পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : চীনের জিংজিয়াং প্রদেশে চীনা সরকার কতৃক উইঘুর মুসলমানদের উপর চালানো নির্যাতনকে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন দাবী করে করে জাতিসংঘকে ও মুসলিম বিশ্বকে জোরালো ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়েছে আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম সংসদ। পাশাপাশি চীনের পণ্য বয়কটের জন্য দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) কক্সবাজার আলীর জাহাল সাইমা ওসান সিটি হল মিলনায়তনে মাদক, সন্ত্রাস, মানব পাচার, আরাকানসহ বিশ্বব্যাপী মুসলিম নিপীড়ন, ‘ওইঘুরের কান্না’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও উইঘুরের মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদে এক প্রতিবাদ ও আলোচনা সভায় এ আহ্বান জানানো হয়।
আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম সংসদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট লেখক, গবেষক, বরেণ্য শিক্ষাবিদ, বিভিন্ন ইসলামী দলের শীর্ষনেতারা বক্তব্য রাখেন।
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, চীনের ২২ লাখ তুর্কি ও উইঘুর মুসলিমদের দীর্ঘদিন যাবৎ গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, যৌন নীপিড়ন, জোরপূর্বক আটকে রাখার প্রতিবাদে এই ‘প্রতিবাদ ও আলোচনা সভার’ আয়োজন করা হয়েছে। চীনা সরকার মিডিয়ার সকল কর্মকাণ্ড স্তব্ধ রেখে বছরের পর বছর ২২ লাখ মুসলিমকে বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রেখে তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্যাতন, যৌন নীপিড়ন, হত্যাসহ অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
চীনা সরকার মানবাধিকার কর্মী, সংবাদকর্মী, জাতিসংঘের কর্মকর্তা এমনকি সংবাদ সংগ্রহে আগ্রহী এমন কাউকে চীনের উইঘুরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, পুরো পৃথিবীকে অন্ধকারে রেখে চীনা সরকার এই সকল অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরেও সামান্যতম সংবাদ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যেমন বিবিসি, আল-জাজিরা বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করে কিছু কিছু সংবাদ সংগ্রহ করে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে। যা দেখে ও শুনে আমরা হতবাক হয়েছি। পুরো বিশ্বের মানুষ এটা মেনে নিতে পারেনি। আমরা চীনা সরকারের এ ধরনের গর্হিত অপরাধ কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বক্তারা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ মিত্ররা চীনের উপর নামেমাত্র অবরোধ আরোপ করে দায়সারা দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু চীনের দানব সরকার এই সামান্য অবরোধ ও চাপে ক্ষ্যান্ত হয়নি এবং হবেও না। তাকে থামাতে হলে বিশ্বের সকল দেশ মিলে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাশ করিয়ে চীনের উপর ব্যাপক ভিত্তিক অবরোধ আরোপ করে চাপ তৈরি করুন। অন্যথায় চীনা দানব সরকার কোনভাবেই গর্হিত কর্মকাণ্ড হতে পিছপা হবে না। তারা অর্থনৈতিকভাবে ধনী দেশ হওয়ার কারণে সারা বিশ্বের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে চায় এবং মুসলিমদের হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, যৌন নীপিড়ন ইত্যাদি অবলীলায় চালিয়ে গেলেও কেউ তাদের আটকাতে সাহস পায় না।
আলোচনা সভার প্রধান অতিথি বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা ঢাকা মহানগরীর নির্বাহী সভাপতি মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন বলেন, বর্তমান বিশ্বে মুসলমান রাষ্ট্রগুলোর মাঝে ধর্ম ও ভ্রাতৃত্ব রক্ষার চেয়ে ব্যবসা-বানিজ্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নির্যাতিত উইঘুর মুসলিমদের পক্ষে কেউ আওয়াজ তুলছে না। এ কারণে চীনের উইঘুর মুসলিমরা আজও নির্যাতিত। ভ্রাতৃত্বের প্রতি লক্ষ্য রেখে আমাদের মুসলিম নির্যাতনের প্রতি সোচ্চার হতে হবে।
ইকরা বাংলাদেশের প্রিন্সিপাল মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন বলেন, মুসলিম নির্যাতনের ব্যাপারে আমাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন থেকে শিক্ষা নিতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় মাযলুমের পক্ষে ছিলেন। যালেম নিজের লোক হলেও তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। ন্যায়ের পক্ষে সোচ্চার থেকেছেন।
নির্যাতিত মুসলিমদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম ফোরামের চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী মিত্র দেশের মুসলমানরাও সুবিধা বঞ্চিত, নির্যাতিত। সে দেশের নির্যাতিত মুসলমানদের পাশে দাড়াঁনো মুসলিম ভ্রাতৃত্বের দাবী। এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। পাশাপাশি বিশ্বের যেখানেই মুসলমান নির্যাতিত, নিপীড়িত আমরা তাদের পক্ষে আওয়াজ তুলবো। তাদের জন্য দুআ করবো।
বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার দাবী জানিয়ে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের জানেশীন বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ দমন করতে হলে জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের গডফাদার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্প্রতি তারা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। তাই বাংলাদেশে এদের সমস্ত কর্মকান্ড বন্ধ করতে হবে।
আলোচনা সভাটি আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম সংসদ কেন্দ্রীয় সভাপতি মুফতি ওসমান গনি চৌধুরীরর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়, এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম ফোরামের চেয়ারম্যান আল্লামা সদরু্দ্দীন মাকনুন, প্রধান বক্তা ছিলেন, UCTC ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. বেলান নুর আজিজী সহ সম্পাদক মুফতি তানজিল আমীরসহ, সংদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ইয়াসীন হাবিব, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা আব্দুল জাব্বার ছাত্র নেতা এনামুল হক মঞ্জুর, ইসলামী আন্দোলন নেতা মাওলানা জাহাঙ্গীর রফিক, বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা কক্সবাজার জেলা সভাপতি মাওলানা শোয়াইব,কক্সবাজার ৭১ পত্রিকার সম্পাদক রূহল আমীন সিকদার,, বিশিষ্ট লেখক, খন্দকার হামিদ উল্লাহ কেন্দ্রীয় সংসদের শিক্ষা সম্পাদক রিদওয়ানুল কাবীর, কক্সবাজার জেলা যুব আন্দোলনের সদস্য সাইফুল্লাহ চৌধুরী, খেলাফত মজলিস কক্সবাজার শহর শাখার সভাপতি মাওলানা ওমর ফারুক, আল-ফুরকান ফাউন্ডেশনের মহাসচিব মাওলানা ইলিয়াস নুরু, কক্সবাজার জেলা যুগ্ন আহবায়ক আর এম ফরিদুল আলম, আতা উল্লাহ ত্বকী, মুহাম্মদ সলিম প্রমুখ।