তথ্য-প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে

তথ্য-প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে

তথ্য-প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বাংলাদেশ সৃষ্টির আগে থেকে বাংলা ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও আমরা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারিনি। কাজে, অফিসিয়াল ডকুমেন্টে আমরা বাংলা ফিরিয়ে আনতে পারিনি। এদিকে তথ্যপ্রযুক্তির নতুন উদ্ভাবনী সৃষ্টিতেও বাংলা ব্যবহার ছন্দ পায়নি।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা অবস্থয় সে কাজে তারা এগিয়েছে অনেকটা পথ। সরকারি অফিসগুলোতে অটোমেশন হয়েছে। অনলাইনে মিলছে প্রায় সব সরকারি সেবা। বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট কক্ষপথ পরিক্রমণ করছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য অনেক। কিন্তু একটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যর্থতা যথেষ্ট পীড়াদায়ক। সেটি হলো তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষার মর্যাদা তুলে ধরা এবং এর ব্যবহারযোগ্যতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এগোতে না পারা। ২০১৬ সালের ১ জুলাই ‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ’ নামের একটি প্রকল্প শুরু হয়। ২০১৭ সালে প্রথম দফা সংশোধন অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। মেয়াদ নির্ধারিত হয় ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। পরে আবার তা সংশোধন করে মেয়াদ বাড়ানো হয় চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। এখন আবার ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হচ্ছে।

তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ডিজিটাল দুনিয়ায় আরো অনেক কিছুর সঙ্গে ভাষারও বিশ্বায়ন হচ্ছে। যেসব ভাষা প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছে না, সেগুলো ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে। তাই বাংলা ভাষাকে প্রযুক্তিবান্ধব করার লক্ষ্য নিয়ে শুরু হয়েছিল প্রকল্পটি। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, বাংলা ভাষার জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে (ওয়েব, মোবাইল, কম্পিউটার) ব্যবহারযোগ্য বিভিন্ন সফটওয়্যার, টুল ও রিসোর্স উন্নয়ন করা, যাতে বাংলা ভাষা কম্পিউটারে ব্যবহার করতে কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকে। এই প্রকল্পের আওতায় বাংলা ভাষার জন্য ১৬টি সফটওয়্যার, টুল ও রিসোর্স উন্নয়ন করার কথা ছিল। এটি বাস্তবায়ন করা হলে ব্যবহারকারীরা বিনা মূল্যে ৪০টি সুবিধা পেত। একই সঙ্গে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, করপোরেট খাত, গণমাধ্যম, গবেষক, আইওটি এবং রোবটিকস উপকৃত হতো। এই প্রকল্পের অধীন প্রধান উপাদানগুলো হচ্ছে-বাংলা করপাস উন্নয়ন, বাংলা থেকে পৃথিবীর প্রধান ১০টি ভাষায় স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক অনুবাদক উন্নয়ন, বাংলা টাইপ করা ও হাতের লেখা স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্তকরণ ও কম্পোজ, কথা থেকে লেখা এবং লেখা থেকে কথায় রূপান্তর, জাতীয় বাংলা কি-বোর্ডের উন্নয়ন, বাংলা ফন্ট রূপান্তর ইঞ্জিন, বাংলা বানান ও ব্যাকরণ সংশোধক উন্নয়ন, স্ক্রিন রিডার সফটওয়্যার উন্নয়ন, বাংলা অনুভূতি বিশ্লেষণের সফটওয়্যার উন্নয়ন, বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর ভাষার জন্য কি-বোর্ড উন্নয়ন।

প্রকল্পটি জাতির এমন এক আবেগের সঙ্গে জড়িত, যা থেকে স্বাধীনতাসহ আরো অনেক বড় অর্জন আমাদের হস্তগত হয়েছে। মাতৃভাষার সেই আবেগ নিয়ে কোনো ধরনের অবহেলাজনিত দীর্ঘসূত্রতা কাম্য নয়। একই ধরনের আবেগের স্থান ডটবাংলা ডমেইন পরিচালনার ক্ষেত্রেও বড় ধরনের ব্যর্থতাই আমাদের চোখে পড়ে। সংশ্লিষ্টরা প্রকল্প বাস্তবায়নে আরো বেশি আন্তরিক হবেন এবং দ্রুততম সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করবেন বলে আমরা আশাবাদি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *