দেশে বিলুপ্তির পথে শকুন, বর্তমানে ২৬০টি শকুন আছে
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, দেশে বিভিন্ন কারণে ৯৯ শতাংশ শকুন বিলুপ্ত হয়েছে। বর্তমানে দেশে ২৬০টি শকুন আছে। তাই সরকার শকুনের সংখ্যা বৃদ্ধিতে কাজ করছে। তিনি বলেন, শকুন সংরক্ষণে সরকার ২০১০ সালে দেশব্যাপী শকুনের জন্য ক্ষতিকারক ওষুধ ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ করেছে। দেশব্যাপী প্রাণীর চিকিৎসায় কিটোটিফেনও নিষিদ্ধকরণের চিন্তা-ভাবনা চলছে। শনিবার আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস উপলক্ষে বন অধিদফতর আয়োজিত অনলাইন সেমিনারে সরকারি বাসভবন থেকে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণে প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী শকুনের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু দিন দিন এই উপকারী পাখিটি প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। বিলুপ্তপ্রায় এ শকুনকে বাঁচাতে গণসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার শকুন সংরক্ষণে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এটি সফল করতে নিজ নিজ স্থান থেকে আমাদের সকলকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বনমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, ২০১৩ সালে ‘বাংলাদেশ জাতীয় শকুন সংরক্ষণ কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। ২০১৪ সালে দেশের দুটি অঞ্চলকে শকুনের জন্য নিরাপদ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৬ সালে ১০ বছর মেয়াদি (২০১৬-২০২৫) বাংলাদেশ শকুন সংরক্ষণ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের শকুন রক্ষা করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি কাঠামো হিসেবে কাজ করছে। এই কর্মপরিকল্পনাকে অগ্রাধিকার দিয়েই শকুন সংরক্ষণে বর্তমানে সকল ধরণের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বনমন্ত্রী আরও বলেন, ২০১৫ সালে শকুনের প্রজননকালীন বাড়তি খাবারের চাহিদা মেটানোর জন্য হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে ও সুন্দরবনে দুটি ফিডিং স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৬ সালে অসুস্থ ও আহত শকুনদের উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দিনাজপুরের সিংড়ায় একটি শকুন উদ্ধার ও পরির্চযা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। পরিবেশমন্ত্রী আরও বলেন, শকুনের আবাসস্থলের দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ ও শকুনের নিরাপদ এলাকার ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে শকুন সংরক্ষণ দল গঠন করা হয়েছে। সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই দলগুলোর সহায়তায় মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। সরকারের বহুমুখী পদক্ষেপের ফলে হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গায় ২০১৪ সালে শকুনের প্রজনন সফলতা ছিল ৪৪ শতাংশ, যা ২০২০ সালে বৃদ্ধি পেয়ে ৫৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক বলে আমি মনে করি।
ওয়েবিনারে বন অধিদফতরের প্রধান বনসংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সচিব জিয়াউল হাসান, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ড. মো. বিল্লাল হোসেন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বনসংরক্ষক মিহির কুমার দো, গ্লোবাল থ্রেটেন্ড স্পিসিজ অফিসার এবং রয়্যাল সোসাইটি ফর দ্য প্রটেকশন অব দ্য বার্ডসের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ক্রিস বাউডেন এবং আন্তর্জাতিক পাখি গবেষক ড. এনাম উল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ রকিবুল আমীন।