জাহেল বক্তা ও জাহেল পীর জাতিকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে

জাহেল বক্তা ও জাহেল পীর জাতিকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে

  • আমিনুল ইসলাম কাসেমী

প্রয়াত মুফতি সাঈদ আহমাদ পালনপুরী (রহ.) দারুল উলুম দেওবন্দের শাইখুল হাদীস ও একজন জগদ্বিখ্যাত আলেম ছিলেন। বিশেষ করে তাঁর হাদীসের দরস ছিল প্রশংসনীয়। ছাত্ররা মুখিয়ে থাকত তাঁর দরসে বসার জন্য। মাগরিবের নামাজের পরে তিনি দরস দিতেন (১৯৯৬ সনের কথা। তখন তিনি তিরমিজি শরীফ প্রথম খন্ড পড়াতেন)। পুরো দারুল হাদীস ভর্তি থাকত। কোথায়ও তিল ধরনের ঠায় থাকত না। এমনিকে দরসগাহের বাইরেও ছাত্ররা কিতাব নিয়ে বসে যেত তাঁর তাকরীর শোনার জন্য।

প্রিয় উস্তাদ পালনপুরী সাহেব একদিন দরসে বলেছিলেন, এই ভারত উপমহাদেশে ইসলামের প্রচার-প্রসার ঘটেছে পীর মাশায়েখদের মাধ্যমে। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে এদেশের দ্বারে দ্বারে ইসলামের মর্মবাণী পৌছেছে। আবার এই ভারত উপমহাদেশে যত বিদআত-শিরক এর আভির্ভাব হয়েছে, যত গোমরাহীর আবিস্কার হয়েছে, এগুলোর পিছনেও কিছু পীর মাশায়েখদের দায় রয়েছে।

জনাব পালনপুরী সাহেবের সেই বক্তব্য দেরীতে হলেও এখন আমাদের বুঝে আসছে। এখন হাতে-নাতে দেখছি কীভাবে মুর্খ পীর এবং ইলমহীন বক্তাদের দ্বারা সমাজ কলুষিত হচ্ছে। দিনে দিনে এদেশের মানুষকে গোমরাহীর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

আজকাল যেমন কিছু পীরের ইলম নেই, তেমনি কিছু ওয়াজ মাহফিলে ইলমহীন বক্তা রয়েছে, তারাও দেদারসে নিজেদের মূর্খতা প্রকাশের মাধ্যমে জাতির সর্বনাশ ডেকে আনছে। ওয়াজ মাহফিলে এমন এমন বক্তা দেখা যায় যিনি কোনোদিন মাদ্রাসাতে উস্তাদের কাছে কুরআন-হাদীস পড়েনি। সাধারণ স্কুল-কলেজে পড়ুয়া। তারপরেও তিনি ওয়াজ মাহফিলের প্রধান অতিথি। সে মানুষকে ইসলামী জ্ঞান দিয়ে থাকে।

বড় আফসোসের বিষয়! দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে উস্তাদের কাছে কুরআন হাদীস না পড়ে কীভাবে তিনি দ্বীনি বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন? এটাতো অমার্জনীয় অপরাধ। আর সেসব মূর্খ ওয়ায়েজের জাহেলী সিদ্ধান্তে এদেশের সাধারণ জনতার অপূরনীয় ক্ষতি হচ্ছে। দিনে দিনে আরো জাহালাত ছড়িয়ে পড়ছে সব জায়গাতে।

ওয়াজ মাহফিল ভাল জিনিস। এর দ্বারা দ্বীনি চেতনা জাগ্রত হয়। তবে কথা হল বক্তা তো সেরকম ইলমওয়ালা হতে হবে। ওয়াজ মাহফিলটা ক্লাসের মত। ক্লাসের শিক্ষক যদি অযোগ্য, ইলমহীন হয় তাহলে ছাত্ররা কিছু শেখা দুরে থাক বরং মূর্খতা ডেকে আনবে। তেমনি ওয়াজ মাহফিলের বক্তার ইলম না থাকলে সে সকল স্রোতাকে গোমরাহ বানিয়ে ছাড়বে।

