টানা পাঁচ মাস কমার পর ফেব্রুয়ারিতে আবার বেড়েছে মূল্যস্ফীতি

টানা পাঁচ মাস কমার পর ফেব্রুয়ারিতে আবার বেড়েছে মূল্যস্ফীতি

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : টানা পাঁচ মাস কমার পরে ফেব্রুয়ারিতে দেশে মূল্যস্ফীতি আবার বেড়েছে। সার্বিক মূল্যস্ফীতি বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতিও। তবে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি আগের মতোই রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশে। গত জানুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

এর আগে গত বছরের আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। মূল্যস্ফীতির ওই হার ছিল গত ১১ বছর ৯ মাসের (১৪৪ মাস) মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ২০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল। ২০১১ সালের মে মাসের পর মূল্যস্ফীতি আর কখনো ৯ শতাংশের বেশি হয়নি।

২০২২ সালের আগস্টের পরে ধারাবাহিকভাবে আবার কমতে থাকে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা কমে হয় ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

বিবিএসের দেওয়া মূল্যস্ফীতির হিসাবে দেখা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির সঙ্গে বেড়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হারও। জানুয়ারি মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যা ফেব্রুয়ারি মাসে বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির হার কমেছে, তবে এই কমার হার খুবই কম—মাত্র দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।

অন্যদিকে সর্বশেষ মূল্যস্ফীতির হিসাব অনুসারে, শহরের তুলনায় এখনো গ্রামে মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি। ফেব্রুয়ারি মাসে শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যেখানে গ্রামে এই হার হিসাব করা হয়েছে ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। সার্বিক মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত উভয় দিক থেকেই গ্রামে মূল্যস্ফীতির হার বেশি দেখা গেছে।

ফেব্রুয়ারি মাসে গ্রামে খাদ্যে ৮ দশমিক ১৯ ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি দেখা গেছে। এ সময়ে শহরে খাদ্যপণ্যে ৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ছিল।

এদিকে গত কয়েক মাসে সরকারি হিসাবে মূল্যস্ফীতির হার কমলেও বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমবেশি বাড়তির দিকেই ছিল। এমনকি নিম্ন আয়ের মানুষের প্রোটিনের অন্যতম উৎস ব্রয়লার মুরগির দাম দ্বিশতক ছাড়িয়ে গেছে। ফলে অনেক দিন ধরে সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে নেই।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বাজারে বেশির ভাগ পণ্যের দাম যখন দফায় দফায় বেড়েছে, তখন দাম কমেছে এমন পণ্যের সংখ্যা খুব সামান্য। এমন পরিস্থিতে ফেব্রুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধির পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হলো।

কেন মূল্যস্ফীতি বাড়ছে

গত জানুয়ারি মাসে দুবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসে আরেকবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে, যা কার্যকর হয়েছে চলতি মাস থেকে। এর বাইরে সরকারের নির্বাহী আদেশে শিল্প, বিদ্যুৎ ও বাণিজ্যিক খাতে বাড়ানো হয়েছে গ্যাসের দামও। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসে ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম ২৬৬ টাকা বাড়ানো হয়েছিল, যদিও মার্চ মাসে তা ৭৬ টাকা কমানো হয়েছে।

ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজি সিলিন্ডার সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে আড়াই শ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে কিনতে বাধ্য হন বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বর্তমানে আমরা একটা উচ্চ মূল্যস্ফীতির বৃত্তের মধ্যে রয়েছি। দেশে যে মূল্যস্ফীতি এখন চলছে তা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। তাই মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা বাড়ল না কমল—এই মাত্রাগত পরিবর্তনে সার্বিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় কমার ইঙ্গিত দেয় না।’

গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, আমদানি ও পণ্য পরিস্থিতিসহ সার্বিক যে অবস্থা, তাতে এখান থেকে খুব সহজে বের হওয়ার কথা নয়।

মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কিছুটা যৌক্তিক কারণ রয়েছে জানিয়ে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেশি থাকার কথা। কিন্তু এর বাইরে বাজার কারসাজি ও মজুত করে রাখার মতো কারণগুলো যেন মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণ না হয়, সে জন্য নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা জরুরি।

সূত্র : প্রথম আলো

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *