জেলে থেকেও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে ইমন!

জেলে থেকেও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে ইমন!

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ওরা অস্ত্র দেখিয়ে ভদ্রবেশে চাঁদাবাজি করে। যারা চাঁদা দেন, তারা কারো কাছে অভিযোগও করেন না। অভিযোগ করলেই ওরা হুমকি দেয়। গুলি করে। ভুক্তভোগীর কাছে পুলিশ গিয়ে পরামর্শ দেয় যে থানায় লিখিত অভিযোগ করুন। লিখিত অভিযোগ না দিলে অন্তত মৌখিক অভিযোগ দিতে বলে। কিন্তু ভুক্তভোগীরা পুলিশকে জানায় যে ওরা ভালো ছেলে, ওরা চাঁদাবাজি করে না।

কারাবন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের এই বাহিনীর দুই শীর্ষ ক্যাডার গ্রেফতারের পর অনেক সদস্যই আত্মগোপন করেছে। আত্মগোপন করতে গিয়ে মেঘনায় ট্রলারডুবিতে সজীব ও তানভীর নামে দুই সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরো পাঁচ জনকে দাউদকান্দি থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ১০ বছর ধরে রাজধানীর হাজারীবাগ, রায়েরবাজার ও ধানমন্ডি এলাকায় এমনই এক চাঁদাবাজ চক্র আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এই গ্রুপটি জাল দলিল করে হাজারীবাগের দুটি জমির প্লট দখল করে নেয়। হাজারীবাগের সব ডিশ লাইন প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক হাজার হাজার টাকা চাঁদাবাজি করে। এই চাঁদার টাকা কাশিমপুর কারাগারে বন্দি দুর্ধর্ষ শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমনের কাছে চলে যায়। জেলে বসেই ইমন ধানমন্ডি, কলাবাগান ও হাজারীবাগের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে।

এরই জের ধরে গত ১৯ জুন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় ইমনের প্রধান সহযোগী শাহাবুদ্দিন মুন্না। গ্রেফতারের পর মুন্নার কাছ থেকে চাঁদাবাজি সিন্ডিকেটের তথ্য জানতে পারে পুলিশ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার আব্দুল্লাহ হিল কাফি বলেন, মাস দেড়েক আগে হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ এলাকার চাঞ্চল্যকর বাদল হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে সন্ত্রাসী মুন্নাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশের সূত্র জানায়, হাজারীবাগ, জিগাতলা, শঙ্কর ও রায়েরবাজার এলাকার ডিশ লাইনের চাঁদাবাজি করে শাহাবুদ্দিন মুন্না। এই সন্ত্রাসী চক্র স্থানীয় সেন্টুর কমটেক ক্যাবল, খোকনের গোল্ডস্টার, লাল মিয়ার কনিকা ক্যাবলসহ বিভিন্ন ডিশ লাইনের ব্যবসায় চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে। শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের অবৈধ অস্ত্র ভাণ্ডার দেখভাল করে মুন্না। পুলিশের খাতায় চাঁদাবাজির সিন্ডিকেটে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক হেজ্জাজ বিন আলম, জিগাতলা নতুন রাস্তার ভাগ্না রনি, মিতালী রোডের রুবেল, ধানমন্ডির তাহাজ্জিব, বাস্টার্ড সেলিম, হাসান আসিফ হোসেন, শরীফ ইসলাম, ইমাম হোসেন প্রতীক ওরফে শুভ, মেহেদী হাসান অনিক, জিতু, প্রিন্স, আফজাল, সজীব, তানভীর হোসেন অনিক, বাবু খন্দকার, শুভ, আবু রায়হান মুন্না, আশিক, এমদাদসহ অর্ধশত চাঁদাবাজের নাম রয়েছে। এরা সবাই ইমনের ক্যাডার বাহিনীর সদস্য বলে পরিচিত।

গত ৫ জুলাই পুলিশ অভিযান চালিয়ে রায়েরবাজার রুপায়ণ গ্রিন সিটি এলাকা থেকে যুবলীগের হেজ্জাজ বিন আলম, হাসান আসিফ হোসেন, শরীফ, ইমাম হোসেন প্রতীক ওরফে শুভ ও মেহেদী হাসান অনিককে একটি রিভলবার, ছয় রাউন্ড গুলি, একটি বিদেশি কুড়াল, একটি সুইচ গিয়ার চাকু ও তিনটি মোটরসাইকেলসহ গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত যুবলীগ নেতা হেজ্জাজ গত ১০ বছর ধরে ইমনের ক্যাডার বাহিনীতে সক্রিয় থেকে চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেছে বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।

পুলিশের এই গ্রেফতার অভিযানের পরপর হাজারীবাগ, জিগাতলা, ধানমন্ডি ও রায়েরবাজার এলাকার ইমনের ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা আত্মগোপন করে। এদের মধ্যে সাত জন সদস্য কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার সাহপাড়া এলাকার বাবু খন্দকারের বাড়িতে গত বৃহস্পতিবার রাতে আসে। ওই রাতেই তারা মেঘনা নদীতে ট্রলার ভ্রমণে বের হয়। ট্রলার ডুবে গেলে মাঝিসহ ছয় জন সাঁতরে তীরে উঠলেও সজীব ও তানভীর হোসেন অনিক নিখোঁজ থাকে। গতকাল সকালে দাউদকান্দির মেঘনা নদী থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবরি দল তাদের ভাসমান লাশ উদ্ধার করে।

এ ব্যাপারে দাউদকান্দি থানার ওসি রকিবুল ইসলাম বলেন, ঢাকার জিগাতলার বাসিন্দা সজীব ও তানভীর বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ ভ্রমণে এসেছিল। ট্রলারডুবির ঘটনার পর তাদের বন্ধু বাবু, শুভ, মুন্না, আশিক ও এমদাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দাউদকান্দি থানায় মামলা করা হয়েছে। হাজারীবাগ থানায় মাদক ব্যবসা ও ভাঙচুরের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। তবে তারা ঢাকা থেকে পালিয়ে দাউদকান্দিতে আত্মগোপন করেছিল কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য মিলেনি।

পুলিশের ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আব্দুল্লাহ হিল কাফি বলেন, মুন্না ও হেজ্জাজ নামে দুই দুর্ধষ সন্ত্রাসীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাদের ক্যাডার বাহিনীর বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীর নাম পুলিশ জানতে পেরেছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *