দেশজুড়ে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা

দেশজুড়ে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারি বৃষ্টিপাত, পাহাড়ি ঢল ও দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে নদীর তীরবর্তী কয়েক শ গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সহস্রাধিক পরিবার।

দেশজুড়ে আগামী পাঁচ দিন বৃষ্টিপাত ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে।

বৃহস্পতিবার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আগামী সাত দিন দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকা অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় ভারি বর্ষণের কারণে ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করে আগামী তিন থেকে সাত দিন দেশের উত্তরাঞ্চলে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্রসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘনা অববাহিকায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। ভারি বর্ষণের ফলে আকস্মিক বন্যা হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। আজ শুক্রবার ময়মনসিংহ, ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের বেশির ভাগ জায়গায় এবং রংপুর ও খুলনা বিভাগের অনেক স্থানে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। পাঁচ দিন আবহাওয়া অপরিবর্তিত থাকবে। আজ ও আগামীকাল শনিবার দেশজুড়ে ভারি বর্ষণ হতে পারে।

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৩৮ সেন্টিমিটার বেড়েছে। নদীর তীরবর্তী তিনটি এলাকার ২৫টি বাড়ি এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গতকাল জেলার পুরাতন জেলখানা ঘাট শহর রক্ষা বাঁধের ১৫০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

রাতভর টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ৩৬টি গ্রাম লণ্ডভণ্ড এবং তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পৌরসভার দেড় শতাধিক পুকুরের ওপর দিয়ে তিন ফুট উঁচু পাহাড়ি ঢল প্লাবিত হয়েছে। দুই হাজার একর সবজিক্ষেত ডুবে গেছে। বাঁশখালী পৌরসভা, পুঁইছড়ি, শীলকূপ, চাম্বল, শেখেরখীল, বৈলছড়ি ও কালীপুর ইউনিয়নের ৩৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি বিপত্সীমার ২৪ সেন্টিমিটার এবং তিস্তার পানি ২৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা ও তিস্তার তীরবর্তী ৫০টি চরের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ধরলার ভাঙনে ভাটিতে থাকা ১৫ গ্রাম নিমজ্জিত হয়েছে। সারডোব বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৫০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত তিন দিনে ২০টি পরিবার ভিটাহারা হয়েছে।

ময়মনসিংহে টানা দুই দিনের প্রবল বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল আর নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে এর তীরবর্তী কয়েকটি গ্রাম তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ঘোষগাঁও ইউনিয়নের নয়াপাড়া, দিঘলবাগ, কালিকাবাড়ী গ্রামের মানুষ। বেড়িবাঁধ ভেঙে ভালুকাপাড়া ও রায়পুরের মানুষ এখন পানিবন্দি। হালুয়াঘাট পৌর শহরসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েকটি গ্রাম। উপজেলার ভুবনকুড়া ইউনিয়নের সন্ধ্যাকুড়া, কড়ইতলী, মহিষলাটি ও তেলিখালী এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। নতুন করে ধারা, ধুরাইল, নড়াইল, আমতৈলী, মহিষলাটি ও তেলিখালী এলাকায় পানি উঠতে শুরু করেছে।

হালুয়াঘাট উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, গত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ২২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। উপজেলার ৩২০ হেক্টর রোপা আমন ও ১১৫ হেক্টর সবজিক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে। উপজেলা মৎস্য অফিস জানায়, ৪৫ হেক্টর পুকুর ডুবে গেছে।

ভারি বর্ষণে কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার নিম্নাঞ্চলে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। মাতামুহুরী নদীতে আসতে শুরু করেছে পাহাড়ি ঢলের পানি। ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকলে পুরো এলাকা বন্যার কবলে পড়তে পারে।

গত দুই দিনের তুলনায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পানি আসা কিছুটা কমেছে। পাশাপাশি সব পয়েন্টে পানি বিপত্সীমার নিচ দিয়ে বইছে। জেলার ষোলঘর পয়েন্টে পানি বিপত্সীমার ৩৩ সেন্টিমিটার, পুরাতন সুরমা নদীর দিরাই পয়েন্ট ও লাউড়ের পয়েন্টে ৯৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ভারি বর্ষণে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কুমুদিনী হাসপাতাল ও বংশাই রোডে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছে সড়ক দিয়ে চলাচল করা হাজারো মানুষ।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সরকার উদয় রায়হান কালের কণ্ঠকে বলেন, আরো পাঁচ দিন বৃষ্টিপাত থাকবে। এই সময়ে দেশের প্রধান সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাবে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মুহুরী, খোয়াই ও কংস নদীর পানি বিপত্সীমার ওপরে রয়েছে। শেরপুর, নেত্রকোনা ও ফেনী জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম জানান, আজ সারা দেশেই বৃষ্টি হবে। তবে রাজশাহী, ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। দুই দিন অব্যাহত থেকে বৃষ্টিপাত কমে এলেও পুরোপুরি বন্ধ হবে না। কমপক্ষে পাঁচ দিন হালকা অথবা থেমে থেমে বৃষ্টি হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *