নড়াইল প্রতিনিধি : নড়াইল শহরের কোলঘেঁষা চিত্রা নদী দখল করে শিশু পার্কের নামে ঘাট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। নদীর প্রায় অর্ধেক জায়গায় আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে ঘাটের সিঁড়ি নির্মাণের কাজ চলছে। ফলে নদীর পানিপ্রবাহে বিঘœ ঘটছে। তা ছাড়া এ কাজ করতে গিয়ে পাশের শেখ রাসেল সেতুর মূল পিলারের গাইড ওয়ালে ফাটল ধরে তা ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসীর ধারণা, সেতুর গাইড ওয়াল ভেঙে গেলে শেখ রাসেল সেতু হুমকির মুখে পড়বে। তা ছাড়া নদীর অর্ধেক জায়গাজুড়ে ঘাটের সিঁড়ি নির্মাণের জন্য পাইলিং ঢালাই দেওয়ায় ওই স্থানে পলি পড়ে তা ভরাট হয়ে যাবে।
চিত্রা নদীর পাড়ের ফেরিঘাট এলাকার শেখ রাসেল সেতুর নিচে গিয়ে দেখা গেছে, নদীর প্রায় অর্ধেক জায়গা দখল করে বাঁধ দিয়ে সেখান থেকে পাইলিং করে সিঁড়ি নির্মাণের জন্য পিলার তৈরি করা হচ্ছে। এদিকে সেতুর মূল পিলারের গাইড ওয়ালের নিচ থেকে মাটি কেটে নেওয়ায় সেখানে প্রায় ১২ ফুট গভীর খাদ তৈরি হয়েছে। কোথাও মাটি কেটে গাইড ওয়ালের তলে শূন্য করে রাখা হয়েছে। সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় আছে গাইড ওয়ালের প্রায় ৩০ ফুট জায়গা। ইতিমধ্যে গাইড ওয়ালের গায়ে ফাটল দেখা গেছে। তাই যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে গাইড ওয়াল। এমন হলে নবনির্মিত শেখ রাসেল সেতু মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিত্রা নদীর পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় শেখ রাসেল সেতুর নিচে শিশু পার্ক নির্মাণের কাজ হাতে নেয় জেলা পরিষদ। ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এর কাজ শুরু হয়। আগামী ৩০ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কাজের দায়িত্ব পায় ঝিনাইদহের মেসার্স লিটন ট্রেডার্স।
এদিকে শুরু থেকেই চিত্রা নদীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এ ধরনের একটি কাজের বিরোধিতা করে আসছে নড়াইলের সচেতন মানুষ। সেতুটিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে ঘাট নির্মাণের বিষয়টিকে মোটেও ভালো চোখে দেখছে না স্থানীয় লোকজন। এপ্রিলের প্রথম দিকে নড়াইল জেলা প্রশাসনের সঙ্গে নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের এক উন্নয়ন সমন্বয় সভায় এ কাজের তীব্র সমালোচনা করেন স্থপতিরা। জেলার স্থানীয় স্থপতিদের নকশা অনুযায়ী কাজ করার জন্য অনুরোধ করেন তাঁরা। এ সময় জেলা পরিষদের কাজের নকশা পরিবর্তন করে নদীকে রক্ষা করে দীর্ঘমেয়াদি ও দর্শনীয় একটি নকশা প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তী সময়ে সেই নকশা অনুযায়ী কাজের জন্য অনুরোধ করা হয়। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তা মেনে নিলেও কাজটি করা হয়নি। তাই আগের নকশাতেই কাজ চলছে।
গত ২৬ মে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পুনরায় নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে বৈঠকে জেলা পরিষদের কাজের খোঁজ নেয় নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারাসহ স্থানীয় লোকজন। সেখানে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কাজের প্রায় ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। পরে সরেজমিনে চিত্রাপাড়ে কাজটি দেখতে গিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন অতিথিরা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নড়াইল এক্সপ্রেসের কর্তারা এ নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ জেলা পরিষদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানান।
নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম অনিক বলেন, আমরা বারবার বলা সত্ত্বেও এই নকশা পরিবর্তন করেনি জেলা পরিষদ। এ জাতীয় কাজ একদিকে যেমন চিত্রা নদী ধ্বংস করবে, অন্যদিকে সেতুটি হুমকির মুখে পড়বে।
নড়াইলের প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার মো. রেজাউল আলম বলেন, প্রকৌশলীরা কী করে নদী বন্ধ করে কাজ করেন তা আমার মাথায় আসে না। এতে নদী দ্রুত মরে যাবে।
স্থপতি সেলিম আলতাফ বিপ্লব বলেন, নদীকে বাঁচিয়ে রেখে নকশা করা উচিত। নদী মেরে ফেলে কোনো কাজ করা ঠিক হবে না।
নড়াইল পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী জহিরুল হক বলেন, এ ধরনের খামখেয়ালি নকশায় কাজ করলে অচিরেই চিত্রা নদী মরে যাবে। আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে জবাবদিহি করতে পারব না। নদী মেরে ফেলার এ কাজ কোনো অবস্থাতেই সমর্থনযোগ্য নয়।
জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী বিষ্ণুপদ বিশ্বাস বলেন, আমাদের ডিজাইন অনেক আগে করা হয়েছে। তবে আমি ঠিকাদারকে বলেছি, গাইড ওয়ালের নিরাপত্তা কলাম তৈরি করতে। তবে এ কাজ করার ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমতি প্রসঙ্গে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।
নড়াইলের জেলা প্রশাসক এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, আমি এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছি। দ্রুত গাইড ওয়াল ভাঙন ঠেকাতে হবে। সরকার যেখানে নদী খনন করতে চাচ্ছে, সেখানে নদীর ভেতরে এ ধরনের কাজ করা মোটেও ঠিক হচ্ছে না।
______________
patheo24,/105