জিহবার লকডাউন নিশ্চিত করুন
মুহাম্মাদ আইয়ুব ❑ চোখের পলকে রহমতের দশক ফুরিয়ে আজ মাগফিরাতের প্রথম দিন হাযির। রহমতের পূন্যময় দিবারাত্রিতে আল্লাহ পাক যেমনি ভাবে তাঁর অসংখ্য অগণিত বান্দার উপর রহমতের প্রবল বারি বর্ষণ করেছেন ঠিক অনুরূপ মাগফেরাতের এই দশকেও অগণিত পাপীতাপীকে ক্ষমার ঘোষণা শুনিয়ে দিবেন। ভাগ্যবান তারাই যারা তাদের কৃত পাপ থেকে সত্যদিলে তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে। ক্ষমাটা আসলে তাদের জন্য। অতীত জীবনের মত রমজানেও পাপ সাগরে আকন্ঠ নিমজ্জিত থেকে ‘আমরা মুসলমান’ আল্লাহ তো মাফ করবেনই এমন ধারনা নিয়ে যারা অন্যায় অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা মূলত বোকার স্বর্গে বাস করছেন।
নবীজী (সাঃ) বলেন, ‘বুদ্ধিমান ঐ ব্যক্তি যে নিজের ব্যপারে সদা সজাগ, সতর্ক থাকে এবং আখেরাতের জন্য আমলে নিয়োজিত থাকে।আর নির্বোধ সে, যে নিজের কু প্রবৃত্তির অনুসরণ করে আবার আল্লাহর ক্ষমার আশা করে।’ [বুখারি]
মাগফিরাত তো তারাই কামনা করতে পারে, যাদের জিহবা কোয়ারান্টাইনে আছে।
সুতরাং আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে আগে গুনাহ ছাড়তে হবে তারপর তওবা করতে হবে। একটা বিষয় খুব ভালভাবে মনে রাখতে হবে যে, একজন মানুষ সারা জীবনে যত পাপ করে তার সিংহভাগই জিহ্বা সাহেবের কল্যাণে হয়ে থাকে। মিথ্যা, গীবত, গালিগালাজ সব ক্ষেত্রে মিস্টার জিহবা সাহেবের একছত্র আধিপত্য। তাই করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে যেমন পুরো দেশকে লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে ঠিক তদ্রূপ পরকালের জন্য সঞ্চয় করে রাখা মূল্যবান নেকি বাঁচাতে জিহবাকে লকডাউন করে দেওয়া দরকার। মাগফিরাত তো তারাই কামনা করতে পারে, যাদের জিহবা গাল কোয়ারান্টাইনে আছে, প্রয়োজন ছাড়া যে কথা বলেনা।
আল কুরআনে জিহবার লকডাউন:
১। ‘আর তোমরা দূরে থাক মিথ্যা বলা থেকে।’ { সুরা হজ্জ,আয়াত নং ৩০}
২। ‘হে মুমিনগণ! তোমরা বহুবিধ অনুমান হতে দূরে থাক; কারণ অনুমান কোন কোন ক্ষেত্রে পাপ এবং তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করনা এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করনা। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে চায়? বস্তুতঃ তোমরা তো এটাকে ঘৃণাই মনে কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।’ {সূরা হুজুরাত, আয়াত নং ১২}
৩। ‘এবং অনুসরণ করনা তার যে কথায় কথায় শপথ করে, যে লাঞ্চিত পশ্চাতে নিন্দাকারী, যে একের কথা অপরের নিকট লাগিয়ে বেড়ায়।’ { সূরা আল- ক্বলম, আয়াত নং ১০-১১}
হাদিসে জিহবার কোয়ারান্টাইন:
১। ‘প্রকৃত মুসলমান ঐ ব্যক্তি যার জিহবা ও হাত থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ [ বুখারি ও মুসলিম]
২। ‘বড় বড় গুনাহের অন্যতম হচ্ছে মিথ্যা বলা বা মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।’ [ বুখারি]
প্রিয় পাঠক! কুরআন হাদিসের আলোকে ইহকাল ও পরকালে অফুরন্ত নেয়ামত উপভোগের জন্য জিহবাকে গাল কোয়ারান্টাইনের রাখার বিকল্প নাই। তাই আসুন, মাগফিরাতের মূল্যবান দিনগুলোতে জিহবার লকডাউন ও কোয়ারান্টাইন নিশ্চিত করে আমরা আমাদের তওবার মূল্যবান কর্মটি সম্পাদনে আত্মনিয়োগ করি।অর্থবহ করে তুলি পবিত্র মাহে রমজানের মাগফিরাতের দিনগুলো।