জোয়ারের পানিতে ভাসছে ডাল ক্ষেত

জোয়ারের পানিতে ভাসছে ডাল ক্ষেত

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বরগুনার তালতলীতে এক প্রভাবশালীর ফসল রক্ষা বাঁধ কেটে ঘেরে পানি উঠানোর সময় ১৭ একর জমির মুগডাল ক্ষেত তলিয়ে এখন জোয়ারের পানিতে ভাসছে। চোখের সামনে পানিতে ডাল ক্ষেত ভেসে যেতে দেখে কৃষকরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে খোট্টারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, গত বছর উপজেলার খোট্টারচর এলাকায় ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) একটি ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে। এই বাঁধ নির্মাণের পর ওই এলাকার কৃষকরা ফসল ফলানোর স্বপ্ন দেখেন। এ জন্য ৯ জন কৃষক এবছর বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ১৭ একর জমিতে মুগডাল চাষ করেন। এতে তাদের প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচ হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে খোট্টারচর গ্রামের প্রভাবশালী নবী জোমাদ্দার তার মাছের ঘেরে জোয়ারের পানি উঠানোর জন্য ফসল রক্ষা বাঁধ কেটে দেন। এ সময় গ্রামের ৯ কৃষকের ১৭ একর মুগডালের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যায়।

মুগডাল চাষি কৃষক ইসমাইল ও ইব্রাহিম বলেন, বাবা-পোলা এনজিও ও মানুষেরডেগোনে টাহা লইয়া মুগডাল লাগাইছি। স্থানীয় প্রভাশালী নবী জোমাদ্দার বান কাইট্যা দিয়া মোগো সর্বনাশ হরছে। মোগো সব ডাইল ক্ষ্যাত এহন পানিতে তলাইয়া গ্যাছে। ডাইল আর ঘরে আনতে পারমু না। মোগো এহন চোহের পানি হালান ছাড়া আর কিছুই করার নাই।

আরেক কৃষক খলিল মিস্ত্রি বলেন, মুই অসুস্থ্য হেইয়ার পরও ও দিনে কাঠমিস্ত্রির কাম হইর্যা টাহা কামাই কইর্যা মুগ ডাইল লাগাইছি। এহন নবী জোমাদ্দারের লইগ্যা মোগো সব শ্যাষ অইয়া গ্যাছে। মোরা এহন কার কাছে যামু। কে আমাগো রক্ষা করবে ও আল্লাগো মোগো বাঁচাও।

অভিযুক্ত নবী হোসেন জোমাদ্দার বলেন, আমার রেকর্ডীয় জমির বাঁধ কেটে আমার ঘেরের লাখ লাখ টাকার মাছ বাঁচানোর জন্য পানি উঠাইছি। আমি কোনো কৃষকের ক্ষতি করি নাই।

তালতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়েজিত) সিএম রেজাউল করিম বলেন, আমাদের অনুমতি না নিয়েই তিনি বাঁধ কেটেছেন। এ ছাড়া বাঁধ কেটে পানি উঠানোর প্রশ্নেই আসে না। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে কৃষকরা যদি কোনো লিখিত অভিযোগ দেয় তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) বরগুনা জেলা কর্মকর্তা মো. প্রিন্স মল্লিক বলেন, এ বিষয়ে এখনো আমাকে কেউ অভিযোগ দেয়নি। কেউ যদি ফসল রক্ষা বাঁধ ব্যক্তি স্বার্থে কেটে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাওছার হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। বুধবার সকালে কৃষি এবং বিএডিসি কর্মকর্তাকে সরেজমিন তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *