশ্রয়হীনদের সহযোগিতা দিচ্ছে।’
তবে বিজিবি এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দিচ্ছে না। এ কারণে আশ্রয়হীন রোহিঙ্গার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের উখিয়া-টেকনাফের শিবিরগুলোতে নিয়ে আসা হবে। এ বিষয়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ে অতিরিক্ত কমিশনার মো. শামছুদ্দৌজা নয়ন বলেন, ‘শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের দেখভাল করার দায়িত্ব আমাদের ছিল না। তবে কর্তৃপক্ষ আমাদের ওপর তাদের দায়িত্ব দিলে বিস্তারিত বলা যাবে।’
আশ্রয়হারা রোহিঙ্গা আবদুল মালেক (৬০) জানান, আগুনে তাঁদের ঘরের শীতের কাপড়সহ সব পুড়ে গেছে। খাবার জোগাড় করতে পারছেন না। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ছোট্ট একটি ভাঙা ত্রিপলের নিচে বাচ্চাদের নিয়ে তিন পরিবারের ১৯ জন সদস্য গাদাগাদি করে থাকছে।
আগুনে ঘর হারিয়ে আবু নাসের সংবাদকর্মীদের বলেন, ‘আমরা নিরীহ মানুষ, কোনো পক্ষের না। সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, গায়ের ও পরনের জামা ছাড়া কিছু বের করতে পারিনি।’
তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন আব্দুল করিম (৯০) ও আমেনা খাতুন (৭০) দম্পতি। তাঁরা জানান, স্কুলের বারান্দার কোনায় জায়গা পেয়েছেন তাঁরা। শীতের মধ্যে খুব কষ্ট হয়। ঠাণ্ডায় ঘুমাতে না পেরে রাতে বসে থাকতে হয় তাঁদের। তার ওপর খাবারেরও সংকট।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার দিনব্যাপী শূন্যরেখার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরটিতে আরসা ও আরএসও নামের দুই সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর গোলাগুলি চলে। এ ঘটনায় দুজন নিহত ও অনেকেই আহত হয়। একই দিন বিকেলে এক পক্ষ শূন্যরেখার শিবিরটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।