ডায়াবেটিস সম্পর্কে এই ১০ ভুল ধারণা

ডায়াবেটিস সম্পর্কে এই ১০ ভুল ধারণা

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: আজ ১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। ডায়াবেটিস সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে দিনটি পালিত হয়। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ, চিকিৎসা এবং যত্নের গুরুত্ব তুলে ধরে দিবসটি।

ডায়াবেটিস সম্পর্কে কিছু কল্পকাহিনী বা ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে আমাদের মধ্যে। সচেতনতার অংশ হিসেবে এগুলো শুধরে নিন আজই।

১। চিনি খেলে ডায়াবেটিস হয়
প্রচলিত এই ধারণাটি ভিত্তিহীন। গ্রিন লাইফ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তানজিনা হোসেন জানান, চিনি খেলে ডায়াবেটিস হয় কথাটির আসলে প্রত্যক্ষ কোনও ভিত্তি নেই। তবে পরোক্ষ কিছু সংযোগ রয়েছে। যেমন ওজন বেড়ে গেলে বা ওবেসিটি থাকলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। আর অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার, কোল্ড ড্রিংক, ডেসার্ট বা রিচ ফুড খেলে আমাদের ওজন বেড়ে যায়। সে হিসেবে চিনির সঙ্গে ডায়াবেটিসের ঝুঁকির একটি সম্পর্ক রয়েছে। তবে চিনি খেলেই যে ডায়াবেটিস হবে, এই কথাটির ভিত্তি নেই। অত্যধিক চিনি গ্রহণ রক্তের গ্লুকোজের মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে দায়াবতিএস হওয়ার কারণের মধ্যে রয়েছে জেনেটিক্স, জীবনধারা, স্থূলতা এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাব।

২। স্থূলতাই ডায়াবেটিসের মূল কারণ
অতিরিক্ত ওজন বা স্থূল হওয়া টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকির কারণ, তবে এটি একমাত্র কারণ নয়। জেনেটিক প্রবণতা, জীবনধারা এবং অন্যান্য কারণে ডায়াবেটিস হতে পারে। ওজন কম এমন ব্যক্তিদেরও হতে পারে ডায়াবেটিস। আবার স্থূল ব্যক্তিরাও থাকতে পারেন সুস্থ।

৩। কেবল বয়স্কদেরই ডায়াবেটিস হয়
এই ধারণার ভিত্তি নেই। আজকাল অনেক তরুণরাও ভুগছেন ডায়াবেটিসে। যদিও টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে এটি ক্রমবর্ধমানভাবে শিশু এবং অল্প বয়স্কদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারার ভুলেই এমনটি হচ্ছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

৪। ডায়াবেটিস রোগীরা কার্বোহাইড্রেট খেতে পারেন না
এই ধারণাটিও সঠিক নয়। কার্বোহাইড্রেট রক্তে শর্করাকে প্রভাবিত করে, তবে এটি সুষম খাদ্যের অপরিহার্য অংশ। পরিমিত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট খেলে কোনও ক্ষতি নেই। পুরো শস্য, ফল এবং শাকসবজির মতো স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট নির্বাচন করতে হবে।

৫। ইনসুলিন ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনার শেষ অবলম্বন
ইনসুলিন ডায়াবেটিসের একটি সাধারণ চিকিৎসা, এটি একেবারে শেষ পর্যায়ের চিকিৎসা নয়। তাই ইনসুলিন দেওয়া হচ্ছে মানেই রোগীর অবস্থা খুব জটিল, এমন ভাবার কারণ নেই। টাইপ ২ সহ ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন পর্যায়ে ইনসুলিন নিতে পারেন।

৬। ডায়াবেটিস হলে সবসময় ওষুধ খেতে হবে
এই ধারণা সঠিক নয়। ওষুধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে বহুমুখী পদ্ধতির অংশ তারা। ডায়েট, ব্যায়াম, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখলে সুস্থ থাকা সম্ভব।

৭। একবার ইনসুলিন নিলে সবসময়ই নিতে হবে
ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের কারোর কারোর রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইনসুলিন প্রয়োজন। এটি নির্ভরতা নয় বরং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা এবং জটিলতা প্রতিরোধের জন্য জরুরি। একবার ইনসুলিন ইনজেকশন গ্রহণ করলে আজীবন গ্রহণ করতে হবে, বিষয়টা এমন নয়।

৮। ডায়াবেটিসকে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই
ডায়াবেটিসকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। রোগটিকে গুরুত্ব না দিলে হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা, স্নায়ুর ক্ষতি এবং দৃষ্টি সমস্যার মতো গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

৯। ডায়াবেটিস হলে সবাইকে একই নিয়মে চলতে হবে
প্রতিটি ব্যক্তির ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা আলাদা। বয়স, ডায়াবেটিসের ধরন, জীবনযাত্রা এবং অন্যান্য পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে চিকিৎসক ঠিক করে দেবেন চিকিৎসা পদ্ধতি।

১০। ডায়াবেটিস মানেই আজীবনের অসুস্থতা
এটি একেবারেই ভুল ধারণা। খাদ্যতালিকাগত কিছু পরিবর্তন এবং জীবনধারার সামঞ্জস্য এনে পুরোপুরি সুস্থ অবস্থায় জীবনযাপন করতে পারেন ডায়াবেটিস রোগী। ডায়াবেটিসের সাথে জীবনযাপনের অর্থ জীবনের মান সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়া নয়। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিপূর্ণ ও সক্রিয় জীবনযাপন করা সম্ভব।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *