দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মাথাচাড়া দিচ্ছে স্বৈরতন্ত্র : দ্য ইকোনমিস্ট

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মাথাচাড়া দিচ্ছে স্বৈরতন্ত্র : দ্য ইকোনমিস্ট

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিভিন্ন ধরনের স্বৈরাচার বিদ্যমান রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট স্বৈরাচার, কম্বোডিয়ার পুঁজিবাদী স্বৈরাচার, মিয়ানমারের সামরিক স্বৈরাচার, ব্রুনাইয়ের রাজতান্ত্রিক শাসন, সিঙ্গাপুরের একদলীয় শাসন। তাছাড়া মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে রয়েছে পৃষ্ঠপোষকতাভিত্তিক গণতন্ত্র।

কিন্তু গত এক দশক ধরে এই অঞ্চলটি একটি নতুন আশায় উজ্জীবিত হয়। মনে করা হয়েছে গণতন্ত্রেরভিত্তি মজবুত হচ্ছে। ২০১৪ সালে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হয়। এতে ভোটারদের চাওয়া ছিল পরিবর্তন। ওই বছর জোকো উইদোদো ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন, তিনি জোকোই নামেও পরিচিত। তিনি ছিলেন রাজনীতির বাইরের মানুষ, সেনাবাহিনী বা অভিজাত পরিবার থেকে আসেননি। তাই জোকোই সংস্কারের চেতনাকে মূর্ত করে তুলেন।

২০১৫ সালে মিয়ানমারের ভোটাররা অং সান সুচিকে বেছে নেয়। তাকে বলা হতো চ্যাম্পিয়ন অব ডেমোক্রেসি। ৫০ বছর ধরে দেশ শাসন করা সেনাবাহিনীও সুচিকে ক্ষমতা গ্রহণ করার অনুমোদন দিয়েছিল। তিন বছর পর মালয়েশিয়ানরা সরকার থেকে ইউনাইটেড মালয়েস ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনকে বিতাড়িত করে। ১৯৫৭ সালে মালয়েশিয়ার স্বাধীনতার পর থেকেই দলটির ব্যাপক আধিপত্য ছিল। এভাবেই দক্ষিণ এশিয়ার ভোটাররা রাজনৈতিক প্রভুদের আঘাত করেছে।

কিন্তু এত কিছুর পরেও মনে হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় স্বৈরচাররা ফিরে আসছে। কোনো কোনো সময় তারা ক্ষমতায় আসছে অবৈধভাবে। যেমন ২০২১ সালে অং সান সুচিকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করে সামরিক প্রধান। কখনো কখনো তারা প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিতে পেছনের দরজার কৌশল অবলম্বন করে, যেমনটি ২০২১ সালে মালয়েশিয়ায় উমনো করেছিল। এমনকি এসব কর্তৃত্ববাদীরা নির্বাচনের মাধ্যমে বৈধভাবেও ক্ষমতা পায়। ২০২২ সালে বং ব্যাং মারকোস নির্বাচনের বড় জয় পায়। তিনি সাবেক স্বৈর শাসক ফারদিনান্দ মারকোজের ছেলে।

ইন্দোনেশিয়ায় প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার ক্ষয় লক্ষ করা যাচ্ছে। জোকোই গণতান্ত্রিক হতাশায় পরিণত হয়েছেন। প্রকাশ্যে প্রশংসা করছেন সুহারতোর, যিনি ৩০ বছর ধরে ইন্দোনেশিয়ার স্বৈরশাসক ছিলেন। তবে আরও মাজার বিষয় হলো তার সাবেক জামাই প্রবোও সুবিয়ানতো ২০২৪ সালে জোকোইর স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন। তিনি শ্বশুরের স্বৈরশাসনের সময় জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ। এরই মধ্যে তিনি ক্ষমতায় ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

বিগত কয়েক বছরের ওলোটপালটে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ক্ষমতার প্রকৃতির একটি শক্তিশালী দিক স্পষ্ট হয়। এখন অনেকে স্বৈরচারী সরকার গণতন্ত্র সংযোজন করতে চায়। তার মানে এই নয় যে তারা সংকটে আছে সে জন্য। মূলত তারা মনে করে গণতন্ত্রের মাধ্যমেও ক্ষমতা দখল করা যায়, এমনকি মানুষের ভোটের অধিকার থাকলে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অভিজাতরা তাদের পক্ষে নির্বাচনী মানচিত্র তৈরি করে, ভোট কিনে ও ব্যালট বাক্স ভর্তি করে নির্বাচনে জয়লাভ করে। যেমনটি অবশ্যই ২০২৩ সালের কম্বোডিয়ার সংসদীয় নির্বাচনে ঘটবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *