পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ঢাকা উড়ালসড়ক দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পারবে রোববার সকাল ছয়টা থেকে। তার আগে শনিবার এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিভিন্ন জায়গা থেকে এই উড়ালসড়কে ওঠা যাবে এবং নামা যাবে। যানজট পেরিয়ে একবার উঠতে পারলে খুব কম সময়ে পৌঁছে যাওয়া যাবে উড়ালসড়কের আরেক প্রান্তে।
যাঁরা ফার্মগেট, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, কাঁঠালবাগান, গ্রিনরোড অথবা শাহবাগ, সেগুনবাগিচা ও পুরান ঢাকা থেকে এসে উড়ালসড়কে উঠতে চান, তাঁদের যেতে হবে বিজয় সরণি ওভারপাস অথবা তেজগাঁও এলাকায়।
বিজয় সরণি হয়ে র্যাংগস ভবন ভেঙে যে ওভারপাসটি তৈরি হয়েছে, সেটিতে উঠে তেজগাঁওয়ে যাওয়ার আগেই উড়ালসড়কের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। তেজগাঁও থেকে বিজয় সরণির দিকে আসতে ওভারপাসে আরেকটি সংযোগ রয়েছে ওঠার জন্য।
রাজধানীর দক্ষিণ, পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বাংশের মানুষের জন্য উড়ালসড়কে ওঠার এই পথটিই সহজ। তবে যাঁরা বনানী যেতে পারবেন, তাঁরা বনানী রেলস্টেশনের সামনে দিয়ে উড়ালসড়কে উঠতে পারবেন।
উত্তর দিক থেকে এসে নামার জন্য সহজ পথ ফার্মগেটের ইন্দিরা রোড। মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, নিউমার্কেটগামী যানবাহনের ইন্দিরা রোডে নামাই সুবিধাজনক।
ঢাকা উড়ালসড়কে ওঠানামার আরও পথ রয়েছে।
দক্ষিণ অভিমুখী যানবাহন ওঠার স্থান
১. হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা।
২. প্রগতি সরণি এবং বিমানবন্দর সড়কের আর্মি গলফ ক্লাব।
দক্ষিণ অভিমুখী যানবাহন নামার স্থান
১. বনানী কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ।
২. মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে।
৩. ফার্মগেট প্রান্তে ইন্দিরা রোডের পাশে।
উত্তর অভিমুখী যানবাহন ওঠার স্থান
১. বিজয় সরণি ওভারপাসের উত্তর ও দক্ষিণ লেন।
২. বনানী রেলস্টেশনের সামনে।
উত্তর অভিমুখী যানবাহন নামার স্থান
১. মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে।
২. বনানী কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউর সামনে বিমানবন্দর সড়ক।
৩. কুড়িল বিশ্বরোড
৪. বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনালের সামনে।
সেতু বিভাগের এক গণবিজ্ঞপ্তিতে আজ শুক্রবার জানানো হয়, ঢাকা উড়ালসড়কে দুই ও তিন চাকার যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। তাই মোটরসাইকেল বা অটোরিকশা নিয়ে উড়ালসড়কে ওঠার চিন্তা করবেন না। গাড়ি নিয়ে গিয়ে উড়ালসড়কে দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পথচারীরা উড়ালসড়কে উঠতে ও চলাচল করতে পারবেন না।
সেতু বিভাগ বলছে, মূল উড়ালসড়কে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিতে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। আর ওঠা-নামার স্থানে (র্যাম্প) সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার।
টোল কত
চলাচল করতে যানবাহনকে টোল দিতে হবে। টোল হার যানবাহনের শ্রেণিভেদে ভিন্ন।
শ্রেণি-১: কার, ট্যাক্সি, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল, মাইক্রোবাস (১৬ সিটের কম) এবং হালকা ট্রাক (৩ টনের কম)—টোল ৮০ টাকা।
শ্রেণি-২: মাঝারি ট্রাক (৬ চাকা পর্যন্ত)—টোল ৩২০ টাকা।
শ্রেণি-৩: ট্রাক (৬ চাকার বেশি)—টোল ৪০০ টাকা।
শ্রেণি-৪: সব ধরনের বাস (১৬ সিট বা তার বেশি)—টোল ১৬০ টাকা।
ঢাকা উড়ালসড়কের (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে কাওলা থেকে রেললাইন ধরে তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর হয়ে যাত্রাবাড়ীর কাছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে গিয়ে শেষ হবে এই উড়ালসড়ক।
শনিবার কাওলা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত অংশে চলাচল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগের (পিপিপি) ভিত্তিতে ঢাকার দ্রুতগতির উড়ালসড়কের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেতু বিভাগ।
ঢাকা উড়ালসড়ক প্রকল্পটি দুই ভাগে বিভক্ত। মূল নির্মাণকাজ ও সহযোগী কাজ। মূল নির্মাণকাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা সরকার ব্যয় করছে। বাকিটা বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান খরচ করছে।
এর বাইরে জমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও পরামর্শকদের পেছনে ব্যয়ে আলাদা একটি প্রকল্প আছে। এর পুরো অর্থই ব্যয় করছে সরকার। বর্তমানে এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে দুটি প্রকল্পে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা।
২০০৯ সালে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। ২০১১ সালে নির্মাণের চুক্তি হয়। নির্মাণকাল ধরা ছিল সাড়ে তিন বছর। তবে সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়নি।