চিংড়িশিল্পের বেহাল
চাষি ও খামারিদের বাঁচিয়ে রাখুন
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : সম্ভাবনা যেখানে সেখানেই সরকারের এগিয়ে আসা উচিত। এবার বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাষি, ঘের মালিক ও খামারিরা। এদের পাশে দাঁড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদেরকে বাঁচানোর মতো উদ্যোগ জরুরি বলেই মনে করেন দেশের কৃষি বিজ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবিগণ। দারুণ সম্ভাবনার খাত হয়ে উঠেছিল চিংড়ি। বাংলাদেশের জন্য চিংড়ি হয়ে উঠেছিল সাদা সোনা। নানা ব্যত্যয়ী আচরণে সে সম্ভাবনার খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখনো চিংড়ি রপ্তানির বড় খাত।
করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাবও পড়েছে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি শিল্পে। বাংলাদেশ থেকে হিমায়িত চিংড়ির ২৯০টি ক্রয় আদেশ বাতিল করেছে বিদেশি ক্রেতারা। এতে রপ্তানিকারকদের ৪৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি পোষাতে সরকার প্রণোদনার ঘোষণা দিলেও এখনো বেশির ভাগ রপ্তানিকারক এ সুবিধা পায়নি। এ খাতের সম্ভাবনার বিষয়টি এখনো নষ্ট হয়ে যায়নি। এ জন্য দরকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও কর্মসূচি।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, গত মার্চ থেকে বিদেশি ক্রেতাদের চিংড়ি আমদানিতে অনীহার কারণে বাংলাদেশে রপ্তানিকারকদের হিমাগারে চিংড়ির মজুদ বেড়েছে। প্রক্রিয়াজাত চিংড়ি বিক্রি করতে না পারায় তারল্য সংকটে পড়েছেন তাঁরা। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) সভাপতি বলেন, করোনাকালে আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ির দাম এক থেকে দেড় ডলার কমেছে। তবু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে তাঁরা চিংড়ি রপ্তানি কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। জানা যায়, করোনার কারণে চলতি বছরের এপ্রিল, মে ও জুন মাসে দেশের চিংড়িশিল্পে বিপর্যয় চললেও তা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠেন রপ্তানিকারকরা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৩৩২.৬৫ মিলিয়ন ডলারের চিংড়ি রপ্তানি হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪১৫ মিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর তিন মাসে ৯৬.৭০ মিলিয়ন ডলারের চিংড়ি রপ্তানি হয়, যা এ সময়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১.১০ শতাংশ কম এবং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩.৩৫ শতাংশ কম।
রপ্তানিকারকদের অভিযোগ, অর্থনীতি সচল রাখতে তাঁরা করোনাকালেও কারখানা চালু রাখেন। প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানিয়েছিলেন তা-ই। কিন্তু ব্যাংকের বিভিন্ন জটিলতার কারণে তাঁরা এখনো সরকারঘোষিত প্রণোদনা পাননি। ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের ওপর ৩০ শতাংশ ঋণ বা বিনিয়োগ সুবিধা পাওয়ার জন্য আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের আওতায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে আবেদন করার পরও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঘুরতে হচ্ছে। ব্যাংকগুলো ঋণ বা বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ করছে। এখন বাগদা ও গলদা চিংড়ি আহরণের পূর্ণ মৌসুম। কিন্তু তারল্য সংকটের কারণে রপ্তানিকারকরা কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারছেন না। এ কারণে প্রান্তিক চাষিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
চিংড়ি রপ্তানি একটি সম্ভাবনাময় খাত। এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সরকারকে নিতে হবে। আপৎকালে বিভিন্ন খাত সরকারের সহযোগিতা আশা করে। সেটা করাও উচিত। ক্ষতিগ্রস্ত চাষি, ঘের মালিক ও খামারিদের সহযোগিতা করা দরকার। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা প্রস্তুত করছে মৎস্য বিভাগ। এ কাজ যত দ্রুত সম্পন্ন করা হবে তত ভালো।