২০শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ , ২৭শে শাবান, ১৪৪৪ হিজরি

তওবা করলে কি কাজা নামাজ মাফ হয়?

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : শয়তান, নফসের ধোঁকায় পড়ে মানুষ প্রতিনিয়ত গুনাহ করে ফেলে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব (রহ.) হজরত আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন ‍যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জান্নাতকে বেষ্টন করে রাখা হয়েছে অপছন্দনীয় বস্তু দ্বারা এবং জাহান্নামকে বেষ্টন করে রাখা হয়েছে কামনা-বাসনা বস্তু দ্বারা। -(মুসলিম, ৬৮৬৯)

তবে বান্দা গুনাহ পাহাড়সম হলেও আল্লাহ তায়ালা তওবার মাধ্যমে তা ক্ষমা করে দেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন– ‘সেই মহান সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন! যদি তোমরা পাপ না কর, আল্লাহ তোমাদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে (তোমাদের পরিবর্তে) এমন এক জাতি আনয়ন করবেন, যারা পাপ করবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করবে। আর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। -(মুসলিম, ২৭৪৮)

আল্লাহ তায়ালা তওবাকারী বান্দাকে ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং তাদেরও ভালোবাসেন যারা পবিত্র থাকে।’ -(সুরা : বাকারা, আয়াত, ২২২)

অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গুনাহসমূহ নেকি দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন।’ -(সুরা, ফুরকান, আয়াত, ৭০)

তবে আল্লাহ তায়ালা সব গুনাহ মাফ করলেও অন্যের ওপর জুলুম ও অন্যের হক মাফ করবেন না। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের মালসামানা বা অন্য কোনো বস্তুর ক্ষেত্রে জুলুম করে, সে যেন আজই তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেয়, সেদিন আসার পূর্বে যেদিন তার কোনো দিনার বা দিরহাম থাকবে না। সেদিন তার কোনো সৎকর্ম থাকলে তার জুলুমের পরিমাণ তার নিকট হতে নেওয়া হবে আর তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। -(বুখারি : ২৪৪৯)

হাদিসে যেহেতু অন্যের হক ছাড়া বাকি গুনাহগুলো তওবার মাধ্যমে মাফ করার কথা এসেছে, তাহলে কারো জীবনের কাজা নামাজও কি তওবার মাধ্যমে মাফ হবে নাকি তওবা করলেও কাজা নামাজ পড়তে হবে?-এমন প্রশ্ন করতে শোনা যায় অনেককে।

এমন প্রশ্নের প্রেক্ষিতে ইসলামী আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদেরা বলেন, ইসলামি শরিয়তে কিছু গুনাহের কাজ এমন রয়েছে, যেগুলোর জন্য শুধু তওবাই যথেষ্ট। আর কিছু কাজ এমন রয়েছে, যেগুলোর জন্য শুধু তওবাই যথেষ্ট নয়। বরং তওবার পাশাপাশি সেই কাজটির কাজাও আদায় করতে হয়। নামাজ হল এ সকল কাজের অন্তর্ভুক্ত।

নামাজ কাজা হলে শুধু তওবার দ্বারা তা মাফ হয় না। এর জন্য সেই নামাজের কাজাও আদায় করতে হয়। এ কারণেই হাদিসের গ্রন্থগুলো ঘাটলে দেখা যায়, রাসূল (সা.) নামাজ কাজা হলে তা আদায় করে নিতেন ও অন্যকে বলতেন। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন,

مَنْ ‌نَسِيَ ‌صَلَاةً ‌فَلْيُصَلِّهَا ‌إِذَا ‌ذَكَرَهَا، لَا كَفَّارَةَ لَهَا إِلَّا ذَلِكَ

‘কেউ যদি নামাজের কথা ভুলে যায়, সে যেন স্মরণ হওয়া মাত্রই তা আদায় করে নেয়। কেননা, তার কাফফারা একমাত্র সেই নামাজই।’ -(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬৮৪)

সুতরাং তওবার দ্বারা ছুটে যাওয়া নামাজ মাফ হবে না। বরং সেগুলোর কাজা আদায় করা আবশ্যক। -(সহিহ বুখারি ১/৮৩; আল ইসতিযকার ১/৩০২)

শেয়ার করুন


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ১৯৮৬ - ২০২২ মাসিক পাথেয় (রেজিঃ ডি.এ. ৬৭৫) | patheo24.com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com