আবার পীরও উস্তাদের পর্যায়ে। কেননা তার তত্বাবধানে হাজারো ভক্তবৃন্দ থাকে। যারা কিছু শেখার জন্য পীর সাহেবের কাছে বায়আত গ্রহণ করে। কিন্তু পীর সাহেব যদি মূর্খ হন, কোনো ইলম যদি না থাকে, তাহলে কীভাবে তিনি মুরিদগণকে পরিচালনা করবেন? কীভাবে তাদের সহীহ ইলম শেখাবেন? মুরিদগণ সেই সকল মূর্খ পীর সাহেবদের কাছে কোন ইলম শিখতে পারবে না। বরং তারা অন্ধকারে নিক্ষিপ্ত হবে এবং তাদের দ্বারা এ সমাজ হবে আরো অন্ধকার।

আরো কিছু জাহেল বক্তার আস্ফালন দেখলাম। জাহালাত কীভাবে তাদের অক্টোপাসের মত গ্রাস করে আছে। সেসব বক্তারা দেওবন্দী তথা কওমী ঘরানার সন্তান। কেউ কওমীতে পড়েছে, আবার কেউ কেউ তো ফারেগও হয়েছে। অবাক লাগে তাদের কর্মকাণ্ড দেখে। একজন মওদুদীবাদী চিন্তাধারার মানুষ, এমনকি তিনি মওদুদী জামায়াতের তরজুমান বা মুখপাত্র ছিলেন। সেই ব্যক্তির ইন্তেকালে যেভাবে দরদ দেখাচ্ছে তাতে বোঝা যায় না তিনি দেওবন্দী হালকার সন্তান। অথচ ওরা দেওবন্দী মাদ্রাসাগুলোতে ওয়াজ করে। কওমী মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিলের হাদিয়ার টাকায় পকেট ভারি করে। কিন্তু ওদিকে মওদুদীবাদীদের জন্য তার বড় মায়াকান্না! ওদের জন্য তার বুক ফেঁটে যায়!

সেসব জাহেল বক্তাদের দ্বিমুখী চরিত্র দেখা যায়। কওমীতে আসলে পুরো দেওবন্দীদের সাথে মিশে যান। আবার ওদিকে ফেসবুকে মওদুদীবাদীদের জন্য তাদের পরাণ ছটফট করে। মানে দুই নৌকাতে পা রাখতে চান। তাদের চিন্তাধারা এমনি বোঝা যায় যে, দ্বীন ইসলাম যেদিকে যায় যাক তাদের ওয়াজ মাহফিল ঠিক থাকলে হল, বেদআত ও জাহালাতে অন্ধকার হয় হোক তবুও ওদের ওয়াজ মাহফিল ঠিক থাকুক আর হাদিয়া যেন ঠিক থাকে। এরকম মেজাযে যেন তারা চলছে।

আসলে এগুলো মূর্খতা। ওয়াজের ময়দানে ওয়াজ করে ঠিকই। কিন্তু ইলম তার শূন্য। মওদুদীবাদ কত জঘন্য সেটা জানলে হয়ত এরকম হতনা। যেখানে কওমী মাদ্রাসার সিলেবাসে রয়েছে, ফেরাকে বাতেলার অন্যতম একটা ফেরকা মওদুদীবাদ। যেটা মিশকাত জামাতের ছাত্রদের পড়ানো হয়। এত কিছুর পরেও ওসব জাহেল বক্তাদের মওদুদী গ্রুপের সাথে সখ্য গড়ে ওঠেছে। তাদের জন্য দরদ উথলে উঠছে।

এজন্য ওয়াজ মাহফিলে জাহেল বক্তা এবং জাহেল পীর সবই ক্ষতিকারক। ওরা সবাই ইসলামকে কলুষিত করছে। হক এবং বাতিল গুলিয়ে ফেলছে। সেই সাথে জাতিকে ভুল মেসেজ দিচ্ছে তারা। যার দ্বারা হেদায়েতের পরিবর্তে গোমরাহীতে নিমজ্জিত হচ্ছে এদেশের সাধারণ মানুষ।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সহীহ বুঝ দান করুন। আমিন।

লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *