চরের দখল নিয়ে গ্রামবাসীদের সংঘর্ষ, আহত ২০

চরের দখল নিয়ে গ্রামবাসীদের সংঘর্ষ, আহত ২০

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বরিশাল-ভোলার সীমান্তবর্তী এলাকার মহিষমারী চর দখলকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময়ে পুলিশের ছোড়া শর্টগানের গুলিতে নারী-পুরুষসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ১২ জনকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে, গ্রামবাসীর ছোড়া ইটের আঘাতে দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভোলা বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থানার ওসি সফিকুল ইসলাম ও ভোলা সদর থানার ওসি এনায়েত হোসেন।

পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে আহতদের মধ্যে সাথী বেগম (৩০), আমেনা বেগম (৩০), নান্নু হাওলাদার (৪০), রিপন হাওলাদার (২৫), আসমা বেগম (৩০), রিয়াজ (৩৫), হানিফ হাওলাদার (৩৪), আলী হোসেন মোল্লা (১৮), সাইফুল গাইন (১৮), জামাল রাঢ়ি (৪০), শাহজাহান হাওলাদার (৭০) ও ফিরোজা বেগম (৫০) শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা সকলেই মেহেন্দিগঞ্জের মহিষমারি গ্রামের বাসিন্দা। আহত দুই পুলিশ সদস্যকে ভোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়ন এবং ভোলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মহিষমারী চর এলাকার সীমানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। বিরোধপূর্ণ ওই চরের জমি শ্রীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও উপজেলা কৃষকলীগের সহ-সভাপতি রুবেল কাজী তার দলবল নিয়ে দখলের চেষ্টা করে আসছেন।

এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দুই জেলার বাসিন্দাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার দুপুরে রুবেল কাজীর নেতৃত্বে গ্রামবাসী পুনরায় ভোলার ভেদুরিয়ায় জমি দখল করতে গেলে সেখানকার লোকজন প্রতিরোধে একজোট হন। এতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। খবর পেয়ে মেহেন্দিগঞ্জ ও ভোলা সদর উপজেলার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।

এসময় বিবাদমান দুই পক্ষই পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। সংঘর্ষে স্থানীয় নারী পুরুষ ও পুলিশ সদস্য মিলে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে পুলিশের ছোড়া বুলেটে আহত ৪ জন নারীসহ ১২ জনকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মেহেন্দিগঞ্জ থানার ওসি মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, মেহেন্দিগঞ্জ ও ভোলার সীমানা বিরোধ নিয়ে দুই এলাকার সীমান্তবর্তী খালের দুই পাশে লোকজন জড়ো হওয়ার খবর পেয়ে ভোলা সদর থানার এসআই ইনজামুনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এসময় দুই পাড়ের জড়ো হওয়া লোকজন পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর নিক্ষেপ শুরু করেন। উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২৮ রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছোড়ে। দখলকারীদের পাল্টা ছোড়া ইটের আঘাতে ভোলা সদর থানা পুলিশের দুই সদস্য আহত হয়েছেন।

শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, মেহেন্দীগঞ্জ এবং ভেদুরিয়া এলাকার সীমানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলছে। স্থানীয় রুবেল কাজী দীর্ঘদিন ধরে বরিশাল এবং ভোলার অংশের জমি দখলের চেষ্টা করে আসছেন। এ নিয়ে প্রায়ই দুই জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে হামলা এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তারই ধারাবাহিকতায় পুনরায় হামলা এবং গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটল।

মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা কৃষকলীগের সহ-সভাপতি এবং জমি দখলের নেতৃত্বদানকারী রুবেল কাজী বলেন, জেনেছি ভোলার পুলিশ বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে মহিষমারী গ্রামের মধ্যে ঢুকে নারী-পুরুষের ওপর অতর্কিত হামলা ও গুলিবর্ষণ করেছে। এতে মোট ১২ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদেরকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার সময় আমি বরিশালে ছিলাম।

শ্রীপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম বলেন, তাদের মধ্যে নদীভাঙনের শিকার ৩শ পরিবার মহিষমারী চরে বসতি স্থাপন করে থাকছে দশকের পর দশক। সেখানে সীমান্তবর্তী ভোলার চটকীমারী চরের লোকজন এই এলাকা তাদের দাবি করে প্রায়ই হামলা করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল দুপুরে ভোলার লোকজন আমারদের বসত বাড়িতে হামলা করে। এ সময় তারা বাধা দিতে গেলে পুলিশ শর্টগানের গুলি ছোড়ে। এতে ২০ জনের মতো আহত হন।

ভোলা সদর থানার ওসি এনায়েত হোসেন বলেন, শ্রীপুর এবং ভেদুরিয়ার মধ্যবর্তী একটি ব্রিজ রয়েছে। ব্রিজের দুই প্রান্তের জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দুই জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে বিরোধ চলছে। এ নিয়ে আদালতে মামলাও চলছে। কিন্তু বিরোধপূর্ণ জমিতে বালু ভরাট করে ঘর নির্মাণ করছিলেন শ্রীপুরের রুবেল কাজী। এতে বাধা দেয় ভেদুরিয়ার বাসিন্দারা।

রুবেল কাজী স্থানীয় অসংখ্য নারী-পুরুষ নিয়ে বিরোধপূর্ণ জমি দখল করতে যাচ্ছিলেন। এসময় সীমান্তে দায়িত্বে থাকা বরিশাল এবং ভোলা জেলা পুলিশের সদস্যরা তাদের বাধা দিলে তারা পুলিশের ওপর হামলা করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শর্টগান থেকে ২৮ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। দু’পক্ষের ছোড়া ইটের আঘাতে পুলিশের দুই সদস্য আহত হয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *