পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : সৌদি আরবের বর্তমান রাজা সালমান ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কঠোর সমালোচক যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যা নিয়ে এখন সারা বিশ্বে উত্তেজনা তুঙ্গে। ঠিক এমন সময় হঠাৎ করে যুক্তরাষ্ট্রকে ১০ কোটি ডলার, প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সৌদি আরব। বিশ্বে এখন গুঞ্জন উঠছে, খাসোগি হত্যা নিয়ে ডামাডোল থামাতে ডলার দিয়ে বিশ্ব ঠাণ্ডার নতুন কৌশল এঁটেছে সৌদি আরব।
জানা যায়, মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও যখন সৌদি আরব সফর করছিলেন, তখনই ওই অর্থ সৌদি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়েছে। বুধবার এ অর্থ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রকাশিত সংবাদে জানা যায, সিরিয়ায় আইএসবিরোধী লড়াইয়ে সহায়তার জন্য গত আগস্ট মাসে সৌদি আরব এ অর্থ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এ অর্থ দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। তবে জামাল খাসোগির বিষয়ে সৌদি বাদশাহ ও যুবরাজের সঙ্গে বৈঠক করতে মাইক পম্পেও সৌদি যাওয়ার পরপরই এ বিশাল অঙ্কের লেনদেন অনেকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। এ ছাড়া অর্থ স্থানান্তরের দিনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোল পাল্টে ফেলায় সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে সরাসরি দোষী বলা উচিত নয়।
অপর দিকে সৌদি আরবের রাজতন্ত্র বিরোধী সাংবাদিক জামাল খাশোগির নিখোঁজ হওয়ার পেছনে রাজা মোহাম্মদ বিন সালমান জড়িত নয় বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একটি সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, রাজা সালমানের মস্তিষ্কে অনুপ্রবেশ করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না কিন্তু তার সঙ্গে আলাপ করে তিনি বুঝতে পেরেছেন, দুর্বৃত্ত হত্যাকারীরা এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা শিগগিরই এ ঘটনার রহস্য উন্মোচন করে ফেলব, তবে রাজা সালমান এ ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি দৃঢ় ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছেন।
জামাল খাসোগিকে নিয়ে সৌদির সঙ্গে পম্পেও আলোচনা ও রিয়াদের এ অর্থ পরিশোধের মধ্যে কোনো যোগসাজশ নেই বলে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। আইএসবিরোধী জোটের মার্কিন কর্মকর্তা ব্রেট ম্যাকগার্ট বলেন, এই সময় অর্থপ্রাপ্তি কোনো কাকতালীয় ঘটনা না। এ সময়ই এ অর্থ পরিশোধের কথা ছিল। এর সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু বাদ সাধে সময় নিয়ে। এমন এক সময় এ অর্থ ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা গ্রহণ করেছে যখন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান খাসোগি মামলায় বৈশ্বিক চাপে একঘরে হয়ে পড়েছেন। সাংবাদিক জামাল খাসোগি ইস্যুতে গঠিত তুরস্ক ও সৌদি আরবের যৌথ তদন্ত কমিটি আসলে নামেমাত্র। ধোঁয়াশায় ঘেরা এক কসমেটিকের পর্দা। আর এ পর্দার পেছনে রাজনৈতিক লেনদেন নিয়ে দরকষাকষি করছে উভয় দেশ। বৃহস্পতিবার আলজাজিরায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ এমন সন্দেহের কথা বলেছেন।
মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক তুর্কি বিশেষজ্ঞ ফুলিয়া আতাকান বলেন, উভয় দেশই জানে যে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছে। তাই এ সমস্যা সমাধানের আগেই তারা নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ বজায় রেখে সমঝোতায় পৌঁছাতে চায়। তিনি বলেন, বিশ্বের মানুষকে কী জানানো হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এবং লোকচক্ষুর আড়ালে পরামর্শ করতে সবচেয়ে ভালো সমাধান এটি। এক্ষেত্রে উভয় দেশের একটা সমস্যা আছে। সেটি হল, তারা জানে না কিভাবে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। যৌথ তদন্ত কমিটির অজুহাতে তারা একে অন্যকে দোষারোপ এবং একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়ার আগে আলোচনার যথেষ্ট সময় পাবে।
খাশোগির নিখোঁজ হওয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বেশ সাড়া পড়েছে। ব্রিটেন, জার্মানি ও ফ্রান্স বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত চালানোর আহ্বান জানিয়েছে। তবে এত প্রতিক্রিয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রিয়াদ। গত রবিবার তারা জানায়, এ নিয়ে কোনো দেশ যদি তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়, তাহলে তারাও কঠোর পাল্টা ব্যবস্থা নেবে।