ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পাট
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ঘুরে দাঁড়িয়েছে পাটের ব্যবসায়ীরা। বলা যায় সুদিন এসেছে আবার সোনালী পাটের। একসময় এ সোনালী আঁশ কৃষকের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তখন অনেক কৃষকই পাট চাষ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। গত কয়েক বছর ধরে পাটের দাম ভালো পাওয়ায় আবার চাষ শুরু করেছেন কৃষক। বিশেষ করে গত দুই বছরে পাটের দাম অন্য ফসলের তুলনায় খুব ভালো। তাছাড়া রফতানি আয়ে দেশে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে এই পাট খাত। এ খবরটি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে দেশের পাট চাষিদের মাঝে। ফলে এবার পাট চাষের দিকে আরও ঝোঁক বাড়ছে কৃষকের।
বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক, চামড়াসহ অন্যান্য খাত নিয়ে যখন দুশ্চিন্তা বাড়ছে, তখন আশার আলো দেখাচ্ছে পাট ও পাটজাত পণ্য।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ হালনাগাদ করা তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছে ৬৯ কোটি ৭৬ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৮ দশমিক ১২ শতাংশ বেশি। এছাড়া এই অর্থবছরে পাট খাত থেকে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির যে ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তা বাকি চার মাস (মার্চ-জুন) অব্যাহত থাকলে এবার পাট খাতের রফতানি আয় এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর কারণে পাট নিয়ে আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার চরপাড়া গ্রামের আদর্শ কৃষক রহিমুদ্দিন বাঘা, এবার ১০ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। গত বছরও তিনি ১০ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। বিগত সময়ে এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার ২০০ টাকা মণ পর্যন্ত পাট বিক্রি করেছেন তিনি। সেই আগ্রহ থেকে এবারও তিনি পাট আবাদ করেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গত তিন বছর ধরে পাটের ভালো দাম পাচ্ছি। ধানের তুলনায় পাট ও ভুট্টা আবাদে বর্তমানে লাভ বেশি হচ্ছে। এ কারণে পাট আবাদ করছি। পাটের চাষের ট্রেনিংয়ে স্যারেরা আমাদের বলেছেন, এই পাট দিয়ে ২০০-এর অধিক পণ্য তৈরি হয়। যে পণ্যগুলো বিদেশে যায়। তাছাড়া সরকার পাটের তৈরি বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করায় পাটের চাহিদা বেড়েছে। এ কারণেও আমরা চাষিরা পাটের ভালো দাম পাচ্ছি।’
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের চৌদুয়ার এলাকার চাষি মামুন বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও পাটের দাম ভালো না পাওয়ায় অনেক চাষি পাট চাষ ছেড়েই দিয়েছিল। গত দুই/তিন বছর ধরে পাটের দাম ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। ১৭০০ থেকে দুই হাজার টাকা মণ পর্যন্ত বিক্রি করেছিলাম। দাম ভালো পাওয়ার কারণে এবং লাভবান হওয়ায় এ বছর আমি চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। পাটের রোগবালাই তেমন একটা নেই। পাটও বেশ ভালো হয়েছে। দাম ভালো পেলে লাভ হবে ভালোই।’