রাজধানী ঢাকার আফতাব নগরের আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া ইদারাতুল উলূম মাদরাসা মসজিদে তিন দিন (১-৪ রমজান) নফল ই’তিকাফে বসেছিলেন জানেশীনে ফিদায়ে মিল্লাত, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপিত, ভারত উপমহাদেশের আধ্যাত্মিক রাহবার, মাওলানা সায়্যিদ মাহমুদ আসআদ মাদানী।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) চতুর্থ রমজানে তারাবিহর পর নফল ইতিকাফরত আলেম-উলামা ও সাধারণ মুসল্লিদের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান পেশ করেন তিনি। পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর পাঠকদের জন্য পূর্ণ বয়ানের বঙ্গানুবাদ তুলে ধরা হলো–
প্রিয় ভাই ও সম্মানিত মুরব্বিয়ানে কেরাম,
তওবা সমস্ত কাজের ভিত্তমূল
আল্লাহ তাআলা মেহেরবানী করে মানবজাতিকে রমযান মাস দান করেছেন। রমযান মাস সবকিছুকে সংশোধন করার সুবর্ণ সময়। নষ্ট হওয়া যে কোনো বিষয় শোধরাতে তওবার চেয়ে উত্তম কিছু নেই। তওবা সমস্ত আমলের ভিত্তি বা ফাউন্ডেশনের মতো। কোনো বিল্ডিং বানাতে গেলে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিতে হয় বিল্ডিংয়ের ফাউন্ডেশনের দিকে। যেই বিল্ডিংয়ের ফাউন্ডেশন ত্রুটিযুক্ত হয়, সেই বিল্ডিং পুরোটাই ত্রুটিপূর্ণ থাকে।
তওবার মোক্ষম সময় রমাযান
আমরা মানুষ। মানুষ হওয়ার কারণে মানুষের সব ভালো-মন্দ স্বভাব আমাদের মাঝে বিদ্যমান। তারমধ্যে একটি সৃষ্টিগত বেশিষ্ট্য হলো ভুল করা। গুনাহকে দুইভাবে ঠিক করা যায়। গুনাহ ছোটো হলে নেকির মাধ্যমে তা মিটে যায়। আপনি যদি ছোটো গুনাহ করেন, একইসাথে নেক কাজও করেন, তাহলে আপনার গুনাহ মিটে যাবে। কিন্তু আপনি যদি বড় কোনো গুনাহ করে ফেলেন, তাহলে আপনি রমজানের এই সুবর্ণ সময়ের ফায়দা লুফে নিন এবং দৃঢ়ভাবে তওবা করুন।
তওবা কাকে বলে?
প্রতিনিয়ত তওবা করতে থাকা অতি মহৎ ও মহান কাজ। অনেকেই মুখে মুখে তওবা করে। এই তওবা তাদের কোনো কাজে আসে না। তওবা হলো – ‘ভবিষ্যতে এই গুনাহ আর করবো না’ এই প্রতিজ্ঞা করার নাম। শুধু মুখে মুখে তওবা করলেই হবে না, ভবিষ্যতে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞাও করতে হবে।
সহজলভ্য কিন্তু ভয়াবহ গুনাহ হলো গীবত
এমন অনেক গুনাহ আছে যেগুলোকে আমরা গুনাহ বলেই মনে করি না। গীবত তেমনি একটি গুনাহ। শুধু গীবত করলেই গুনাহ হয় না, গীবত শোনাও গুনাহের কারণ। আপনাদের ভালো করে বুঝতে হবে, গীবত কাকে বলে?
ধরুন, রমজান মাসে আপনি কোনো মুসলমানকে মদ খেতে দেখলেন। পরে আপনি কাউকে সেই মুসলমানের মদ খাওয়ার বিষয়টি বললেন, যা আপনি নিজে দেখেছেন, এটাই গীবত। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা গীবতের ভয়াবহতা বোঝানোর জন্য অন্য কোনো গুনাহের ক্ষেত্রে এতো মারাত্মক উদাহরণ পেশ করেননি, যেমনটা গীবতের ক্ষেত্রে করেছেন। আপনি তো সত্য কথাই বলছেন। হ্যাঁ, এক্ষেত্রে সত্য কথা বলাই গীবত। আপনার দায়িত্ব হলো, এমন কিছু দেখলে আপনার মাঝেই সেটাকে গোপন করে রাখবেন। পারলে ভুলে যাবেন।
গুনাহের কাজে বাধা প্রদানের কৌশল
প্রত্যেক মুমিন হলো বিল্ডিংয়ের ইটের মতো। মুমিন একে অপরের সাথে একত্রে থাকলেই ঈমান মজবুত থাকবে। কীভাবে একত্রে থাকবেন? যদি গীবতের ধারা চলতে থাকে, তাহলে ঈমানের ভিত্তি মজবুত থাকবে?
