নবীজী ছিলেন রহমাতুল লিল আলামিন। গোটা বিশ্বের রহমতস্বরূপ। সমগ্র পৃথিবীর মানুষের জন্যই তিনি কাঁদতেন। মানুষকে ভালোবাসতেন। মানুষের হৃদয়ের পরিবর্তন নিয়েই ছিলো নবীজীর মূল কাজ ও দর্শন । দেশের প্রতিও নবীজীর মমতা ছিল। তাই ছোট বেলায় বড় হয়ে ওঠার গল্পটা যে এলাকার সঙ্গে জুড়ে আছে সেই মক্কার প্রতিও ছিলো গভীর ভালোবাসা ও প্রেম। মক্কার মাটির প্রতিও তার দরদ ছিলো। কারণ, এ মাটিতে কেবল তার জন্মই নয়। বংশীয় ইতিহাস-ঐতিহ্যই সম্পৃক্ত নয়, পবিত্র কা’বা শরীফও সেখানে অবস্থিত। হিজরতের সময় সেই কা’বাকে ছেড়েও তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন মদীনায়। হৃদয়বিগলিতচিত্তে হযরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বার বার ফিরে তাকাচ্ছিলেন মক্কার দিকে। মক্কার প্রান্তর পাহাড়, বৃক্ষের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন-ইয়া মক্কাতু আনা উহিব্বুকি। ‘হে মক্কা! আমি তোমাকে ভালোবাসি’।
নিজের আবেগ আর ভালোবাসার কী সত্য সম্বোধন নবীজীর। নিজের আপনালয়, মাতৃভূমি ও পৈতৃক ভিটেমাটি কীভাবে ভুলে যাবেন তিনি। তাই মক্কা ছেড়ে যাওয়ার সময় বা মক্কা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশপ্রদানেও তার খারাপ লাগাটা স্বাভাবিক। আল্লাহর নির্দেশে সবকিছু সহজভাবে পালন করে যান রহমতের নবী। মদীনাওয়ালারা নবীজীকে গ্রহণ করেছিলেন ‘তালাআল বাদরু আলাইনা’ বলে।
অষ্টম হিজরিতে প্রায় কোনো যুদ্ধ ছাড়াই বিজয়ীবেশে মক্কায় প্রবেশ করার সময়ও তার হৃদয়ে ছিলো নিজের দেশে ফিরে আসার প্রেমময় এক ব্যাঞ্জনা। সাধারণ ক্ষমার কথা ঘোষণা করে তিনি বলেছিলেন, লা তাছরীবা আলাইকুমুল ইয়াওম ‘তোমাদের প্রতি আজ কোনো প্রতিশোধ নেই।’ অতীতের ১৩টি বছর কী অসম যন্ত্রণার শিকার হয়ে নবীজী মক্কা ছেড়েছিলেন। মক্কা বিজয়ের দিনে তার কণ্ঠে আগের কোনো রাগের চিহ্ন নেই। ঘাত-প্রতিঘাত বা প্রতিশোধের উচ্ছ্বাস নেই। কেবলই ছড়িয়ে দিলেন মক্কাবাসীর জন্য একরাশ ভালোবাসা। মক্কার সাধারণ মানুষেরা আপ্লুত হয়ে দেখলো নবীজীর চরিত্রমাধুরিমা ও দেশের প্রতি মমতার এই আবহগাথা।
দেশকে ভালোবাসলে, ক্ষতি না হতে দিলে, মানুষের কল্যাণে এগিয়ে গেলে এতে নিজের কোনো ক্ষতি হয় না। আল্লাহ তাআলা আমাদের দেশকে ভালোবাসার তাওফিক দিন। আমীন।
লেখক : শিক্ষক ও সাংবাদিক
mkadir1983@gmail.com