লাল-সুবজ কাপড়ে তৈরি মঞ্চ, চারদিকে উড়ছে শত শত রঙিন বেলুন। এমন উৎসবের আবহে বছরের প্রথমদিন নতুন বই হাতে নিল স্কুল শিক্ষার্থীরা। এবার চার কোটি ৩৩ লাখ ৫৩ হাজার ২০১ জন শিক্ষার্থীকে ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার বই ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ব্রেইল বই, পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের তাদের নিজেদের ভাষায় লেখা প্রাক-প্রাথমিকের বই ও শিক্ষা উপকরণ এবং শিক্ষকদের শিক্ষক নির্দেশিকা দেয়া হয়েছে। আট বছরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ২২৫ কোটি ৪৫ লাখ ১১ হাজার ৭৫০টি বই করেছে সরকার। শিক্ষামন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আগে তিন মাসেও বাচ্চারা বই হাতে পেত না, অনেকেই ঝরে পড়ত। এখন বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীরা বই পেয়ে খুশি হয়। এক সময় ৩৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণির আগে এবং ৪২ শতাংশ নবম শ্রেণি পার না হয়েই ঝরে পড়ত।
সময়মত বই পাওয়া এটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সরকার সেটা করে দেখিয়েছে। কোনো সরকারকেই এ আম মানুষের কথা ভুলে যাওয়া উচিত নয়। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে।
আগের সিলেবাসে অনেক ত্রুটি ধরা পড়েছিল। ইসলামি দলগুলোও অনেকগুলো অভিযোগ দায়ের করেছিলো শিক্ষামন্ত্রীর দফতরে। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামাসহ অনেকেই তখন বিরোধিতা করেছিল। সরাসরি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদও কথা বলে সিলেবাসে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার অনুরোধ জানান। কথা রেখেছেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী।
২০১৭ সালের নতুন বইয়ে এসেছে বেশ কিছু পরিবর্তন। এতে অভিভাবক ও ইসলামি মহলে সন্তুষ্টি দেখা গেছে। পরিবর্তনের এই পরিক্রমা দেখতে পেয়ে সরকার তাদের কথা শুনেছে বলে স্বস্তিবোধ করেছেন।
২০১৭ সালের পাঠ্যপুস্তক যাচাই করে দেখা যায়, দ্বিতীয় শ্রেণিতে নবী মুহাম্মদ সা. সংশ্লিষ্ট গল্প ‘সবাই মিলে করি কাজ’, তৃতীয় শ্রেণিতে ‘খলিফা হযরত আবুবকর’ এবং চতুর্থ শ্রেণিতে খলিফা হযরত ওমর রা. এর সংক্ষিপ্ত জীবনী পুনরায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
কবি কাজী কাদের নেওয়াজের লেখা বাদশাহ আলমগীরের মহত্ত্ব প্রকাশ করে ‘শিক্ষা গুরুর মর্যাদা’ নামক কবিতাটি ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া যুক্ত করা হয়েছে মুসলমানদের শেষ নবী সংশ্লিষ্ট ‘বিদায়হজ’ এবং মুসলিম যোদ্ধা মীর তীতুমীরের জীবন কাহিনী।
‘সততার পুরস্কার’, মুসলিম দেশ মিশর ভ্রমণকাহিনী ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ পাঠ্যটি ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
৭ম শ্রেণির বইয়ে মুসলমানদের শেষ নবীর সংক্ষিপ্ত জীবনী ‘মরু ভাস্কর’ প্রবন্ধটি পুনরায় যুক্ত করা হয়েছে।
৮ম শ্রেণির বইয়ে দুইজন মুসলিম লেখকের কবিতা ‘প্রার্থনা’ ও ‘বাবরের মহত্ত্ব’ ২০১৭ সালে নতুন সিলেবাসে দুটো কবিতাই আবার যুক্ত করা হয়েছে। নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বইয়ে বেশকিছু পরিবর্তন আছে শাহ মুহাম্মদ সগীরের লেখা ‘বন্দনা’ কবিতাটি আনা হয়েছে। মহাকবি আলাওলের লেখা ‘হামদ’ নামক কবিতাটি।
আদিব সৈয়দ
ঢাকা।