আপনি যদি কাউকে গুনাহ করতে দেখেন, আপনার কর্তব্য হলো প্রথমে তাকে কিছু হাদিয়া দিন। তার সাথে ভালোবাসার বন্ধন তৈরী করুন। তারপর আপনি তাকে বলতে পারেন, আমার মনে হয় আপনি ভুলের মধ্যে আছেন, এই গুনাহ ছেড়ে দেন। কেবল তাকেই আপনি এই কথা বলতে পারেন, আর সেটা আবার তার সাথে সুসম্পর্ক তৈরী হবার পর। এর আগে তাকে নিষেধ করতে পারবেন না। তার সাথে হৃদ্যতার খাতিরে আপনি তাকে ভালো উপদেশ দিতে পারেন। তখন তার উপর এই উপদেশের প্রভাব পড়বে। নসীহের প্রভাব তার উপরই পড়ে, যে নসীহত শুনতে চায়। অন্যথায় সে আপনার বিরুদ্ধে চলে যাবে। অন্যায় অভিযোগের দায়ে আপনার সাথে তর্ক করবে।
গুনাহ ইবাদাতের স্বাদকে বিনষ্ট করে
আমরা যেসব গুনাহকে গুনাহ মনে করি না, সেসব গুনাহ থেকে ভালো করে তওবা করতে হবে। সেসব গুনাহ থেকে সতর্ক থাকতে হবে। গুনাহের পাশাপাশি আপনি যতোই ইবাদাত করেন না কেন, ইবাদাতের কিছু ফল পাবেন সত্য। কিন্তু পরিপূর্ণ ফল পাবেন না।
আমাকে একজন বলেছেন, তিনি জিকির করতে পারেন না। আমি বললাম, আপনি নিজেই কারণ খুঁজে বের করুন কেন জিকির করতে পারেন না। আপনার ভেতরগত কোনো কারণ আমি তো জানতে পারবো না। আমি তো কেবল বলতে পারবো এই এই কাজ থেকে বেঁচে থাকতে।
ধরুন, আপনার পেটে সমস্যা হয়েছে। আপনি অনেক দামি ওষুধ খাচ্ছেন, কিন্তু মরিচও খাচ্ছেন। আপনার ফায়দা হবে? হবে না। ভালো হতে হলে ওষুধও খেতে হবে, আবার মরিচ খাওয়াও বন্ধ করতে হবে। মরিচ খাওয়া বন্ধ করার মাঝে যে লাভ আছে তা ওষুধ খাওয়ার মাঝে নেই।
জিকির এজন্য দেয়া হয় না যে, জিকির করে আপনি আল্লাহওয়ালা হয়ে যাবেন। আপনি যেন গুনাহ করা ছেড়ে দেন সেজন্য জিকির করানো হয়। আপনি গুনাহ বন্ধ করার দিকে কোনো নজরই দিচ্ছেন না। আপনি কীভাবে জিকিরের ফায়দা পাবেন?
গুনাহ থেকে বাঁচা নেক আমল করার চাইতে উত্তম
আপনারা কি আমার কথা বুঝতে পারছেন? গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা নেক কাজ করার চেয়ে বেশি জরুরী। নেক কাজ করা জরুরী বিষয়। এমনকি যেসব ফরজ বিধান দেয়া হয়েছে সেগুলো পালন করা তো একদম আবশ্যক। আমার কথার উদ্দেশ্য এই নয় যে, আপনাদের আর নেক কাজ করতে হবে না। আমার কথা উদ্দেশ্য হলো, নেক কাজ করার সাথে সাথে আপনাকে গুনাহের কাজ থেকেও বাঁচতে হবে।
কীভাবে গুনাহ থেকে বাঁচবো?
