ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে তিস্তা, সিকিমে সেনাসহ নিখোঁজ শতাধিক

ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে তিস্তা, সিকিমে সেনাসহ নিখোঁজ শতাধিক

সিকিমে ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে তিস্তা। বুধবার (৪ অক্টোবর) ভোরে ভারী বৃষ্টির জেরে লোনক হ্রদের পানি প্রবল বেগে ছুটে আসে তিস্তায়। ফলে সিকিমে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। যতই সময় যাচ্ছে সেখানকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সেখানে ১৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সিকিমের সরকারি সূত্র অনুযায়ী, এখনও ২২ জন সেনাসহ অন্তত ১২০ জন নিখোঁজ রয়েছে।

স্থানীয় কর্মকর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বুধবার সকালে ২৩ সেনা নিখোঁজ হয়। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত একজনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ওই সেনার শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল বলে সেনা সূত্র নিশ্চিত করেছে। এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ১৪টির মতো ব্রীজ ধসে পড়েছে। এছাড়া রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়েছেন তিন হাজারের বেশি পর্যটক।

উত্তর সিকিমের লোনাক হ্রদের ওপর ভারীর বৃষ্টির কারণেই এই বিপর্যয় ঘটেছে। এদিকে আকস্মিক বন্যার পানির স্রোতে সিকিমের চুংথাম বাঁধ ভেঙে গেছে। সে কারণেই অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেছে তিস্তার পানি। নদীর তাণ্ডবে আশপাশের এলাকা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। পূজার আগে সিকিমের এই বিপর্যয়ের কারণে সেখানে ঘুরতে যাওয়া বহু পর্যটক আটকে পড়েছেন প্রতিবেশী রাজ্যে।

পশ্চিমবঙ্গের অন্তত দু’হাজার পর্যটক সিকিমে আটকা পড়েছেন বলে জানা গেছে। জাতীয় সড়কে যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে। ফলে আপাতত ফেরার পথও বন্ধ। রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিকিম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

বাস, ট্রেন এবং বিমানে করে পশ্চিমবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে পর্যটকরা বেড়াতে যান সিকিমে। প্রতিবার পূজার আগে সেখানে পর্যটকদের ভিড় আরও বাড়ে। কিন্তু বুধবার সকাল থেকেই অন্য এক সিকিমকে দেখলেন পর্যটকরা। তিস্তায় আকস্মিক বন্যার কারণে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে পাকিয়ং, গ্যাংটক, নামচি এবং মঙ্গন জেলার। ভেসে গেছে বহু সেতু। কিছু জায়গায় পানির স্রোতে সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে পড়েছে বড় বড় বিল্ডিং।

কাদা-মাটিতে চাপা পড়েছে বহু বসতি, রাস্তাঘাট, সেনাছাউনি। পরিস্থিতি জরিপ করে আগামী ৮ অক্টোবর পর্যন্ত পাকিয়ং, গ্যাংটক, নামচি এবং মঙ্গনের সব স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চালু করা হয়েছে একাধিক জরুরি পরিষেবার নম্বর।

এদিকে তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বুধবার তিস্তা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে। তবে রাত ১০টায় তিস্তার পানি কমে গিয়ে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণের ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বুধবার (৪ অক্টোবর) রাত ১০টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২দশমিক ৫ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। রাত ৮টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটা ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধার উপজেলার তিস্তা চর অঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করে। চরের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। চলাচলের দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়।

এর আগে হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে নিম্নাঞ্চলে হুহু করে পানি প্রবেশ করে। দিনভর বন্যার আতঙ্কে সাধারণ মানুষের দিন কেটেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *