চলন্ত বাসে ধর্ষণচেষ্টা : অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে

চলন্ত বাসে ধর্ষণচেষ্টা : অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে

চলন্ত বাসে ধর্ষণচেষ্টা

অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বিস্ময়কর হলেও সত্য, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে যে অনৈতিক কাজ যায় না তা-ই এখন প্রকাশ হতে চলেছে। ধর্ষণ ও ধর্ষণজনিত অপরাধের বীভৎসতা নজিরবিহীনভাবেই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বিবেকবান প্রত্যেক মানুষ এ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সুনামগঞ্জে এবার চলন্ত বাসে এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। নিজেকে রক্ষায় ওই ছাত্রী বাস থেকে নিচে লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় স্থানীয় লোকজন। পরে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পুলিশ বাসটি আটক করলেও চালক ও তার সহকারীদের আটক করতে পারেনি। ওদিকে রংপুরের মিঠাপুকুরে গত ২২ ও ২৭ নভেম্বর এবং পরে একাধিকবার এক গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হলেও আসামিদের এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

কয়েক মাস আগেই নতুন অধ্যাদেশের মাধ্যমে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশোধনীতে ধর্ষণের বিচারে মৃত্যুদ- ছাড়াও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু তার পরও ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টা বন্ধ হয়নি। পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা আমাদের সহনশীল সমাজের পরিচয় যেন পাল্টে দিচ্ছে একের পর এক ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা। প্রতিদিনই গণমাধ্যমে এ রকম অনেক খবর আসছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছু ব্যবস্থা নিলেও তাতে অপরাধ থামছে না; বরং বেড়েই চলেছে। এ ধরনের অপরাধ বেড়ে যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে, সেই কারণগুলো দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। আছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা। অভিযোগ আছে, অনেক ক্ষেত্রেই এসব দুর্বৃত্ত পুলিশের সহযোগিতা পেয়ে থাকে। তদন্তের দুর্বলতায় অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়ার ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। ২০১৫ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আগের এক দশকে ধর্ষণজনিত অপরাধে পাঁচ হাজার ১১৭টি মামলা হলেও বিচার হয়েছে মাত্র ৮৮১টির এবং শাস্তি হয়েছে মাত্র ১০১ জনের। প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ, তথ্য-প্রমাণের অভাব, সাক্ষ্য প্রদানে অনীহাসহ আরো অনেক কারণেই অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। ফলে বিদ্যমান বিচারপ্রক্রিয়া অপরাধীদের মনে ভয় ধরানোর মতো দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারছে না।

প্রকাশিত খবরগুলো প্রমাণ করে আমরা এক চরম অবক্ষয়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। শহর থেকে গ্রাম—সর্বত্রই অবক্ষয় যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা হতাশাজনক। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, সংশোধন হওয়া আইনের সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণ ও ধর্ষণজনিত বীভৎসতার বিচার দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করা প্রয়োজন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে দায়িত্ব পালনে আরো বেশি সততা ও নিষ্ঠার পরিচয় দিতে হবে। পাশাপাশি অপরাধীরা যেন কোনোভাবেই প্রশ্রয় না পায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। সেই সঙ্গে শক্ত সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *