ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখবে যেসব খাবার

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখবে যেসব খাবার

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ডায়াবেটিস হলেই খাবারের তালিকায় কেউ নির্লিপ্তভাবে কাঁচি চালিয়ে বসে। মূলত ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়েই ডায়াবেটিস রোগীদের রসনাতৃপ্তে নিষেধাজ্ঞা চলে আসে। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমরা কিছু ভুল করে বসি।

রক্তে যেন কোনোমতেই ব্লাড সুগার বেড়ে না যায়, তারজন্যে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে দেয়াটাই অনেকের জন্যে ভয়ংকর হয়ে উঠে। বিশেষত উপমহাদেশের মানুষদের খাদ্য তালিকায় শর্করা ছাটাই হয়ে গেলে কিছুটা মুশকিল হয় বৈকি।

অথচ সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে এমন সমস্যা হওয়ার কথা না। মূলত সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে, ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার তালিকা খুব ছোট করার প্রয়োজন হয়না। বরং তারাও চাইলে পেটপুড়ে খেতে পারেন। শর্করা যেমন ভাত, রুটি, সিরিয়াল, মিষ্টি, পাস্তা এমনকি অনেক ফল খাওয়াও নিষেধ। আর এত ছোট খাদ্যতালিকা থেকে পেট ভরার মতো খাদ্যের অভাব কম।

যাহোক, আজকে আমরা মূলত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে যেসকল খাবার ভূমিকা রাখে তাদের নিয়ে আলোচনা করবো। নিশ্চিত থাকুন, আপনাকে মেপে মেপে খেতে হবেনা। এমনকি খাবার পরেও আপনার ক্ষুধা থেকে যাবেনা।

  • কাঁচা, কিংবা সেদ্ধ করে সবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন

ডায়াবেটিস রোগীদের পেট ভরে খাওয়া যাবেনা এটি একটি ভুল ধারণা। আমাদের দেশে নানা রকমের সবজি পাওয়া যায়। তারমধ্যে আলু কিংবা শর্করাযুক্ত সবজিগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো। কিন্তু টমেটো, শসা, বেগুন, মাশরুম এবং সবুজ সবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। অধিকাংশ সবজিই কাঁচা কিংবা সেদ্ধ করে খাওয়া যায়। আর যাদের বাসায় ওভেন আছে, তারা চাইলে কিছু সবজি রোস্ট করে নিতে পারেন। বিষয়টি অদ্ভুত বলে অনেকের মনে হতে পারে। কিন্তু আদপে অদ্ভুত না। আমাদের দেশে আগুনের আঁচ দিয়ে বেগুন কিংবা অনেক সবজি সেদ্ধ করে ভর্তা করা হয়। সেভাবেও পুড়িয়ে খেয়ে দেখতে পারেন। অথবা কিছু সবজি যেমন মাশরুম, ফুলকপি এগুলো সেদ্ধ করে খেয়ে দেখতে পারেন।

ওভেনে রোস্ট করার ক্ষেত্রে সচরাচর অলিভ অয়েল ব্যবহার করা ভালো। অলিভ অয়েল এবং খাদ্যপযোগী নারিকেল তেল দিয়েও খাবার রান্না করা যায়। তবে এই তেলগুলোর দাম বেশি বলেই অনেকে কেনার সাহস পায়না।

  • ফাইবারে পরিপূর্ণ খাবার খাবেন

যেসকল ফল, সবজিতে প্রচুর আঁশ আছে সেসকল ফসল অনেকটাই শর্করার অভাব মিটিয়ে দিতে পারে। বাদাম, মটরদানা, বা সিমজাতীয় খাবার, ভুট্টাতে প্রচুর ফাইবার থাকে। তাছাড়া বাঙ্গি, তরমুজ জাতীয় ফলগুলোও এক্ষেত্রে উপকারী হয়। আঁশ জাতীয় খাবার পেটে অনেকক্ষণ থাকে এবং পরিপাকতন্ত্রও সুস্থ রাখে। এমনকি মিষ্টি আলু রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই মিষ্টি আলু খেলে পেট ও ভরবে, এবং ডায়াবেটিস বাড়ার সম্ভাবনাও কমে যাবে।

  • চিনি ছাড়া চা খাওয়ার অভ্যাস

চায়ে প্রচুর এন্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। বিশেষত ব্ল্যাক টি এবং গ্রিন টি বেশ উপকারী এক্ষেত্রে। আমাদের দেশে গ্রিন টি এখন বেশ সুলভ হয়ে উঠেছে। এবং বাজারে ব্ল্যাক টি বিভিন্ন মানের থাকায় এখনো তেমন সুলভ হয়নি। তবে সাধারণ ব্লেন্ড চা দিয়ে রঙ চা বানিয়ে সকাল আর রাতে খেতে পারলে শরীর চাঙা থাকবে।

  • সামান্য একটু চর্বি জাতীয় খাবার

ডায়াবেটিস রোগীদের যে চর্বি জাতীয় খাবার খেতে নেই এমন কোনো বাধা নেই। তবে অবশ্যই অতিরিক্ত এবং ক্ষতিকর চর্বি শরীরে প্রবেশ করানো যাবেনা। অলিভ অয়েল দিয়ে কিছু সালাদ কিংবা হালকা রোস্ট করা লিন মিট খাওয়া যেতে পারে। এতে আপনার কোনো ক্ষতি হবে না।

  • প্রোটিনেও মানা করছি না

ডায়াবেটিস রোগীদের প্রোটিনেও মানা নেই। তবে আপনি কেমন মাংস খাচ্ছেন সেটাই মুখ্য বিষয়। লাল মাংস যেমন গরুর মাংস একেবারেই খাওয়া চলবে না। তবে লিন মিট যেমন মুরগীর মাংস, কোয়েলের মাংস এমনকি কবুতরের মাংস খাওয়া গেলে ভালো হয়। বাজারে পিনাট বাটার পাওয়া যায়। তবে বাদাম খেতে পারলে ডায়াবেটিস রোগীরাও প্রোটিন পাবেন।

  • সামান্য একটু শরবতও খেয়ে দেখতে পারেন

মাঝেমধ্যে আপনারো শরবত খাওয়ার ইচ্ছে হতে পারে। তবে সচরাচর সব ফলের শরবত খাওয়া সম্ভব হয়না। এক্ষেত্রে অনেকের অপছন্দ হলেও বাঙ্গির শরবত কিংবা লেবু চিপে শরবত করা গেলে ভালো হয়। অবশ্যই চিনি মেশানো যাবেনা। পানি সবসময়ই শরীরের জন্য উপকারি। কিন্তু লেবু, বিট লবণের ফ্লেভারে আপনার জ্যুস খাওয়ার ইচ্ছেটাও পূরণ হতে পারে।

উপমহাদেশের বা অনেক শর্করা প্রধান খাবারের দেশে – ডায়াবেটিস রোগীদের সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। কিন্তু সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুললে ঘন ঘন ক্ষুধা লাগার প্রবণতা কমানো যায় এমনকি তৃপ্তি মিটিয়েও খাওয়া যায়। তবে হ্যাঁ, সেখানে ভাতের জায়গায় সবুজ সবজি আর আঁশজাতীয় খাবার থাকবে। কি আর করার! এভাবেই এখন স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হবে।

সুত্র: অনহেলথ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *