পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে ৭০ শতাংশ মৃত্যু হচ্ছে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগ বা ক্যানসারের মতো অসংক্রামক রোগে। এর মধ্যে শুধু ১০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয় ডায়াবেটিসে। রোগটির মহামারি চলছে।
গতকাল রোববার ডায়াবেটিস চিকিৎসার জাতীয় নির্দেশিকা প্রকাশনা অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক অধ্যাপক মো. রোবেদ আমিন ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে এই তথ্য দেন। অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ও জাপানের দাতা সংস্থা জাইকা যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক আখতার হোসেন বলেন, ইনসুলিন কোনো বাণিজ্যিক পণ্য নয়। অথচ যেসব মানুষের ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ইনসুলিন প্রয়োজন, তাঁদের ৫০ শতাংশ তা পান না। আফ্রিকার দেশগুলোতে সাতজনের একজন ইনসুলিন পান। ইনসুলিন সহজপ্রাপ্য না হওয়ার জন্য শুধু ওষুধ কোম্পানিগুলো দায়ী নয়; এর জন্য নীতিনির্ধারক, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, নাগরিক সংগঠন—সবারই দায় আছে।
প্রবাসী এই ডায়াবেটিস-বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এই অঞ্চলের মানুষের ওপর ডায়াবেটিসের ওষুধের গবেষণা হয়নি। ওষুধের সঠিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীভিত্তিক ওষুধের গবেষণা হওয়া দরকার। আমাদের গবেষণায় গুরুত্ব দিতে হবে।’
দেশে ডায়াবেটিস চিকিৎসায় সর্বজনগ্রাহ্য কোনো নির্দেশিকা ছিল না। বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁদের নিজস্ব নির্দেশিকা ব্যবহার করতেন। এই প্রথম ডায়াবেটিস চিকিৎসায় জাতীয় নির্দেশিকা তৈরি হলো। এটি তৈরি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি। এতে সহায়তা দিয়েছে জাইকা। অনুষ্ঠানে বলা হয়, এটি চূড়ান্ত কোনো নির্দেশিকা নয়। সময়ের প্রয়োজনে এই নির্দেশিকায় পরিবর্তন ও সংশোধন আসবে।
নির্দেশিকায় চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সাতটি অধ্যায় রয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রতিটি অধ্যায়ের লেখকেরা সারবস্তু উপস্থাপন করেন। প্রথম অধ্যায় উপস্থাপন করেন বারডেমের চিকিৎসক বিশ্বজিৎ ভৌমিক। প্রথম অধ্যায়ে বলা হয়েছে, দেশে প্রায় ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ২০ থেকে ৮০ বছর বয়সী ১৪ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ এই রোগে ভুগছেন। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে অষ্টম। বর্তমান ধারায় চলতে থাকলে ২০৪৫ সালে দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা হবে ২ কোটি ২৩ লাখ। তখন বিশ্বে অবস্থান হবে সপ্তম।
ডায়াবেটিস চিকিৎসার মূল অধ্যায় উপস্থাপন করেন বারডেমের চিকিৎসক ফারিয়া আফসানা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে টাইপ-১ ডায়াবেটিসে ভোগা সব রোগীকে বিনা মূল্যে ইনসুলিন দেওয়া হচ্ছে, এমন নজির বিশ্বের আর কোথাও নেই।
সপ্তম অধ্যায় উপস্থাপনার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধ্যাপক শাহাজাদা সেলিম বলেন, ডায়াবেটিসে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন। সুতরাং ডায়াবেটিস প্রতিরোধে বেশি জোর দেওয়া প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি বক্তব্য দেন। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, খুবই উত্তেজনাকর খবর হচ্ছে ডায়াবেটিস ভালো হয়ে যেতে পারে। এখনো নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না, তবু শোনা যাচ্ছে যে ডায়াবেটিসও আরোগ্য যোগ্য।
বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্দেশিকায় গবেষণা বিষয়ে একটি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত থাকা দরকার ছিল।
অন্যদিকে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এনায়েত হোসেন বলেন, ডায়াবেটিস চিকিৎসার জাতীয় নির্দেশিকাটি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, তা জানার জন্য নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক মো. রোবেদ আমিন। তিনি বলেন, চিকিৎসকেরা প্রতিদিন অসংখ্য ব্যবস্থাপত্র লিখছেন। এসব ব্যবস্থাপত্রে নানা তারতম্য বা ভিন্নতা দেখা যায়। এর অন্যতম একটি খারাপ দিক হচ্ছে, এতে রোগীর চিকিৎসা ব্যয় বাড়ে।
সূত্র : প্রথম আলো