তাঁর বয়ানে প্রশমিত হয় হৃদয়ের যাতনা | আমিনুল ইসলাম কাসেমী

তাঁর বয়ানে প্রশমিত হয় হৃদয়ের যাতনা | আমিনুল ইসলাম কাসেমী

তাঁর বয়ানে প্রশমিত হয় হৃদয়ের যাতনা | আমিনুল ইসলাম কাসেমী

সর্বশেষ আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ সাহেবের সান্নিধ্য পেয়েছিলাম বিগত জানুয়ারীতে ইন্টারন্যাশনাল হাদীস কনফারেন্সে। যেটা জামিআ ইকরা ঢাকা এর আয়োজনে হয়েছিল। মাঝখানে দীর্ঘ সময়। করোনাভাইরাসের কারণে লম্বা একটা টাইম দেশে লকডাউন চলেছে। শায়েখের মুক্তা ঝরানো বয়ান শোনা হয় নি। তবে অনলাইনে তাঁর বুখারীর দরসে মাঝে মধ্যে শরীক থেকেছি। কিন্তু অনলাইনে কি আর পিপাসা মেটে! বরং মহব্বত-ভালবাসার জ্বালা যেন বেড়ে যায় বহুগুণে।

বারবার মনে চাচ্ছিল, শায়েখ ফরীদ উদ্দীন মাসউদ সাহেব যেন ইসলাহী ইজতেমা আবার শুরু করেন। তাঁর হৃদয় নিংড়ানো বয়ানগুলো যেন শুনতে থাকি। মনের পিপাসা কিছুটা হলেও নিবারণ করি। কিন্তু সেটাও তো সম্ভব হচ্ছিল না। তাছাড়া শায়েখের স্বাস্থ্যগত ব্যাপার তো আছেই। সব মিলিয়ে মনটা বেশ কিছুদিন ধরে ছটফট করছিল, কবে যে হযরতের সংস্পর্শে বসব। কিছু ভুল-ভ্রান্তি সংশোধন করাব। তবে হয়েও যেন হচ্ছিল না।

আলহামদুলিল্লাহ, আমার প্রিয় বন্ধু, ফরিদপুর ভাঙা মাদানীনগর মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা আহমাদ মাসরুর সাহেব কয়েকদিন আগে ফোন দিয়ে বললেন, দোস্ত ১১ নভেম্বর আমাদের ফরিদপুর ভাঙা মাদানীনগর মাদ্রাসায় আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ সাহেব তাশরীফ আনবেন। বয়ান বাদ জোহর। বিকেলে খুলনার উদ্দেশ্য রওয়ানা। সেখানে রাতে বয়ান করবেন।

মানে দীলের আকাংখা যেন পুরো হতে যাচ্ছে। মনের মধ্যে জমে থাকা তীব্র ব্যথা-বেদনার অবসান হবে। কেননা, ‘শেফায়ুল কুলুবে লেকায়ুল মাহবুব’ অন্তরের প্রশান্তি হল প্রিয়জনের সাক্ষাত। প্রিয় শায়েখের সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে অন্তরের ব্যথা-বেদনা বুঝি আজ দূর হবে। অনেক কথা, অনেক প্রশ্নের বুঝি হল হবে। তাই মনটা এখন বারবার আনচান করছে। শায়েখের সাক্ষাতের অপেক্ষায়। কখন দেখা হবে!

তবে হযরতের সাথে দেখা হলে কি বলতে পারব মনের সব কথা? যত প্রশ্ন দানা বেঁধে আছে, তার কি উত্তর পাব? আসল কথা কি, শায়েখ কে সামনে পেলে যেন সব ভুলে যাই। কোন কিছু প্রশ্ন করার আর সাহস থাকে না। কখনো এমন হয়, যে প্রশ্ন নিয়ে গিয়েছি, সেটা জিজ্ঞেস করার আগেই হল হয়ে গেছে। প্রশ্ন করার আগে সমাধান পেয়ে গেছি।

আসলে এটা শায়েখের ব্যক্তিত্ব এবং ইখলাছের কারণে হয়। এরকম অনেকের বেলায় হয়ে থাকে। দেখা যায়, শায়েখের কাছে যে প্রশ্ন নিয়ে গেছেন, সেটার উত্তর অটোমেটিক নিজের দীলের মধ্যে চলে এসেছে।

হযরত মাওলানা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ, যিনি জগতসেরা আলেম এবং ওলী ছিলেন। দারুল উলুম দেওবন্দের শায়খুল হাদীস। দেওবন্দী সিলসিলার আলেমদের যিনি গর্ব। তিনি কোন জটিল সমস্যায় পড়লে প্রিয় উস্তাদ শায়খুল হিন্দের কাছে চলে যেতেন। শায়খুল হিন্দের ওখানে মজলিসে চুপচাপ বসে থাকতেন। কোন কথা বলতেন না। দেখা যেত, মজলিসে বসেই তাঁর সব প্রশ্নের সমাধান হয়ে গেছে।

সাধারণতঃ যখন কোন ছাত্র, মুরিদ, ভক্ত, আপন উস্তাদ বা শায়েখের খেদমত ভক্তি ভালবাসা নিয়ে বসে, তখন তাঁর সকল প্রশ্নের উত্তর চলে আসে। বোধগম্য হয় অনেককিছু। এটা মহান প্রভুর খাছ মেহেরবানি এবং আল্লাহ ওয়ালাদের সংস্পর্শের বরকত। ভাল মানুষের সোহবতের বরকতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর সমস্যার সমাধান করে দেন।

আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেব দামাত বারাকাতুহুম একজন প্রতিভাবান আলেমে দ্বীন। তিনি ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী রহ, এর সুযোগ্য খলিফা। মানে হর লাইনে ফরীদ সাহেবকে মাহের বলা যায়। তিনি যে কত বড় আলেম এবং তাঁর ইলমী মাকাম কত উঁচুতে, এগুলো বর্ননা করার ভাষা আমার নেই। তাঁকে চেনার মত, তাঁকে বোঝার মত যোগ্যতা এখনো আমাদের হয় নি। তাঁকে চিনতেন, সাইয়্যেদ হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ, এর বড় সাহেবজাদা ও তাঁর খলিফা ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী রহ.।

ফরীদ সাহেবকে চিনতেন তাঁর প্রিয় উস্তাদ, যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আল্লামা কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ রহ.। কাজী সাহেব এত বড় আলেম, এত বড় ব্যক্তিত্ব, তিনি বলতেন, মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ আমার উস্তাদতুল্য ছাত্র। (আল্লাহু আকবার)

কাজী সাহেব এত বড় আলেম হওয়ার পরেও তাঁর শাগরেদ এর যোগ্যতা কত উচ্চতায়, তা তিনি বর্ননা করে গেছেন।

ফরীদ সাহেব হুজুরকে চেনেন, দেওবন্দের ওলামাগণ। দেওবন্দের বর্তমান উস্তাদগণ। তাঁরা ফরীদ সাহেব সম্পর্কে বলেছেন, বাংলাদেশে দেওবন্দীয়্যাত বোঝার মত দুইটি মানুষ। একজন আল্লামা কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ রহ, অপরজন হলেন আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ সাহেব।

বর্তমানে ফরীদ সাহেবকে চেনেন বিশ্বের আলেম সমাজ। ইসলামী বিশ্বের একজন স্বনামধন্য স্কলার তিনি। পুরো মুসলিম জাহানের আলেমগণের কাছে তাঁর ঈর্ষনীয় গ্রহণ যোগ্যতা। দারুল উলুম দেওবন্দের সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানী দাঃ, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সেক্রেটারী জেনারেল মাহমুদ মাদানী দাঃ, পাকিস্তানের আল্লামা তাকি উসমানী দাঃ সহ মুসলিম বিশ্বের আলেমদের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং অন্যতম ব্যক্তিত্ব হলেন আল্লামা ফরীদ ঊদ্দীন মাসউদ। বলা যায় অল বিশ্বের মধ্যমণিতে তিনি পরিণত হয়েছেন। এটা মহান প্রভুর পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ তাঁর প্রতি।

তিনি সৌদি আরবে হারামাইন শরীফাইন এর আলেমদের কাছে অনেক প্রিয় ব্যক্তিত্ব। তাঁকে খানায়ে কাবাতে ইবাদতের সুযোগ দিয়ে বিশেষ ভাবে সন্মানিত করেছেন তারা। যেটার সৌভাগ্য সবার নসীবে হয় না।

আজ থেকে সেই মহান ব্যক্তিত্ব ইসলাহী ইজতেমাতে ভক্তকুলের উদ্দেশ্যে বয়ান পেশ করবেন। একটা সময়পোযোগী সিদ্ধান্ত। মুসলিম উম্মাহর যে হালাত, তাতে ইসলাহী ইজতেমা ঘরে ঘরে হওয়া দরকার। তিনি এরকমই যুগান্তকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। বিগতবছরগুলোতে এভাবে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে মহান রবের বাণী এবং পেয়ারা হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী পৌঁছে দিয়েছেন। হেদায়েতের উদ্দেশ্যে মশাল জ্বালিয়েছেন।

আবারও তাঁর মুখে শোনা যাবে সেই মুক্তা ঝরানো বয়ান। হুজুরের কথা তো যাদুমাখা। এর আগেও আমি একবার লিখেছিলাম, ফরীদ সাহেবের সাবলীল কথাগুলো যেন যাদুমাখা। যাদুরমত টানে। মানুষের অন্তর ভরে যায়।

আজ হৃদয় ভরবে ফরিদপুর আর খুলনাবাসীর। মনের ইচ্ছা আমিও যেন শরীক থাকতে পারি। দুআ করি মহান আল্লাহর কাছে, ফরীদ উদ্দীন মাসউদ সাহেবের আগমন শুভ হোক। তিনি নিরাপদে চলাফেরা করুন। আল্লাহ তাঁকে সকল বিপদ- আপদ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিষ্ট

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *