দুর্যোগ মোকাবিলায় উদাহরণ বাংলাদেশ

দুর্যোগ মোকাবিলায় উদাহরণ বাংলাদেশ

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: বাংলাদেশের দুর্যোগ মোকাবিলার ইতিহাসে ২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে করোনা মহামারি ছাড়াও দুটি ভয়াবহ বন্যা ও বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগ মোকাবিলা করেছে বাংলাদেশ।

এর মধ্যে ২০২০ সালে করোনা মহামারির মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় আম্পান বাংলাদেশে আঘাত হানে। আবহাওয়া অধিদপ্তর ঝড় আসার পাঁচ দিন আগে থেকে সতর্কসংকেত দিতে থাকে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও স্থানীয় সরকার বিভাগ উপকূলের মানুষকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসে। এতে বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষা পায়।

দুর্যোগের ঝুঁকি কমাতে কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা (ইউএনডিআরআর) ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার প্রকাশিত এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সাফল্যের বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে উঠে এসেছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ে চলমান জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন (কপ–২৮) উপলক্ষে গত রোববার ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস অব মাল্টি হেজার্ড আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেমস-২০২৩’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আম্পানের কাছাকাছি সময়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকে একটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। এতে প্রায় এক হাজার মানুষ মারা যান। দুর্যোগে মোজাম্বিকের এই অবস্থার বিপরীতে বাংলাদেশের সফলতার আরও কিছু চিত্র উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানার ছয় সপ্তাহ পরে বাংলাদেশে বন্যা আসে। ওই দুর্যোগের পূর্বাভাস সঠিকভাবে দেওয়ায় ৪৫ লাখ মানুষ আক্রান্ত হলেও সম্পদ ও জীবনের ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি। দেশে ওই সময় করোনা মহামারি চলমান থাকলেও দুর্যোগকবলিত মানুষকে খাদ্য ও পুনর্বাসন সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের আগাম পদক্ষেপের নিয়মও অনুসরণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, ‘আমরা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা পাচ্ছি। তারা আগাম সতর্কসংকেত দেওয়া ও দুর্যোগ মোকাবিলার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করছে। সরকারের দুর্যোগ মোকাবিলায় অভিজ্ঞতা ও নিষ্ঠার ফল হিসেবে এই সফলতা এসেছে।’

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা এসেছিল। তাতেও আগাম পূর্বাভাসব্যবস্থার কারণে জীবন ও সম্পদ রক্ষা পায়। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৪ মে ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশে আঘাত হানার আগে পূর্বাভাস ও সতর্কতার ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ আবার সাফল্য দেখায়। ওই ঝড় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানে। সেখানে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে বসবাস করে। ওই এলাকাতেই নিরাপদ স্থান তৈরি করে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেওয়া হয়। যার প্রশংসা করা হয়েছে বৈশ্বিক ওই প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ২০১৮ সালে দুর্যোগে জরুরি সাড়াবিষয়ক একটি তহবিল গঠন করে। ওই তহবিল দিয়ে সমুদ্রতীরবর্তী ১৩টি জেলায় অধিবাসীদের দুর্যোগ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে সহায়তা এবং উদ্ধার তৎপরতায় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। যেমন ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত করার পর রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি থেকে আক্রান্ত ১০টি জেলার ৩৬ হাজার মানুষকে সহায়তা দেওয়া হয়। তাদের শুকনো খাবার, পানি ও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশ ছাড়াও মিয়ানমারে আঘাত হানে। ওই ঝড়ে মিয়ানমারে কয়েক হাজার মানুষ মারা যান। কিন্তু বাংলাদেশ পাঁচ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র নিয়ে যাওয়া হয়। ওই ঝড়ে বাংলাদেশে পাঁচজনের মৃত্যু হয়।

প্রতিবেদনটিতে আগাম সতর্কতার বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে গিয়ে বলা হয়, বিশ্বের ৫২ শতাংশ মানুষ দুর্যোগের আগাম সতর্কসংকেত পান। দুর্যোগ আসার আগাম খবর না পাওয়ার কারণে আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়। অনেক দেশে সতর্কসংকেত জানার পরও তা প্রচারের ব্যবস্থাপনা নেই, উদ্ধার তৎপরতা চালানোর জন্য দক্ষ ও প্রয়োজনীয় জনবল নেই। যে কারণে দুর্যোগে এসব দেশের ক্ষয়ক্ষতি কমেনি। এখানেই সাফল্য দেখাতে পেরেছে বাংলাদেশ।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সফলতা দেখাচ্ছে। কিন্তু অতি উষ্ণতা এবং ভূমিকম্পের বিষয়েও প্রস্তুতি নিতে হবে। বিশেষ করে ভূমিকম্পের মতো বিপজ্জনক দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের পূর্বাভাসব্যবস্থা কাজ করে না। তাই প্রস্তুতি হিসেবে ভবন ও অবকাঠামোগুলোকে ভূমিকম্প–সহনশীল করা এবং উদ্ধার তৎপরতায় সক্ষমতা বাড়াতে হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *