পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : উত্তরের পাঁচ জেলাসহ দেশের মোট ছয় জেলায় গতকাল রবিবার মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আজ সোমবার তা উত্তরের আরো কিছু জেলায় ছড়াতে পারে। সব মিলিয়ে আজ দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শীতের অনুভূতি কিছুটা বাড়তে পারে। তবে সামগ্রিকভাবে মাসের বাকি দিনগুলোতে পুরো দেশে শীতের অনুভূতিতে বড় কোনো তারতম্য হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, পঞ্চগড় ও কুড়িগ্রাম জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ (৮ থেকে ১০ ডিগ্রি) বয়ে গেছে, যা আজও অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল রাজশাহী, পাবনার ঈশ্বরদী ও নওগাঁর বদলগাছীতে, ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৯.৮ এবং কিশোরগঞ্জের নিকলি ও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঢাকায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪.৪ ডিগ্রি।
সামগ্রিকভাবে অঞ্চলভেদে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯.৫ থেকে ১৫.৫ ডিগ্রির মধ্যে। অন্যদিকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৯ থেকে ২৮ ডিগ্রির মধ্যে।
আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শীত কিছুটা বাড়তে পারে। আজ (গতকাল) রাজশাহী বিভাগের কয়েক জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ছিল।
আগামীকাল রংপুর বিভাগের কোনো কোনো জেলায়ও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।’
এদিকে আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী বুধবার ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে হালকা বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। এতে শীতের অনুভূতি বাড়তে পারে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন জানান, আজ ও কাল সারা দেশে তাপমাত্রা ও শীতের অনুভূতি কম-বেশি একই রকম থাকার সম্ভাবনা বেশি। বুধবার দেশের কোথাও কোথাও দিনের তাপমাত্রা কমতে পারে বৃষ্টির কারণে। তবে সব মিলিয়ে চলতি মাসের বাকি দিনগুলোতে শীতের অনুভূতিতে খুব বেশি পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।
৩০ বা ৩১ জানুয়ারির দিকে তাপমাত্রা বেড়ে শীত আরো কমতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগামী কিছুদিন উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কুয়াশার ঘনত্ব তুলনামূলকভাবে বেশি থাকতে পারে। উপকূলীয় এলাকাগুলোতে কুয়াশার পরিমাণ কম থাকবে, তাপমাত্রাও কিছুটা বাড়তে পারে। ঢাকাসহ দেশের মধ্যাঞ্চলের পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দেশে আজ দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়লেও রাতের তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। আগামীকাল মঙ্গলবার দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। তবে বাড়তে পারে রাতের তাপমাত্রা। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও কুয়াশা দুপুর পর্যন্ত থাকতে পারে।
মৃদু শৈত্যপ্রবাহে বন্ধ কয়েক জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
গত রবিবার রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এ অবস্থায় রাজশাহীর মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো দুই দিন ও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো এক দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার (মাউশি) রাজশাহী অঞ্চলের উপপরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়, পূর্বাভাস অনুযায়ী রবি ও সোমবার রাজশাহীর তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকবে। তাই এই দুই দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকবে। অন্যদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম জানিয়েছেন, যদি দেখা যায় সোমবারও তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকবে, তাহলে সেদিনও জেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হবে।
জয়পুরহাটে গতকাল সকালে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসায় জেলার সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রবি ও সোমবার বন্ধ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার আমান উদ্দিন মণ্ডল বলেন, যদি কোনো প্রতিষ্ঠান আদেশ অমান্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নীলফামারীতে বাড়ছে শীতজনিত রোগ, শিশুরা বেশি আক্রান্ত
নীলফামারীতে বাড়ছে শীতজনিত রোগবালাই। হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, সর্দিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশু রোগীদের ভিড়। গতকাল দুপুর ১টার দিকে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ১০ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৩১ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। ওয়ার্ডের কর্মরতরা জানান, ৩১ রোগীর মধ্যে ২১ জনই শিশু। অন্যদিকে ১০ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে ১৭ জনকে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে।
নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু আল হাজ্জাজ বলেন, ‘শীতের কারণে বয়স্করা হাঁপানি ও ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। শিশুরা সর্দিকাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।’