২রা মার্চ, ২০২১ ইং , ১৭ই ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ , ১৭ই রজব, ১৪৪২ হিজরী
দীর্ঘদিনের প্রতিক্ষীত তাড়াইল ইসলাহী ইজতেমা শুরু হচ্ছে ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে। দীর্ঘ এক বছর ধরে চলছে এই প্রতীক্ষা। কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থানাধীন বেলংকার ইসলাহী ইজতেমাতে যেতে হবে। বিগতবছর ফেব্রুয়ারী মাসে মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ মাসউদ সাহেব মোবাইল ফোনে দাওয়াত দিয়ে রেখেছিলেন। সেই থেকে মনে মনে সংকল্প করে আছি এবার যাব-ই। সে উদ্দেশ্যে আগে – ভাগেই এবার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। কথা ছিল ১২ ফেব্রুয়ারী থেকে শুরু হওয়ার। অনেকদিন আগে থেকে গাড়িও ভাড়া করে রেখেছিলাম।
বিশেষ করে এটা তো ওয়াজ মাহফিলের সিজন। টুকটাক ওয়াজ মাহফিল তো থাকেই। সে হিসেবে ফেব্রুয়ারীর ১২, ১৩ তারিখে কোন প্রোগ্রাম রাখিনি। তাছাড়া বেলংকার ইজতেমার কথা প্রচারও হচ্ছিল বেশ জোরে-শোরে। কিন্তু হঠাৎ করে পাথেয় এর নিউজে দেখলাম, ‘তাড়াইল ইসলাহী ইজতেমা পেছাল’। এটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। স্থানীয় ইউপি নির্বাচনের কারণে এই তারিখ পেছানো। কারো কিছু করার নেই।
সংবাদটাতে মন খুব খারাপ হয়ে গেল। কেননা, নতুন তারিখ ১৯,২০,২১ ফেব্রুয়ারী। ওই সময় আমার প্রোগ্রাম রয়েছে। এক বছরের স্বপ্নটা যেন ভাঙার পথে। বড় ব্যথা পেলাম। হৃদয়টা বিষাদে ভরে গেল যেন। আসলে আমার প্রোগ্রাম বড় কথা নয়। দীর্ঘ এক বছর ধরে তাড়াইল যাওয়ার প্রতীক্ষা শেষমেষ যদি ভেস্তে যায় বড় কষ্ট লাগবে।
আসলে ইসলাহি ইজতেমাতে যাওয়ার উদ্দেশ্য তো নিজেকে ইসলাহ করা। প্রিয় শায়েখও মুর্শিদদের সোহবতে থেকে নিজেকে ধণ্য করা। কিন্তু এখন এমন অবস্থা, ইজতেমাতে যাওয়াটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ল।
তবে আশা ছাড়িনি এখনো। আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন কোন সহজ রাস্তা বের করে দেন। এই এত্ত প্রতীক্ষিত ইজতেমাতে যোগদান যেন করতে পারি।
আল্লামা ফরীদ ঊদ্দীন মাসউদ দামাত বারাকাতুহুম এর তত্বাবধানে হয়ে থাকে তাড়াইল এর ইসলাহী ইজতেমা। আওলাদে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী রহ. এর সুযোগ্য খলিফা হলেন আল্লামা মাসঊদ সাহেব। যেরকম মাসঊদ সাহেব একজন মুহাক্কিক আলেম আবার তিনি সুলুকের লাইনের এক মহা সম্রাট। তাঁর মত ব্যক্তিত্বের সোহবত পাওয়াটাই বড় নেয়ামত।
বতর্মান জামানার একজন বে-মেছাল ব্যক্তিত্ব আল্লামা ফরীদ ঊদ্দীন মাসউদ সাহেব। যেখানে দেশব্যাপী সাউন্ডগ্রেনেড এবং তার অনুসারীরা প্রভাব বিস্তার করে চলছে। ওয়াজের ময়দানে এখন আর যেন ওয়াজের দেখা নেই। ময়দানে শুধু হম্বিতম্বি। দাওয়াতের পদ্ধতি ভুলে গিয়ে তারা নিজেদের মনগড়া কাজ-কারবার নিয়েই ব্যস্ত। সেখানে আল্লামা মাসঊদ সাহেব উম্মতের ব্যথা দরদ নিয়ে ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছেন। কোন হম্বিতম্বি নয়। অত্যন্ত বিনয়-নম্রতার সাথে মানুষকে দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছেন।
আল্লামা মাসঊদ সাহেবের কথা যেন মধুমাখা। হৃদয় ছুঁয়ে যায় তাঁর বয়ানগুলো। যে শুনবে তার মাঝে বিরাট প্রভাব পড়বে। আমূল পরিবর্তন আসে তার মাঝে। আমলের প্রতি উৎসাহিত হয়। নিজেকে অন্য এক তবকায় নিয়ে যায়। নিজেকে জানতে শেখে মানুষ। গোনাহ ছাড়ার জন্য সংকল্প করে।
বিগত নভেম্বর মাসে স্বল্প সময়ের জন্য খুলনার ইসলাহী ইজতেমাতে গিয়েছিলাম। সময় অল্প হলেও আমাদের হৃদয় কেড়ে নিয়েছিল। এক ব্যতিক্রমধর্মী ইসলাহী ইজতেমা বলা যায়। কোন রংঢং নেই। একদম সাদামাটা। মানু্ষকে আমলের প্রতি তারগীব করতে দেখলাম। কোন গীবত-শেকায়েত নেই বয়ানের মাঝে বা নিজের যোগ্যতা জাহির করা নয়। কোন দল ভারি করা নয়।
মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি নিমিত্তে ইসলাহী ইজতেমার আয়োজন। দুনিয়াবী কোন ধরনের কোন ফায়দার জন্য নয়।
বহু ওলামা হযরতদের উপস্থিতি দেখেছিলাম সেখানে। বিশেষ করে খুলনা দারুল উলুম মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস সহ অত্র অঞ্চলের বড় বড় ওলামা হযরতদের আগমন ঘটেছিল সেখানে। একটা মজার পরিবেশ। ওলামা মাশায়েখদের আগমনে যেন পুরো এলাকাটি এক নুরানী মন্জিলে পরিণত হয়েছিল।
আর বেলংকা তাড়াইল এর ইসলাহী ইজতেমার গল্প শুনেছি অনেক। প্রিয় লিয়াকত আলী মাসউদ বেলংকা ইজতেমার অনেক কথা আমাকে বলেছেন। সেই থেকে যেন মনটা ছুঁটেই চলেছে সেখানে। বন্ধুকে ফোনও দিলাম সেদিন। রাস্তা বাতলে দিলেন কিভাবে তাড়াইল যাব। যাইহোক, তারিখ পেছাল তাড়াইল ইসলাহী ইজতেমার। নতুন তারিখ ১৯.২০.২১ ফেব্রুয়ারী। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হবে। প্রিয় শায়েখের সোহবতে ধন্য হব। দুআ চাই। আল্লাহুম্মা আমিন।
লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট