১৫ই আগস্ট, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ , ৩১শে শ্রাবণ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ , ১৬ই মহর্রম, ১৪৪৪ হিজরি
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ‘নদী দূষণের স্বাস্থ্যগত প্রভাব’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত নদীকথনে অংশগ্রহণকারীগণ অভিযোগ করেছেন, এখন নদীর পানি পরিস্কার হলেও দূষিত। এই দূষিত পানি পান করার কারণে মানুষের অনেক ধরনের পানিবাহিত রোগ হচ্ছে এবং শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিচ্ছে। তাই নদীকে দূষণমুক্ত করতেসচেতনতা বাড়াতে হবে। এজন্য সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে।
সোমবার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী বসিলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংলগ্ন উন্মুক্ত স্থানে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়ামের দূষণবিরোধী অ্যাডভোকেসি প্রকল্পের আয়োজন করা হয়।
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় নদীকথনে অংশ নেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রাক্তন আঞ্চলিক উপদেষ্টা ডা. আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হাসনাত এম আলমগীর, পলিসি অ্যান্ড ফুড সিস্টেম এট গ্লোবাল এলাইন্স ফর ইমপ্রুভড নিওট্রিশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মন্দিরা গুহ নিয়োগী, নারী মৈত্রীর সার্ভিস প্রমোটর শাহীনুর আক্তার, কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি মাইনউদ্দীন আহম্মেদ, নদীপাড়ের কম্যুনিটির প্রতিনিধি মোহম্মদ মানিক হোসেন প্রমূখ।
নদীকথনে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, একটা দেশের সম্পদ হলো নদী এবং নদীর সাথে মানুষের জীবনযাত্রা অনেক দিক থেকে সম্পর্কিত। তবে এই নদী বিভিন্নভাবে দূষিত হচ্ছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। তাই নদীকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে নদীকে যেমন রক্ষা করা যাবে ঠিক তেমনি স্বাস্থ্যগত সমস্যারও সসমাধান করা সম্ভব হবে। আমাদের নদী রক্ষা না করতে পারলে আমাদের নদীমাতৃক দেশকে রক্ষা করা যাবে না। দেশের প্রাণকেন্দ্র ঢাকাকে বাঁচাতে হলে বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে হবে।
ডা. আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, নদী দূষণ অর্থাৎ নদীর পানি দূষণ হয় রাসায়নিক পদার্থ থেকে এবং কৃষিকাজে ব্যবহৃত কীটনাশক পানিতে মিশে, এই দূষিত পানি পান করার ফলে মানুষের মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে প্রজননতন্ত্র পর্যন্ত ক্ষতি হয়। সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয় কিডনি এবং যকৃৎ। শিশুদের হাঁপানি, হৃদপিন্ড, শরীরিক প্রতিবন্ধকতা এবং অন্যান্য পানিবাহিত রোগ হয়। তাই কোনো কোনো সময় কি পরিমাণে ও কোন খাত থেকে এই রাসায়নিক ও কীটনাশক পানিতে নির্গত হয় তা গবেষণার মাধ্যমে তুলে আনা এবং সে অনুযায়ী নদী দূষণ রোধে পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত।
শাহীনুর আক্তার বক্তব্যে বলেন, আমরা নদীপাড়ের এলাকার জনগণের স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরিতে কাজ করে থাকি। আমাদের উঠান বৈঠক কার্যক্রমে পরিবেশ রক্ষা বিশেষ করে নদী দূষণ রোধের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে এলাকার জনগণের সচেতনতার জন্য আমরা কাজ করব। কারণ সরকারের পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।
অধ্যাপক হাসনাত এম আলমগীর বলেন, নদী দূষণ ও জনস্বাস্থ্যে এর প্রভাব বিষয়ে বিভিন্ন সেক্টরের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে গবেষণা পরিচালনা করতে হবে এবং গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল নদী দূষণবিরোধী নীতি প্রণয়ন ও সংস্কারের জন্য অ্যাডভোকেসির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া দূষণ বিরোধী চলমান কার্যক্রমগুলো জোরদার করতে হবে।
নদী দূষণের স্বাস্থ্যগত প্রভাব প্রসঙ্গে মন্দিরা গুহ নিয়োগী বলেন, নদীর পানি দূষিত হওয়ার কারণে তা খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাবারে চলে আসে তখন তা শিশুদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা এবং অপুষ্টির সমস্যা তৈরি করে। তাই নদীদূষণ রোধে জনসচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।