আপনি যদি গুনাহ থেকে বাঁচতে চান, তাহলে আপনি আপনার গুনাহের লিস্ট তৈরী করুন। এটাকেই বলে ‘মারেফাতে নাফস’। আপনি নিজেকে জানুন, আপনি কে? আপনি কী রকম? আপনি কীভাবে চিন্তা করেন? দেখুন, আপনি আপনার ভাই সম্পর্কে কী ভাবেন? আপন বোন সম্পর্কে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কেমন? আপনার চাচা, ভাতিজাসহ পরিবার-পরিজনদের ব্যাপারে কী মনে মনে ধারণা করেন সেটা লক্ষ্য করুন। যদি সবার ব্যাপারে আপনার চিন্তা ভালো হয়ে থাকে, তাহলে আপনার অন্তর পবিত্র আছে। অন্তর পবিত্র থাকলে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছার রাস্তা সহজ হয়ে যাবে আপনার জন্য।
আর আপনি আপনার অন্তরে পরিবার-পরিজন, প্রিয়জনের ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ করেন- আপনার জন্য এরচেয়ে অশান্তির আর কিছুই হতে পারে না।
ক্ষমা শ্রেষ্ঠ গুণ
আমাকে একজন বললো, আমি অমুককে মাফ করবো না। আমি বললাম, কেন মাফ করবে না? সে বললো, কারণ সে আমার উপর অনেক বড় জুলুম করেছে। আমি বললাম, মাফ না করলে কী হবে? সে বললো, আল্লাহর কাছ থেকে বদলা পাবো। আমি বললাম, কতো বদলা পাবে? যতটুকু জুলুম করেছে ততটুকু বদলা পাবে, তাই না? আল্লাহ তাআলা হিসাব বরাবর করে দিবেন, এ-ই তো? কিন্তু তুমি যদি তাকে মাফ করো, বিশ্বাস করো মাফ না করে যে পরিমাণ বদলা পেতে মাফ করে তারচেয়েও হাজারগুণ বেশি বদলা পাবে। আল্লাহ তো তাঁর হিসেবেই দিবেন। এখন তুমি কি ফায়দা চাও নাকি ক্ষতি চাও?
আপনারা কী চান? যদি আল্লাহর কাছ থেকে জুলুমের বদলা নিতে চান, তাহলে ভালো কথা। এখানে আরেকটা কথা বলে রাখি, যারা মাফ করে না তাদের অন্তরে গিঁট লেগে যায়। এই গিঁট নিয়েই তাকে চলতে হয়।
যদি অন্তর পরিস্কার রাখতে চান, যদি মেধাকে শতভাগ ঠিক রাখতে চান, তাহলে আপনি মাফ করতে শিখুন। আপনি দুনিয়াতেই এর উত্তম পুরস্কার পাবেন। যদি আপনি মাফ করতে না পারেন, তাহলে এই রোগই আপনার এক ধরণের শাস্তি। আপনার সাজা এখন থেকেই শুরু হয়ে গেছে। তার জুলুমের সাজা তো পরকালে হবে। কিন্তু আপনার সাজা এখনি শুরু হয়ে গেছে।
ভাই ভাইয়ের সাথে বেশি জুলুম করে অথবা এ-ও বলতে পারেন, ভাইয়ের ছোটো কথাও অন্তরে বেশি কষ্ট দেয়। ভাই নিজেও বুঝতে পারে না তার কথায় ভাইয়ের এতো বেশি খারাপ লেগে যাবে।
আমাদের অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, অন্যের জুতাপেটা খাবো, তবু ভাইকে মাফ করতে রাজি না। ভাইয়ের কথা সহ্য হয় না।
আপনি যখন মাফ করবেন, আপনার অন্তর পরিস্কার হয়ে যাবে। আর জিকির তো করা হয় অন্তর পরিস্কারের জন্য। কিন্তু আপনি যদি আপনার ভাইয়ের প্রতি, প্রতিবেশির প্রতি, কোনো মুসলমানের প্রতি অন্তরে বিদ্বেষ পোষণ করে ঘুরে বেড়ান, তাহলে আপনার অন্তর পরিস্কার কীভাবে হবে? আপনার দিল সাফ করার কাজ তো আপনাকেই করতে হবে। আপনার পেশাব-পায়খানার কাজ তো আপনাকেই করতে হয়, তাই না? বাইরের কেউ কি আপনার হয়ে এ কাজ করে দিবে? তাই দিল সাফ করার কাজটাও আপনাকেই করতে হবে।
কীভাবে অন্তর পরিচ্ছন্ন করবো?
