তীব্র শীতে বিপর্যস্ত চরবাসী

তীব্র শীতে বিপর্যস্ত চরবাসী

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : তীব্র শীতে কাঁপছে দেশে। ৩২ জেলায় চলছে শৈত্যপ্রবাহ। সেই সাথে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় গত তিন দিনের শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের জনজীবন। বাড়ছে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব। সেইসঙ্গে শিশু ও বৃদ্ধদের মাঝে দেখা দিয়েছে কোল্ড ডাইরিয়ার ছড়াছড়ি।

পদ্মানদী অধ্যুষিত ওই উপজেলার চরাঞ্চলবাসী, নদী পারের বসতি, বিভিন্ন বেড়িবাঁধ ও উন্মুক্ত ফসলি মাঠের পাশে বসবাসকারীরা তীব্র শীতে বেশি কাবু হয়ে পড়েছেন। গত ক’দিনের পদ্মাপাড়ের তুষারাচ্ছান্ন বাতাস আর ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার মধ্যে হাড় কাঁপানো শীতে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগাক্রান্ত হচ্ছে চরাঞ্চলবাসী।

গাজীরটেক ইউনিয়নের বিন্দু ডাঙ্গী গ্রামের লক্ষী রানী বলেন, তার স্বামী চিত্ত হালদার (৬০) পদ্মা নদীর একজন মৎস্যজীবী। গত তিনদিন ধরে তীব্র শীতের কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে নদীতে যেতে পারেননি। তাই সংসারে অভাব অনটন দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ক’দিনের তীব্র শীতে উপজেলার ভাঙন কবলিত ও ছিন্নমূল পরিবারগুলো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধদের মাঝে শীতজনিত রোগ লেগেই আছে। দিনের অধিকাংশ সময় রোদ না থাকায় তারা আরও কাবু হয়ে পড়ছে। এমনকি গৃহপালিত পশুর মধ্যেও দেখা দিয়েছে শীতজনিত রোগ।

পদ্মা নদীর অপর পাড়ে চরহরিরামপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির বেপারী জানান, তীব্র শীতে চরাঞ্চলে একচেটিয়া ভাইরাস জ্বর দেখা দিয়েছে এবং আমি নিজেও জ্বরাক্রান্ত হয়েছি।

তিনি আরও জানান, এ বছর সরকারি ও আমার ব্যক্তিগত তহবিল মিলে সর্বমোট ১ হাজার ৩শ কম্বল দুস্থদের মাঝে বিতরণ করেছি। কিন্তু শীতের তীব্রতা এতো বেশি যে শীতবস্ত্র বরফগলা ঠান্ডা আবহাওয়া প্রতিরোধ করতে পারছে না।

গাজীরটেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইয়াকুব আলী বলেন, দুস্থদের শীত নিবারণের জন্য চলতি মৌসুমে সরকারি ও ব্যক্তিগত তহবিল মিলে সাড়ে ৯শ কম্বল বিতরণ করেছি।

চরঝাউকান্দা ইউপি চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন মৃধা জানান, গত ক’দিনের তীব্র শীতে চরাঞ্চলবাসী একচেটিয়াভাবে জ্বর রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। তাদের মাঝে আরও শীতবস্ত্র বিতরণ করা দরকার।

সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আজাদ খান বলেন, আমি নিজে ও ইউএনও মিলে সরকারি কম্বল ইউনিয়নের দুস্থ পরিবারের মাঝে ঘুরে ঘুরে বিতরণ করেছি। কিন্ত ক’দিন ধরে এলাকায় যেভাবে ভাইরাস জ্বরের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে তাতে সকলের আরও সচেতন হওয়া দরকার।

রোববার (৩০ জানুয়ারি) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে অধিকাংশ রোগীই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছে। বেশিরভাগ রোগীই চিকিৎসাপত্র নিয়ে বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে মৃত্যুর সংখ্যা কম।

উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাফিজুর রহমান বলেন, শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ওমিক্রন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবও বেড়েছে। সে কারণে চরাঞ্চলের স্বাস্থ্য কর্মীদের ঘরে ঘরে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য জোর তাগিত দেওয়া হয়েছে এবং প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *