পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : জামায়াতে ইসলামীর সভা-সমাবেশসহ সব রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে করা আবেদনটি আগামী বৃহস্পতিবার শুনবে আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারকের আপিল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার শুনানির এই দিন ধার্য করে দিয়েছে।
আবেদনকারী পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী তানিয়া আমীর। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর মিছিল-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি দলটির নেতাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়েছে। এর মধ্যে জামায়াত ৪ অগাস্ট সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। তাই দ্রুত আবেদনটির ওপর শুনানি হওয়া দরকার।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, “আগামী বৃহস্পতিবার আবেদনটি কার্যতালিকায় ৩৫ ক্রমিকের মধ্যে থাকবে।”
তরীকত ফেডারেশনের নেতা রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ কয়েকজনের আবেদনে এক দশক আগে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছিল হাই কোর্ট। তারপর থেকে জামায়াত দলীয় পরিচয়-প্রতীক নিয়ে কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না।
হাই কোর্টের দেওয়া ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে জামায়াত। সেই আবেদন আপিল বিভাগে বিচারাধীন।
বিচারাধীন এই আপিলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী যেন সভা-সমাবেশ, মিছিলসহ কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে না পারে, সেই বিষয়ে এই নিষেধাজ্ঞা চেয়ে গত ২৬ জুন আপিল বিভাগে এই নতুন আবেদন করা হয়।
এছাড়া আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় সমাবেশ করে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন দাবি করায় আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে আলাদা একটি আবেদন করেন রেজাউল হক চাঁদপুরী। তার পক্ষে আবেদন দুটি করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর।
আবেদনে বলা হয়, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল সংক্রান্ত হাই কোর্টের রায় এখনও বহাল রয়েছে। রায় বহাল থাকাবস্থায় গত ১০ জুন দলটি ঢাকায় সভা-সমাবেশ করেছে।
“উচ্চ আদালতের রায়ের পর দলটির এ ধরনের কর্মসূচি পালন বেআইনি। একইসঙ্গে উচ্চ আদালতের রায়ের লঙ্ঘন। কারণ রায়ে বলা হয়েছে, দল হিসাবে জামায়াতের নিবন্ধন সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের পরিপন্থী। অতএব কোনোভাবেই দলটি সভা-সমাবেশ করার অনুমতি পেতে পারে না।”
সভা-সমাবেশ করে নিবন্ধন দাবি করে জামায়াত নেতাদের বক্তব্য দেওয়াও আদালত অবমাননার শামিল বলে দাবি করা হয় আবেদনে।
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ার, নায়েবে আমির আব্দুল্লা মোহাম্মদ তাহের, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, নায়েবে আমির হেলাল উদ্দিন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার খোন্দকার গোলাম ফারুককে আদালত অবমাননর আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, দলের আমির শফিকুর রহমানসহ ও ওলামায়ে কেরামের মুক্তি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে গত ১০ জুন রাজধানীতে সমাবেশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষনেতারা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে শুরু হওয়া যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত হন।
এক দশক আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় আসার পর মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে দলটির অধিকাংশ শীর্ষনেতাকে ফাঁসিতে ঝোলান হয়।
তারমধ্যে জামায়াতকে ইসির নিবন্ধন দেওয়াকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যান তরীকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফসহ ২৫ জন।
সেই আবেদনে ২০১৩ সালের অগাস্টে হাই কোর্টের বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নিবন্ধন দেওয়া অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।
পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর ২০১৮ সালে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে।
নিবন্ধন বাতিলের পর জামায়াত সংসদ নির্বাচনে তাদের জোটসঙ্গী বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে ভোটে অংশ নিয়েছিল। দীর্ঘ সময় বিএনপির সঙ্গে থাকা জামায়াত এখন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সঙ্গে জোটে নেই।