জঙ্গিবাদ দমনে এক হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার

জঙ্গিবাদ দমনে এক হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার

নিজস্ব প্রতিবেদক  ● সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে এক হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইসলামে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের ঠঁভই নেই। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদে লাভবান হন অস্ত্র ব্যবসায়ীরা। আমাদের পবিত্র ধর্মের সম্মান রক্ষার্থে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ সবসময় সৌদিআরবের পাশে থাকবে এবং এক হয়ে কাজ করবো, যাতে এই পবিত্র ধর্মের সম্মান কেউ ক্ষুণ্ন করতে না পারে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে আয়োজিত ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

বৈশ্বিক সমস্যা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদবিরোধী সৌদি দশার উদ্যোগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমি সৌদি বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই তার উদ্যোগের জন্য। বিশ্বে যারা শান্তিতে বিশ্বাস করে তাদেরকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে তিনি এই সন্ত্রাস দমনে ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, ভ্রাতৃত্বের ধর্ম, উন্নতির পথে এগিয়ে যাবার ধর্ম। ইসলাম ধর্মে অসহায় এতিমদের সাহায্য করার কথা বারবার বলা হয়েছে। এই ধর্মকে কেউ হেয় করবে, কলুষিত করবে, এটা কখনই আমরা সহ্য করতে পারি না। কাজেই এক্ষেত্রে যারা আন্তর্জাতিক বিশ্বে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ তাদের পাশে থাকবে।

তিনি বলেন, আমি মনে করি আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ নিয়েছি তা আরো শক্তভাবে কার্যকর করতে পারবো। এ প্রসঙ্গে তিনি সৌদি বাদশার জঙ্গিবিরোধী ভূমিকায় বাংলাদেশ সবসময় সহযোগিতা দেবে বলে উল্লেখ করেন। ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তৃতা করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন সৌদিআরবের পবিত্র মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববীর ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ বিন নাসির বিন মোহাম্মদ আল খুজাইম এবং মসজিদে নববীর ইমাম ও খতিব আব্দুল মোহসিন বিন মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল কাশেম। মঞ্চে অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আল মুতাইরি উপস্থিত ছিলেন।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশে ইসলাম ধর্ম নিয়ে ব্যবসা হয়েছে। দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগ এদেশে ইসলাম ধর্মের উন্নতির জন্য অনেক কাজ করেছে বলে জানান তিনি। সন্ত্রাসবিরোধী সামরিক জোট গঠন করায় সৌদি বাদশাকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি সৌদিআরবের পবিত্র মসজিদুল হারাম এবং মসজিদে নববির ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন নাসির বিন মোহাম্মদ আল খুজাইম ও মসজিদে নববির ইমাম আবদুল মেহসিন বিন মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল কাশেম বাংলাদেশের আতিথেয়তা গ্রহণ করায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। এই সময়ে তাদের এই সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

 

বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদের উত্থান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম শান্তিতে বিশ্বাস করে। ইসলাম ধর্ম কখনো নিরীহ মানুষ হত্যা সমর্থন করে না। মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই, তারা পরস্পরকে রক্ষা করবে। তারা কেন নিরীহ মানুষকে হত্যা করবে? জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে চলমান কঠোর ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ওলামা মাশায়েখের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, পবিত্র ইসলাম ধর্মকে কেউ হেয় করবে, এটা সহ্য করা হবে না। তিনি দেশের সাধারণ মানুষের মাঝে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান তাদের প্রতি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু মানুষের জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিশ্বব্যাপী হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। মানুষ ইসলাম ধর্মের সঙ্গে জঙ্গিবাদ জুড়ে দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

আলেম-ওলামা মহাসম্মেলেন প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মহাসম্মেলনে পবিত্র মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববির ভাইস প্রেসিডেন্ট শায়খ মুহাম্মদ বিন নাসের আল খুজাইম ও মসজিদে নববির ইমাম শায়খ আবদুল মুহসিন বিন মুহাম্মদ আল কাসিমসহ ছয় সদস্যের সৌদি প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। আলেম-ওলামা মহাসম্মেলনকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দেশের প্রায় সব জেলা থেকে অসংখ্য আলেম সম্মেলনে যোগ দেন। এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে এর আশপাশের ২৫টি সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে ও বাইরে তিনটি অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়। অনুষ্ঠানস্থলের এক কিলোমিটার দূরে বিভিন্ন ধরনের তল্লাশিচৌকিসহ আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তাবেষ্টনী গড়ে তোলা হয়।

তিনি বলেন, এই সমাবেশ বর্তমান সময়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সমাবেশে আগত বিশিষ্ট বক্তারা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। কারণ জঙ্গিবাদ এখন বিশ্বব্যাপী একটি সমস্যা। শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে আমরা নারীদের নামাজের ব্যবস্থা করেছি। এ মসজিদে ৫ হাজারের ওপরে নারী এখন নামাজ পড়তে পারেন। আমরা আরবি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। মাদরাসায় অনাথদের জন্য কার্যক্রম শুরু করেছি। আমাদের শান্তির ধর্ম পালনে যারা নিবেদিত, তারা যেন যথাযথভাবে পালন করতে পারেন, সে ব্যবস্থাও করে দিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের এই ভূখণ্ডে প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান। ইসলামের যে ধর্মীয় শিক্ষা সেটা আমাদের পালন করতে হবে। অন্য ধর্মের মানুষ এখানে বাস করে, তাদের প্রতি আমাদের সম্মান দেখাতে হবে। যেন সবাই সবার ধর্ম পালন করতে পারে। ধর্মের নামে কেউ যেন কারও ক্ষতি না করে, জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড করতে না পারে সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকে এক হয়ে ইসলামের পথে কাজ করতে হবে। কেউ যেন জঙ্গিবাদের পথে না যায় সেটা খেয়াল করতে হবে। ইসলাম সবসময় মানবতাবাদে বিশ্বাস করে। ইসলাম ক্ষমা ও ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। অসহায়দের সহায়তা করতে ইসলাম শিক্ষা দেয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *