তিন সপ্তাহে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৬ কোটি ডলার

তিন সপ্তাহে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৬ কোটি ডলার

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : প্রবাসী শ্রমিকদের রেমিট্যান্সের রেট নির্ধারণ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতি ডলার সর্বোচ্চ ১০৮ টাকায় কিনতে পারবে ব্যাংকগুলো। যার প্রভাব পড়েছে প্রবাসী আয়ের সংগ্রহে। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের তুলনায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহে কমেছে রেমিট্যান্স।

সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ২২ দিনে দেশে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে ১২৬ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। দেশীয় মুদ্রায় (হালনাগাদ রেট প্রতি ডলার ১০৩ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ১৩ হাজার ৩৩ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ৫২ কোটি ২৪ লাখ ডলার, দ্বিতীয় সপ্তাহে (১৫ সেপ্টেম্বর) এসেছে ৪১ কোটি ২৭ লাখ ডলার। আর তৃতীয় সপ্তাহে পাঠিয়েছেন মাত্র ২০ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাসের শুরুর দিকে প্রবাসী আয়ের যে হার ছিল শেষ দিকে তা অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, যে হারে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কমছে এই ধারা চলমান থাকলে আগের মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স কমে যাবে।

চলতি অর্থবছরের টানা দুই মাস ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স বৈধ পথে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত আগস্ট মাসে ২০৩ কোটি ৭৮ লাখ (২ দশমিক ০৩ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। তার আগের মাস জুলাইয়ে এসেছিল ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। জুলাই মাসে পবিত্র ঈদুল আজহার কারণে দেশে বিপুল পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছিল। তবে আগস্টে বড় উৎসব ছিল না, তার পরও প্রবাসী আয় ২০০ কোটি ডলার ছাড়ায়। চলতি বছরের প্রথম আট মাসের মধ্যে তিন মাস প্রবাসী আয় ২০০ কোটি ডলারের বেশি ছিল।

এদিকে সেপ্টেম্বরের প্রথম ২২ দিনে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১৮ কোটি ৫৮ লাখ মার্কিন ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১০৫ কোটি ৩৭ লাখ মার্কিন ডলার। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫১ লাখ মার্কিন ডলার, আর বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২ কোটি মার্কিন ডলার। আলোচিত সময়ে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বরাবরের মতো বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রবাসীরা ২৭ কোটি ৮২ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। এরপর সিটি ব্যাংকে এসেছে ১০ কোটি ৯৩ লাখ ডলার, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে ৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার, অগ্রণী ব্যাংকে ৮ কোটি ডলার এবং পূবালী ব্যাংকে এসেছে ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার প্রবাসী আয়।

আলোচিত সময়ে সরকারি বিডিবিএল, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ, বিদেশি ব্যাংক আল-ফালাহ, হাবিব ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও উরি ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। প্রণোদনা ও ডলারের দাম বাড়ার পরও ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে বড় পতন হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এখন বিদেশ থেকে যে কোনো পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাতে কোনো ধরনের কাগজপত্র লাগে না। এছাড়া প্রবাসী আয়ের ওপর আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার।

ডলারের সংকট নিরসন ও প্রবাসী আয় বাড়াতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজেরাই বসে গত ১১ সেপ্টেম্বর সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করে দেয়। ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) যৌথ সভায় দাম নির্ধারণ করে।

বাফেদার ঘোষিত দাম অনুযায়ী, এখন থেকে দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে প্রতি ডলার সর্বোচ্চ ১০৮ টাকায় কিনতে পারবে ব্যাংক। বাণিজ্যিক রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বিল নগদায়ন হবে প্রতি ডলার ৯৯ টাকায়। এছাড়া রেমিট্যান্স আহরণ ও রপ্তানি বিল নগদায়নে ব্যাংকগুলোর গড় (ওয়েট অ্যান্ড এভারেজ) মূল্যের সঙ্গে সর্বোচ্চ এক টাকা যোগ করে আমদানিকারকের কাছে ডলার বিক্রি করতে পারবে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ‘টাকার বিনিময় মূল্য’ অংশে বলা হয়েছে, চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে এবং বাফেদার নির্দেশনা অনুযায়ী আন্তঃব্যাংক লেনদেন এবং গ্রাহক লেনদেনের জন্য টাকার বিনিময় মূল্য নির্ধারণ করছে ব্যাংকগুলো।

সবশেষ ২২ সেপ্টেম্বরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য সর্বোচ্চ ১০৩ টাকা ২৫ পয়সা এবং সর্বনিম্ন ১০১ টাকা ৫৭ পয়সা দেওয়া আছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *