ড. কামালের বিরুদ্ধে পুলিশ ও সিইসি নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগ

ড. কামালের বিরুদ্ধে পুলিশ ও সিইসি নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগ

পাথেয় রিপোর্ট : জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠকে পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর এ মন্তব্য করেছেন তিনি। এছাড়াও তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাকে (সিইসি) নিয়েও অমার্জিত মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর জের ধরে সিইসিও ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে এ অশালীন আচরণের অভিযোগ ওঠে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে তুমুল উত্তাপ ছড়িয়েছে। একপর্যায়ে সভাশেষ না করেই সংক্ষুব্ধ হয়ে বেরিয়ে আসেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনসহ অন্যরা। এসময় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় দু’পক্ষেই।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ড. কামাল হোসেন। এ সময় তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশি হামলা ও হয়রানির অভিযোগ তোলেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘সারাদেশে পুলিশ ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের সঙ্গে জানোয়ার ও লাঠিয়াল বাহিনীর মতো আচরণ করছে। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের গুণ্ডা বাহিনী আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করছে। আমাদের নেতাকর্মীদের কোথাও দাঁড়াতে দিচ্ছে না।’ সিইসিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনি ইচ্ছা করলে লাঠিয়াল বাহিনীর মতো আচরণকারী পুলিশ বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আপনার এই লাঠিয়াল পুলিশ বাহিনী আমাদের মিটিং-মিছিল কিছুই করতে দিচ্ছে না। এমনকি বেলা দুইটার পর মাইক ব্যবহারের জন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও তার জোট মিত্ররা নিয়ম-কানুন না মেনে পুলিশের সহায়তায় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।’
সূত্র জানায়, এর জবাবে সিইসি ক্ষুব্ধ স্বরে বলেন, ‘সরকারের একটি বাহিনীকে নিয়ে আপনি এভাবে বলতে পারেন না। নিজেকে আপনি কী মনে করেন?’ তিনি আরও বলেন, ‘কোথায় আপনাদের প্রার্থীদের দাঁড়াতে দিচ্ছে না? কারা দাঁড়াতে দিচ্ছে না? আমাকে দেখান, নাম বলেন।’

সূত্র দাবি করেছে, এ পর্যায়ে ড. কামাল হোসেন ও সিইসির মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়।

সূত্র জানায়, এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান সিইসিকে বলেন, ‘নির্বাচনের কোনও পরিবেশ যদি তৈরি করতে না পারেন, তাহলে বলে দেন, আমরা আজকেই প্রেস ক্লাবে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেবো।’
এ সময় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সবাই বক্তব্য দিতে শুরু করেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম তাদের সামলানোর চেষ্টা করেন। এরপর ডা. কামাল সিইসি’র নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর অন্তত তিন দফায় কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ড. কামাল হোসেন এবং প্রতিবারই বৈঠকের পর কামাল হোসেন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু মঙ্গলবার ছিল ব্যতিক্রম। এ বৈঠক থেকে বেরিয়ে সরাসরি তিনি চলে যান। পরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বিফ্রিং করেন।

ব্রিফিংয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, ‘সিইসির আচরণ ভদ্রোচিত ছিল না। এ জন্য আমরা বৈঠক বয়কট করেছি।’সরকার ও নির্বাচন কমিশন যৌথভাবে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে এবং নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। ইসি সরকারের পক্ষ হয়ে গেছে। সিইসির আচরণ ভদ্রজনিত ছিল না। এ জন্য আমরা সভা বয়কট করেছি। তবে আমরা নির্বাচনে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেব না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ‘সিইসি কোনও ভদ্রতাসূচক আচরণ করেননি। আমরা পুলিশের দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার কথা জানালে তিনি কোনও সহানুভূতি না জানিয়ে হঠাৎ করেই পুলিশের পক্ষেই অবস্থান নেন। তাই আমরা বৈঠক থেকে চলে এসেছি।’

ঐক্যফন্টের প্রতিনিধি দলের সদস্য ও গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধূরী সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন তার বক্তব্যে সিইসির উদ্দেশ্যে বলেন, সিইসি বর্তমানে প্রধান বিচারপতির চেয়েও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারেন। আপনি ইচ্ছা করলে জানোয়ার-লাঠিয়াল পুলিশ বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আপনার এই লাঠিয়াল পুলিশ বাহিনী আমাদের মিটিং-মিছিল কিছুই করতে দিচ্ছে না। এমনকি বেলা ২টার পর মাইক ব্যবহারের জন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ তার জোটেরা নিয়মকানুন না মেনে পুলিশের সহায়তায় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘সিইসি আজকে অন্তত সংযত ব্যবহার করলেও পারতেন। সিইসি কামাল হোসেনকে অ্যাটাক করে কথা বলেছেন। সিইসি আউটবার্স্ট করেছেন।’
তিনি কামাল হোসেনের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনি পুলিশ লাঠিয়াল জানোয়ারের মতো ব্যবহার করছে বলে বলছেন, পুলিশকে ডিফেন্ড করার জন্য যা বলতে পারেন না।’
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধূরী আরও অভিযোগ করেন, ‘‘প্রত্যেকটা কথায় সিইসি বলেন, আমাকে নিয়ে দেখান কোথায় পুলিশ বাধা দিচ্ছে? এখন কী করে দেখাবো? আমরা বলছি লোক পাঠান। উনি বলেন, আমাকে নিয়া চলেন। উনি শুরুই করলেন পুলিশ মোটেই লাঠিয়াল না।’ পুলিশকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে হি ওয়াজ রিয়েলি অ্যাগ্রেসিভ। কামাল হোসেনকে বলেছেন, ‘আপনি নিজেকে কী মনে করেন?’ কামাল হোসেনকে অ্যাটাক করায় আমরা খুব আপসেট।’’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *