২৩শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ , ৩০শে শাবান, ১৪৪৪ হিজরি
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : রাজধানী ঢাকার চৌধুরীপাড়ায় শেখ জনুরুদ্দীন রহ. দারুল কুরআন মাদরাসার দুই দিনব্যাপী ৩০ সালা দস্তারবন্দী সম্মেলনের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার দূরদুরান্ত থেকে আগত ফুযালাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠেছে মাদরাসার চত্তর, প্রাণচঞ্চল হয়ে আছে মাদরাসার বিভিন্ন প্রাঙ্গণ।
এই মহা মিলনমেলায় ফুযালাদের বরণ করে নেওয়ার জন্য রঙিন সাজে সজ্জিত মাদরাসায় আজকেই এসে উপস্থিত হয়েছেন ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের নায়েবে মুহতামিম আল্লামা রাশেদ আজমী।
আরও উপস্থিত হবেন ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম আল্লামা আবুল কাসেম নোমানী, বেফাকের সভাপতি ও হাইয়াতুল উলিয়ার চেয়ারম্যান আল্লামা মাহমুদুল হাসান, জামিয়া ইকরার বাংলাদেশের মহাপরিচালক আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদসহ দেশের শীর্ষ আলেমগণ।
নানান স্বপ্ন, নানান পরিকল্পনা নিয়ে আসা মাদরাসা ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা ফুযালাদের কেউ কেউ নিজ স্মৃতিচারণ করেছেন এবং অনুভূতি প্রকাশ করেছেন ‘পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম’ এর কাছে।
মাদরাসাতুস সাহাবা বালক-বালিকা শাখার মুহতামিম ও জিগাতলা ৬তলা কলনী মসজিদের খতিব মাওলানা আমিনুর রহমান পাথেয় টোয়েন্টিফোরকে বলেন—
‘আমি শেখ জনুরুদ্দীন রহ. দারুল কুরআন মাদরাসা থেকে ১৯৯৬ সালে ফারেগ হয়েছি। আজকে এখানে অনেক পুরানো সাথী-ভাইদের সাথে দেখা হচ্ছে, একসঙ্গে বসে খোশগল্প করছি, এটা আমার জন্য আনন্দের।
ছাত্র জীবনের অমূল্য স্মৃতি হয়ে আছে এই মাদারাসা। বিশেষ করে দাওরায়ে হাদীস পড়াকালীন দিনগুলো। এই জামিয়াতে পড়ার সেরাপ্রাপ্তি হলো দেশবরেণ্য অনেক আলেমদের আমরা একসঙ্গে শিক্ষক হিসাবে পেয়েছিলাম। বিশেষ করে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেব হুজুর, মাওলানা আব্দুল মতীন সাহেব হুজুর, মাওলানা ইসহাক ফরীদী সাহেব হুজুর, মাওলানা আসআদ আল হুসানী সাহেব হুজুর, ড. মাওলানা মুশতাক সাহেব হুজুরসহ আরো অনেকে। এমন সব মেধাবী ও যোগ্যতা সম্পন্ন চিন্তাশীল আলেমদের একসঙ্গে শিক্ষক হিসাবে পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।
অবিসংবাদিত বুযুর্গ মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেব হুজুরের কাছে আমরা পবিত্র বুখারী শরীফ পড়েছি। হুজুরের দরস খুবই প্রাণবন্ত ছিল। হুজুর খুব কম দিন মাদরাসায় এসে দরস দিতেন। বেশির ভাগ দিন আমরাই কিতাব নিয়ে হুজুর কাছে যেতাম। হুজুর দরস দিতেন ইকরার ঝিল মসজিদে।
ইলম তো অনেক আলেমের কাছ থেকেই শিখা যায়, তবে ইলম শিখার পাশাপাশি সাহস নিয়ে এগিয়ে যাওয়া, সমাজের জন্য কিছু করার চিন্তা আমরা ফরীদ সাহেব হুজুরের কাছ থেকেই পেয়েছি।
আমি ব্যক্তিগতভাবে ফরীদ সাহেব হুজুরের চিন্তা-চেতনায় প্রভাবিত। আর এজন্য হুজুরের প্রতিষ্ঠিত ‘ইকরা বাংলাদেশ’ এর পাঠ্যপুস্তক আমার প্রতিষ্ঠান মাদরাসাতুস সাহাবাতে পড়ানো হয়। আল্লাহ হুজুরের নেক হায়াত দান করুন।
দস্তারবন্দী সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আজ অনেক দিন পর প্রাণপ্রিয় জামিয়াতে পাগড়ী নিতে এসে ভালো লাগছে। পুরানো দিনগুলো মনে পড়ছে, সাথী-ভাইদের সাথে দেখা হচ্ছে, আসাতিযা কেরামের সোহবত পাচ্ছি, এতে আত্মতৃপ্তি লাভ করছি। এমন আয়োজন করা জন্য আমি শেখ জনুরুদ্দীন রহ. দারুল কুরআন মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে মোবারকবাদ জানাই।’
জামিয়া হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম বড় কাটারা মাদরাসার মুহতামিম ও মুফতি ফজলুল হক আমিনী (রহ.) এর জামাতা মাওলানা সাইফুল ইসলাম পাথেয় টোয়েন্টিফোরের কাছে স্মৃতিচারণ করে বলেন—
‘আমি শেখ জনুরুদ্দীন রহ. দারুল কুরআন মাদরাসা থেকে ১৯৯৮ সালে ফারেগ হয়েছি। ৯০ দশকে ঢাকা শহরে যে কয়কটি মাদরাসার সুনাম খ্যাতি ও পড়ালেখা ভালো ছিল তাদের মধ্যে একটি চৌধুরীপাড়া মাদরাসা। এই মাদরাসায় আমি মেশকাত ও দাওয়ারে হাদীস পড়েছি। এটা আমার ভাগ্য যে, আমি যখন এই মাদরাসার ছাত্র ছিলাম, তখনই জৌলস ও শুহরত সবচেয়ে বেশি ছিল। তাই বলতে পারি, আমরা এই জামিয়ার সেরা সময়কার ছাত্র।
এই মাদরাসায় শিক্ষক হিসাবে যাদের পেয়েছি তাদের প্রত্যেকেই ছিলেন অনুকরণযোগ্য। সহানুভূতি ও সহৃদয়তা ছিল তাদের সবার মধ্যে। যেমন মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেব হুজুর, মাওলানা আব্দুল মতীন সাহেব হুজুর, মাওলানা ইসহাক ফরীদী সাহেব হুজুর, মাওলানা আসআদ আল হুসানী সাহেব হুজুর, ড. মাওলানা মুশতাক সাহেব হুজুর, মাওলানা আব্দুস সালাম সাহেব হুজুর, মাওলানা দেলওয়ার সাহেব হুজুর, মুফতি মতিউর রহমান সাহেব হুজুরসহ আরো অনেকে। ওই সময় মাদরাসার মুহতামিম ছিলেন মাওলানা ইসহাক ফরীদী সাহেব (রহ.)।
আমাদের সকল শিক্ষকরাই দারুল উলুম দেওবন্দের বোধ-বিশ্বাস, চিন্তাগত প্রেরণায় উজ্জিবিত ছিলেন। এজন্য তখন শেখ জনুরুদ্দীন রহ. দারুল কুরআন মাদরাসা দেওবন্দের বিশ্বাস, জীবনধারা, মেজাজ, চেতনা, নীতি ও চিন্তার সুস্থ ধারার এক নতুন বিকাশ হয়ে ওঠেছিল।
আমার জীবনের অনেক আনন্দমুখর দিন কেটেছে এখানে। বিশেষ করে আমি যে বছর মেশকাতে ভর্তি হলাম, এর আগের রমজানে আওলাদে রাসূল, ফিদায়ে মিল্লাত সায়্যিদ আসআদ মাদানী (রহ.) এখানে এতেকাফের করেছিলেন। সারাদেশ থেকে উলামায়ে কেরাম এখানে এসেছিলেন। আওলাদে রাসূলের সাথে কাটানো এতেকাফের দিনগুলো খুব মনে পড়ে, মিস করি।’
এদিকে ৩০ সালা দস্তারবন্দী সম্মেলনের সভাপতি মসজিদ-ই-নূর ও শেখ জনুরুদ্দীন রহ. দারুল কুরআন মাদরাসার মুতাওয়াল্লী ইমাদুদ্দীন নোমান সবার প্রতি আন্তরিক দাওয়াত প্রদান করেছেন। সম্মেলন বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।
মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মাহফুজুল হক কাসেমী বলেন, ‘দস্তারবন্দীতে গত ৩০ বছরে যারা সফলভাবে উর্ত্তীণ হয়েছেন তাদের সবাইকে সম্মাননা পাগড়ী ও সনদ প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। প্রথম দিন ১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার কয়েকটি অধিবেশনে পাগড়ি প্রদান করা হবে। পাগড়ি পাবেন ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৩ সালের ফুযালাবৃন্দ। দ্বিতীয় দিন ২ ডিসেম্বর শুক্রবার পাগড়ি পাবেন ২০১৪ সাল থেকে শুরু করে ২০২২ সালের ফুযালাগণ।’