২২শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ , ২৯শে শাবান, ১৪৪৪ হিজরি

দেশে বছরে অপচয় ১৬ কোটি মানুষের তিন মাসের খাবার

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : যুদ্ধ, মহামারি, নিষেধাজ্ঞা, এবং জলবায়ূর বিরূপ প্রভাবের কারণে বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিষয়টিকে আমলে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সমস্ত অনাবাদি ভূমি চাষের আওতায় নিয়ে আসার জন্য বারবার আহ্বান জানিয়েছেন।

এই খাদ্য নিরাপত্তার শঙ্কার মধ্যেও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর একটি তথ্য বেশ উদ্বেগ তৈরি করে। দেশে বছরে ১.৪৫ কোটি টন খাদ্য অপচয় হয়। যা ১৬ কোটি মানুষের তিন মাসের খাবারের সমপরিমাণ।

বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির খাদ্য অপচয় সংক্রান্ত তথ্য বলছে, ফসলের মাঠ থেকে রান্নাঘর পর্যন্ত আসতে প্রতিবছর দেশে ৩৭ লাখ টনের বেশি খাবার নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে, বাড়িতে খাবার অপচয়ের বার্ষিক পরিমাণ প্রায় ১.০৭ কোটি টন। বার্ষিক অপচয় ও নষ্টের মোট পরিমাণ ১ কোটি ৪৫ লাখ টন।

সনাতন পদ্ধতিতে ফসল সংগ্রহের কারণে প্রতিবছর মাড়াই পর্যায়ে উৎপাদিত ধান, গম, ভুট্টা, আলু, নানান রকম ডাল, সরিষা, হলুদ ও মরিচের ৭.৩৩% নষ্ট হয়। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুসারে, ২০১৮ সালে নষ্ট ও অপচয় হওয়া ফসলের বাজারমূল্য ছিল প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, শস্যক্ষেত থেকে স্থানীয় বাজার পর্যন্ত ফসল নিতে দেশের ৪৫.৭১% কৃষককে এখনো ভগ্নপ্রায় ও কাচা রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। ফলে বিপুল পরিমাণ খাদ্যপণ্যের অপচয় হচ্ছে। অন্যদিকে মাড়াই পর্যায়ে আউশ ধানে সর্বোচ্চ ৮.৯৩% ক্ষতি হয়; আর সবচেয়ে কম ৫.৮২% ক্ষতি হয় ভুট্টায়।

এছাড়া সংরক্ষণাগারের সংকটের কারণেও দেশে বিপুল পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য অপচয় হচ্ছে। বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বেসরকারি কোল্ড স্টোরেজ আছে ৪১৪টি, যার ৯৫% সক্ষমতা ব্যবহার হয় আলু সংরক্ষণে। বাকি ৫% ফল ও মাছ সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়।

খাদ্য অধিদপ্তরের সংরক্ষণাগার নির্মাণ প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, অধিদপ্তরের বিভিন্ন গুদামে মোট ১৮ লাখ টন চাল ও গম সংরক্ষণের ক্ষমতা রয়েছে। এসবের অধিকাংশই এখন ভগ্নদশার, ভেতরের স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের কারণে গোডাউনের ভেতরেই অনেক খাবার পচে যাচ্ছে।

অন্যদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে খাদ্য উৎপাদনের সামজস্যতা এখনো তৈরি হয়নি। গত ১১ বছরে ধান ও গমের মতো প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন ১৩.৩৬% বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৯০ লাখ টনে। একই সময়ে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে ১৪.৬৬% হারে।

সবমিলিয়ে দেশে খাদ্য অপচয় অশনি সংকেতই। তবে খাদ্য অপচয় রোধে সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ সক্ষমতা বাড়াতে সরকার একাধিক প্রকল্পের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব সায়েদুল ইসলাম।

তিনি সংবাদমাধ্যম টিবিএসকে বলেন, “বিভাগীয় পর্যায়ে ফল ও সবজি সংরক্ষণে শূন্য কার্বন নিঃসরণ প্রযুক্তির হিমাগার তৈরি করা হবে। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলেও- টানা সাতদিন পর্যন্ত পচনশীল পণ্য এখানে টাটকা থাকবে। পাশাপাশি ৩ হাজার ২০ কোটি টাকার কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পও খাদ্যের অপচয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমাবে।

তিনি আরও বলেন, “দ্রুত নগদ অর্থের দরকার থাকায় ফসল সংগ্রহের মওসুমে অনেক কৃষককেই নামমাত্র মূল্যে ফসল বিক্রি করতে হয়। এ জন্য সরকার তাদের কৃষি ঋণ দেবে, যাতে তারা পরবর্তীতে বুঝেশুনে ভালো দামে বিক্রি করতে পারে। এ ছাড়া, কৃষকদের বাজার প্রবেশের সুবিধা বাড়াতে আগামী মার্চ থেকে একটি কৃষি রূপান্তর প্রকল্প শুরু করবে মন্ত্রণালয়।”

শেয়ার করুন


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ১৯৮৬ - ২০২২ মাসিক পাথেয় (রেজিঃ ডি.এ. ৬৭৫) | patheo24.com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com