ভেতরে দুশমনি রেখে অন্তর পরিচ্ছন্ন করবেন নাকি দূর করে করবেন? আমাদের কাছে মাফ করা ব্যতিত কোনো অপশন নেই। আল্লাহ তাআলা আপনার অন্তর যেখানে রাখতে চান, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেখানে আপনার অন্তরকে রাখতে চান, অন্তরকে সে পর্যায়ে নিতে আপনাকে মাফ করতে হবে। বারবার আপনাকে মাফ করতে হবে। শুধু মাফ করলেই হবে না। উত্তম আচরণ করতে হবে। হাদিয়া দিতে হবে। তাকে খুশি করতে হবে। সন্তুষ্ট করতে হবে। এমনিক মাফ করে এ-ও বলা যাবে না – আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আপনি মাফ করার কে? আগে আল্লাহর কাছে নিজের জন্য মাফ চান। আপনি কোনোভাবেই একথা কল্পনা করতে পারবেন না যে, আপনি ক্ষমা করে অনুগ্রহ করেছেন।
ক্ষমার উপকারিতা
মাফ করলে কী ফায়দা হবে? প্রথম ফায়দা আপনার অন্তর পরিস্কার হয়ে যাবে। অন্তর পরিস্কার হয়ে গেলে অন্তরের একটি রোগ থেকে আপনি মুক্তি পেয়ে গেলেন। শারীরিক রোগ থেকেও আপনি মুক্তি পেয়ে গেলেন। ৯০ ভাগ শারিরীক রোগ অন্তর ও মস্তিস্কের কারণে হয়ে থাকে। আপনার চিন্তা করার ধরণের সাথে রোগ-বিমারির সম্পর্ক।
জিকিরকারীদের দৃষ্টিকোণ থেকে বলছি, যদি আপনার স্বভাব, আচার-আচরণ ঠিক থাকে, তাহলে অনেক জিনিস ঠিক হয়ে গেল। মাফ করলে রাগ আসবেই না। অন্তরে গিঁট থাকলে রাগ আসে। আপনি অন্তরের গিঁট খুলুন। রাগ কম আসবে। কিছু রাগ তো স্বাভাবিকভাবেই আসবে, এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু ঘৃণামিশ্রিত রাগ করা যাবে না।
কখনো রাগ দেখাবো না
রাগ তিন ধরণের। এক. দ্রুত আসে, বিলম্বে যায়। দুই. বিলম্বে আসে, বিলম্বে যায়। তিন. দ্রুত আসে, দ্রুত যায়। সবচে নিকৃষ্ট প্রকার হলো; দ্রুত আসে, বিলম্বে যায়। আমাদের রাগ এই তিন প্রকারের মধ্যেই হবে। আপনি কোন শ্রেণির এ সিদ্ধান্ত আপনিই নিবেন। অন্য কেউ নিবে না।
সবচে কাছের মানুষের প্রতি সবচে বেশি রাগ আসে। পুরুষের কাছে সবচে কাছের মানুষ হলো স্ত্রী। তার উপরই পুরুষের সবচে বেশি রাগ আসে। তুচ্ছ বিষয়ও খারাপ লেগে যায়। অন্তরে কষ্ট পায়। একজন পুরুষের জন্য দৈনিক ৭ হাজার শব্দ বলাই যথেষ্ট। জানেন কি মহিলার জন্য কতো শব্দ? ২১ হাজার। এতো বেশি বললে তো বুঝে শুনে বলবে না এটাই স্বাভাবিক। মহিলাদের স্বভাবেই আল্লাহ তাআলা ২১ হাজার শব্দ নির্ধারন করেছেন। আল্লাহ তাআলা মহিলাদের বক্তা আর পুরুষদের শ্রোতা বানিয়েছেন। তাই শোনার অভ্যাস গড়ুন। ঘরে প্রবেশের পূর্বেই মনে মনে স্থীর করে নিন ঝাড়ি খাবেন। ঝগড়া এখানেই শেষ, তাই না?
সার কথা
এখন পর্যন্ত তিন বিষয়ে আলোচনা হলো।
১
তওবা করা। তওবা মুখে মুখে বলার নাম নয়। তওবার জন্য মুখে বলার সাথে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাও করতে হয়।
২
গীবত থেকে বেঁচে থাকা। প্রথম দিন থেকেই বলছি, আপনি নিজেকে চিনুন, জানুন। কোথায় আপনার ভুল হচ্ছে খুঁজে বের করুন। এটাও দিলের মারাত্মক রোগ। আরও অনেক রোগ আছে। গীবত প্রচার করা দিলের ভয়ঙ্কর রোগ। শোনা কথা তো কাউকে বলাই যাবে না। নিজ চোখে দেখেছেন তবুও বলতে পারবেন না। কাউকে কোনো অনৈতিক কাজ করতে দেখলে তা অন্যের কাছে বলা যাবে না।
ধরুন, আপনি কাউকে দেখলেন নামাজের সময় ঘুমাচ্ছে। তাহলে তো সে স্পষ্ট বে-নামাযী হয়ে গেলা, তাই না? আপনি কারো কাছে বলতে পারবে না সে বে-নামাযী। আপনার এই অধিকার নেই, অনুমতি নেই। এই কাজ করা – মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার মতো জঘন্য অপরাধ। আল্লাহ তাআলা তো কুরআনুল কারীমে এমনটাই বলেছেন।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফুকাহায়ে কেরাম অনুমতি দিয়েছেন। যেমন, যেখানে বিপদ বা ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। তবে সেটাও সরাসরি নয়, আকার ইঙ্গিতে বলার অনুমতি আছে। ‘একটু সাবধানে কাজ করবেন, তার ব্যাপারে অভিযোগ আছে, টাকা নিয়ে ফেরত দেয় না’ এই ধরণের ইঙ্গিতমূলক শব্দ ব্যবহারের অনুমতি আছে। তবে সেটাও অনেক সাবধানে বলতে হবে। ‘সে বে-ঈমান’- আপনি এজাতীয় কথা বলতে পারবেন না। মোটকথা, তাকে অপদস্থ করতে পারবেন না।
৩
ক্ষমা করা। আজ এই মজলিসে যারা উপস্থিত আছেন, অন্যের উপর আপনাদের যতো হক আছে সব মাফ করে দিন। অর্থ-সম্পদের বিষয় আলাদা। সেগুলো আপনি মাফ করবেন কি করবেন না ধীরে-সুস্থে সিদ্ধান্ত নিবেন। তার জন্য আমি আপনাদের অনুরোধ করছি না। কমপক্ষে কারো কথার মাধ্যমে, আচার-আচরণে যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন মাফ করে দিন। নিকটজনদের আগে মাফ করুন। নিকটজনদের ব্যাপারে প্রথমেই ভেবে নিন, তারা তো এমনটা করবেই। তারা ইচ্ছাবসত করে না। তাদের স্বভাবই এমন। স্বভাব কীভাবে বদলাবেন আপনি?
নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখি
আত্মিক উন্নতি সাধন নির্ভর করে নিজের উপর কতোটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন তার উপর? তারমধ্যে রাগ অন্যতম; এর উপর নিয়ন্ত্রণ সবচে কঠিন কাজ। আপনার যদি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকে তবে মানুষের কাতার থেকে আপনার নাম মুছে গেছে। হযরত ফিদায়ে মিল্লাত (রহ.) বলতেন, সে আবার কেমন পুরুষ, যে কোনো কিছুর ইচ্ছা করেছে আর তা পূরণ করতে পারে না।
আপনারাও ইচ্ছা করে ফেলুন, মাফ করে দিন। আল্লাহর কাছ থেকে আমরা বদলা চাই না। আল্লাহর কাছ থেকে আমরা তাঁর সন্তুষ্টি চাই। যদি মাফ করে দিতে পারেন, তাহলে জিকিরে মজা পেতে শুরু করবেন। কারণ দিল থেকে গিঁট খুলে গেছে। এখন ভাইকে ভালো লাগা শুরু হবে। পরিবার-পরিজনকে পছন্দ হতে লাগবে। মাফ করার কারণে দিলে তো কিছুই নেই। তাদের দেখলে পুরান কথা মনে পড়বে, তখন আবার মাফ করবেন। তারা আবার আপনার সাথে খারাপ আচরণ করবে, তখন আবার মাফ করবেন। দৃঢ় ইচ্ছা করে নিন, আমাদের তো মাফ-ই করতে হবে।
বয়ান শেষে হযরত মাদানী উপস্থিত সবাইকে নিয়ে দুআ ও মুনাজাত করেন।
উল্লেখ্য যে, তিন দিন নফল ইতিকাফ শেষে গতকাল সকাল ১০:৪৫ এর ফ্লাইটে হযরত মাদানী ইন্ডিয়া ফিরে যান। এর আগে গত পরশু বাদ জুমআ তিনি রাজধানীর জামিআ ইকরা বাংলাদেশ এর নব নির্মিত ভবন পরিদর্শন করেন এবং দুআ করেন।