ধান-চাল সংগ্রহে ব্যর্থ মিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চায় সরকার
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আগামী ৩১ আগস্ট সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শেষ হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেও যারা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান-চাল সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছে সেসব চালকল মালিক বা মিলারদের বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তা করছে খাদ্য অধিদফতর। কিন্তু চালকল মালিকরা বলছে, বাজার দরের চেয়ে সরকারি ক্রয় মূল্য কম হওয়ায় চাল সরবরাহ সম্ভব হয়নি। সেজন্য তারা আরও একমাস সময় চেয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে সরকার ২০ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে ৮ লাখ টন ধান, ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল ও দেড় লাখ টন আতপ চাল রয়েছে। কেজিপ্রতি ২৬ টাকা দরে ধান আর ৩৬ টাকা দরে সিদ্ধ চাল ও ৩৫ টাকা দরে আতপ চাল কেনার দাম নির্ধারণ করা হয়। সে লক্ষ্যে চালকল মালিকরা সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হোন। চুক্তি অনুযায়ী গত ২৬ এপ্রিল থেকে বোরো ধান কেনা শুরু করেন। আর ৭ মে থেকে শুরু করা হয় চাল সংগ্রহ অভিযান।
খাদ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে দেওয়া হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, গত ১৮ আগস্ট পর্যন্ত পূর্ব নির্ধারিত ৮ লাখ টন বোরো ধান কেনার কথা থাকলেও মাত্র ১ লাখ ৮৯ হাজার ৪২৩ মেট্রিক টন সংগ্রহ হয়েছে। ১০ লাখ টন বোরো সিদ্ধ চালের মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৪ লাখ ৯০ হাজার ২৬৭ মেট্রিক টন। আর দেড় লাখ টন বোরো আতপ চালের মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে ৬৭ হাজার ৯২৯ মেট্রিক টন।
এই প্রেক্ষাপটে বোরো সংগ্রহে অসহযোগিতা করা বা সরকারি ধান চাল সংগ্রহে ব্যর্থ হওয়া চালকল মালিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পথে যাচ্ছে খাদ্য অধিদফতর। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, এরই মধ্যে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠিও পাঠিয়েছে সংস্থাটি।
ওই চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে দেশে ধান চাল সংগ্রহে যদিও কিছুটা প্রতিকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। এই পরিবেশের মধ্যে যেসব সিদ্ধ ও আতপ চাল সংগ্রহে চালকল মালিকরা সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছেন এবং চুক্তি অনুযায়ী পুরো চাল সরবরাহ করেছেন বা করবেন সেসব চালকল মালিকদের খাদ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে ইতিবাচক মূল্যায়ন করা হবে। আর যেসব চালকল মালিক চুক্তি সম্পাদনে আদিষ্ট হয়েও চুক্তি করেননি তাদের লাইসেন্স স্থগিতের বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, যেসব চালকল মালিক চুক্তি অনুযায়ী সিদ্ধ ও আতপ চাল সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছেন বা হতে যাচ্ছেন এবং সরকারি সংগ্রহের লক্ষ্য অর্জনে অসহযোগিতা করছেন, সংগ্রহ মৌসুম শেষ হওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে চুক্তিপত্র ও চালকল লাইসেন্স ইস্যু সংক্রান্ত বিধি-বিধানসহ প্রাসঙ্গিক আইন বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সারওয়ার মাহমুদ বলেন, ‘অন্যান্য বছরের চেয়ে সবচেয়ে কম ধান-চাল সংগ্রহ হয়েছে এবার। যদিও পরিবেশ অনেকটাই বৈরি। তারপরেও অর্ধেকও সংগ্রহ করা যায়নি। তাই যারা চুক্তি করেও ধান-চাল সংগ্রহ করেননি আইন অনুযায়ী কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা দেখা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে নির্ভর করবে কে কতটা চুক্তি ভঙ্গ করেছেন।’
এদিকে কেন ধান চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি? এমন প্রশ্ন ছিল চালকল মালিকদের সামনে। জবাবে চালকল মালিকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক এ কে এম লায়েক আলী বলেন, ‘একদিকে করোনাভাইরাস, অন্যদিকে আম্পান বয়ে গেল। আবার লাগাতার বৃষ্টি-বন্যা, এমনকি প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবার ধান চাল সংগ্রহে বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাওর এলাকা ছাড়া বন্যায় সারাদেশে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। লাগাতার বৃষ্টির কারণে অনেক মিলে ধান থেকে চাল সংগ্রহও কঠিন ছিল। সরকারের নির্দেশ মত চাল সংগ্রহ করতে গেলে যে ধানের দরকার বাজারে তারও স্বল্পতা ছিল। তাছাড়া বাজার থেকে এখন চাল কিনলে আমাদের কেজিপ্রতি ৪ টাকা লোকসান দিতে হবে।’
নিজেদের ব্যর্থতার দায় অনেকটা কৃষকের উপরে চাপিয়ে দেন চালকল মালিকদের এই নেতা। তিনি বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে যখন করোনার প্রার্দুভাব বেড়ে যায় তখন দেশে দুর্ভিক্ষের কথা চিন্তা করে চাষিরা ধান-চাল মজুত করেছেন। যে কারণে বাজারে ধান সংকট ছিল। আর এজন্যই বাজারে চালের দাম বেড়েছে। এছাড়া বাজারে এখনও চালের সংকট রয়েছে। এসব কারণে আমরা সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণে ধান-চাল সংগ্রহ করতে পারিনি।’
সরকারের ধান চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আরও এক মাস অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় চান তারা। লায়েক আলী বলেন, ‘আমরা অনুরোধ করেছি, আবহাওয়া ভালো হলে এবং সেপ্টেম্বর মাস সময় দিলে লক্ষ্য পূরনের চেষ্টা করব। এখন সরকার যদি আমাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়, চুক্তি অনুযায়ী তা নিতেই পারে। তবে এই ব্যর্থতা থেকে উত্তরণে আমরা সরকারের সহযোগিতা চাই।’
এদিকে, ধান-চাল সংগ্রহের জন্য আরও সময় বাড়ানো হবে কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সারওয়ার মাহমুদ বলেন, ‘আলোচনা চলছে। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ৩১ আগস্টের পর যেকোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’