পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: জলবায়ু বিপর্যয়, বন্যা, খরা, ঝড় ও দাবানলসহ জলবায়ুর বিভিন্ন পরিবর্তনের কারণে ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৪৩.১ মিলিয়ন শিশু বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের শিশু তহবিল সতর্ক করে বলছে, “ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি মনোযোগের অভাব রয়েছে। এই বিষয়টিতে নজর দেওয়ার জন্য আহ্বান জানায় সংস্থাটি।”
এ সংক্রান্ত জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বাস্তুচ্যুত শিশুদের মর্মান্তিক জীবনের ঘটনা উঠে এসেছে। প্রতিবেদনের সহ-লেখক লরা হিলি এএফপিকে বলেন, “এই তথ্যে পুরো চিত্রটি উঠে আসেনি। এর বাইরেও অনেকে আরও মানবেতর জীবনযাপন করছে।”
প্রতিবেদনে সুদানের শিশু খালিদ আব্দুল আজিমের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। যার গ্রাম তীব্র বন্যায় আক্রান্ত ছিল। শুধু নৌকায় করে গ্রামটিতে যাওয়া যাচ্ছিল।
২০১৭ সালে একটি মিনিভ্যানে বসে ক্যালিফোর্নিয়ায় নিজের বাড়ি দাবানলের আগুনে পুড়তে দেখেন শিশু দুই বোন মিয়া ও মাইয়া।
মিয়া বলেন, “আমি ভয় পেয়েছিলাম, হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমি সারা রাত জেগে থাকতাম।”
জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে সৃষ্ট বাস্তুচ্যুতদের পরিসংখ্যানে সাধারণত বয়স অনুযায়ী হিসাব উঠে আসে না।
তবে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মনিটরিং সেন্টারের সঙ্গে কাজ করে বাস্তুচ্যুত শিশুদের একটি তালিকা প্রকাশ করে ইউনিসেফ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে চার ধরনের জলবায়ু বিপর্যয়ে (বন্যা, ঝড়, খরা এবং দাবানল) ৪৪ দেশে ৪৩.১ মিলিয়ন শিশু বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
বাস্তুচ্যুতের ঘটনার ৯৫% বন্যা ও ঝড়ের কারণে হয়েছিল।
লরা হিলি এএফপিকে বলেন, “পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিদিন প্রায় ২০,০০০ শিশু বাস্তুচ্যুত হয়েছে।”
ইউনিসেফের প্রতিবেদনে ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে বলেও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, বন্যা ও পানির কারণে আগামী ৩০ বছরে ৯৬ মিলিয়ন শিশু বাস্তুচ্যুত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বাস্তুচ্যুত হতে পারে ১০.৩ মিলিয়ন শিশু। ঝড়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ৭.২ মিলিয়ন শিশু।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল এক বিবৃতিতে বলেন, “যারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। তারা ভয়ের পরিবেশে বেড়ে উঠবে। তারা বাড়ি ফিরবে, স্কুল আবার শুরু করবে, নাকি আবার সরে যেতে বাধ্য হবে এই উদ্বেগ তাদের বয়ে বেড়াতে হবে।”
ইউনিসেফ নভেম্বর ও ডিসেম্বরে দুবাইতে অনুষ্ঠিত কপ-২৪ জলবায়ু সম্মেলনে বিষয়টি তুলে ধরার জন্য বিশ্ব নেতাদের আহ্বান জানিয়েছে।
হিলি বলেন, “যে শিশুরা এরইমধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছে তাদের অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তনের বিশ্বে বাস করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”
চীন, ভারত ও ফিলিপাইনের শিশুদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি বলে জানানো হয়। বিশাল জনসংখ্যা ও ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এসব দেশে সঠিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি বলেও জানানো হয়।