পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : তুরস্কে সরকারি উদ্যোগে ব্যাপকভাবে পবিত্র কোরআনের হিফজ প্রচেষ্টা চলছে। শিশু-কিশোর বয়সী ছেলে ও মেয়েদের জন্য হিফজের অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এবার অল্প সময়ে যেকোনো বয়সীদের জন্য হিফজের বিশেষায়িত প্রোগ্রাম চালু হয়েছে।
ইস্তাম্বুলের সাবাহাদ্দিন জেইম ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করে মাত্র ৭৫ দিনে কোরআন হিফজের গ্রোগ্রাম শুরু করে। আরবি সংগীতের বিশেষ ‘মাকামাত’ সুর ও সম্মিলিত পাঠরীতি অনুসরণ করে মাত্র আড়াই মাসে পুরো কোরআন মুখস্ত করছে সেখানকার শিক্ষার্থীরা।
সাধারণ শিশু-কিশোরদের ৩০ পারা বিশিষ্ট প্রায় ছয় শ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থ মুখস্ত করতে ২-৩ বছর সময় লাগে। অবশ্য অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী এক বছরেই তা মুখস্ত করে ফেলতে পারে। তবে পুরো প্রক্রিয়া অনেক পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের কাজ। আর সবার পক্ষে তা সম্ভবও হয় না।
সাবাহাদ্দিন জেইম ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. উজজান খাদার বলেন, ‘এ প্রকল্পে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জড়িত। বিশেষত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ক ও সচেতনতা এখানে তাৎপর্যপূর্ণ। তাই আমরা প্রথমে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্তীদের মাধ্যমে এ প্রকল্প শুরু করেছি। আরবি সংগীতে ব্যবহৃত ঐতিহ্যবাহী মাকাম সুর ধরে ও সম্মিলিত পাঠরীতি অনুসরণ করে শিক্ষার্থী পবিত্র কোরআন হিফজ করে। প্রথমে শিক্ষার্থী প্রতিদিন ১০ পৃষ্ঠা হিফজ করেন। মাস শেষে তা পুনরাবৃত্তি করে শোনান।’
অধ্যাপক খাদার বলেন, ‘তুরস্কসহ বিশ্বে প্রচলিত রীতি অনুসারে কম বয়সীরা একটি দীর্ঘ সময় ব্যয় করে পবিত্র কোরআন হিফজ করে থাকে। ব্যতিক্রমী পদ্ধতি হিসেবে অল্প সময়ে হিফজের এ পদ্ধতি বিশ্বে হয়ত এবারই প্রথম।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক কুলসুম আরসালান প্রবিত্র কোরআন হিফজের শিক্ষকতা করেন। নতুন এ প্রোগ্রামে যুক্ত হয়ে তিনি খুবই উচ্ছ্বাসিত। তাই অল্প সময়ের এ প্রকল্পে তিনি অবৈতনিক শিক্ষক হিসেবে অংশ নেন।
আরসালান বলেন, ‘সাধারণত আমরা প্রতিদিন ১০ পৃষ্ঠা করে হিফজ করি। স্বাভাবিকভাবে প্রত্যেকের এক পৃষ্ঠা মুখস্থ করতে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। প্রথম দিকে আমাদের পদ্ধতি অনুসরণ করে এতে ৪৫ মিনিট সময় লাগত। এরপর এ সময় কমে সময় লাগে ২৫ মিনিট। আমরা শিক্ষার্থীদের সুরের সঙ্গে পরিচিত করাই। এতেকরে তাঁরা ক্লান্তিহীন পড়তে পারেন। তাদের স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ণ হয়। মুখস্থের জন্য দেখার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি শ্রুতিশক্তিও অনেক কার্যকরি।’
আরসালান আরো বলেন, ‘যেমন কেউ উচ্চস্বরে কোরআন পড়ে মুখস্থ করে, যেন এতে শ্রবণশক্তিরও সহায়তা থাকে। আমাদের এখানে ৩৫জন শিক্ষার্থী আছেন। আমিসহ মোট ৩৬জন। ফলে আমাদের মেধা বৃদ্ধি পায়। সুপ্ত প্রতিভার প্রকাশ পায়। মুখস্থ শক্তি অধিক স্থায়িত্ব হয়। তাছাড়া সবার আওয়াজ উদ্দীপনা তৈরি করে। আর ক্লাসে নিবিড় পর্যবেক্ষণে পড়ায় তাদের ভুলের সম্ভাবনা থাকে না। তাছাড়া অর্থ বোঝার সুযোগও থাকে। তাই আমার বিশ্বাস করি, ধর্মীয় শিক্ষায় এ পদ্ধতি ব্যাপক সাফল্য বয়ে আনবে।
এদিকে মাত্র তিন মাসের কম সময়ে পবিত্র কোরআন হিফজ করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যেও অনেক আনন্দ ও উচ্ছ্বাস। কোরআনের হিফজে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী গামজাহ তাশাকিরদাক উগলু বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর সময়ে মাত্র তিন মাস সবচেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেখায় ব্যয় করেছি। অথচ করোনা শুরুর পর গত দেড় বছর অহেতুক কাজে ব্যয় করেছি। এর আগে আমি কল্পনাও করতে পারিনি যে আমি কোরআন হিফজ করতে পারব। কারণ আমি যা পড়তাম তা ভুলে যেতাম। এখানে এসে বুঝতে পারি একাধারে বার বার পড়লে তা মনে থাকে। শিক্ষক আমাদের বার বার পড়ানোর নিয়ম করে দিয়েছেন। ফলে তিন মাসের মধ্যে আমরা কোরআন মুখস্থ করতে পারছি।’
মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সুমাইয়া বালগুন বলেন, ‘প্রচলিত নিয়মে কোরআন হিফজ করতে একটি দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়। তাছাড়া এ সময় অন্য বিষয়ে পড়াশোনা করা যায় না। তাই আমি এই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করি। যেন গ্রীষ্মের ছুটিতে আমার কোরআন হিফজ সম্পন্ন হয়।’
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি