পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ। তাঁর শৈশবের নাম ছিল মুহাম্মদ আলি জিন্নাহভাই। বাবার নাম জিন্নাহভাই পুনজা। তিনি ছিলেন গুজরাটি ব্যবসায়ী। আর মায়ের নাম মিঠাবাই। জিন্নাহভাই পুনজার আদিবাস ছিল গোন্ডাল রাজ্যের পিনালি গ্রামে। বিয়ের পর জিন্নাহভাই পুনজা ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে সপরিবারে করাচিতে বসবাস শুরু করেন। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ছিলেন একাধারে একজন আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯১৩ সাল থেকে শুরু করে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা পর্যন্ত জিন্নাহ নিখিল ভারত মুসলিম লীগের নেতা ছিলেন।
স্বাধীনতার পর তিনি পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল হন এবং আমৃত্যু এই পদে বহাল থাকেন। পাকিস্তানে তাকে কায়েদে আজম মহান নেতা ও বাবায়ে কওম জাতির পিতা হিসেবে সম্মান করা হয়। তবে এই মুসলিম লীগ নেতা সম্পর্কে সম্প্রতি এক বিস্ফোরক তথ্য বেরিয়ে এসেছে। আর এ তথ্য দিয়েছেন প্রখ্যাত লেখক খালিদ লতিফ গৌবা। তিনি তার এক লেখায় লিখেছেন, তিনি জিন্নাহকে কোনো একটা মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। জবাবে এই মুসলিম লীগ নেতা বলেছিলেন, ‘আমি জানি না কীভাবে নামাজ পড়তে হয়।’ তার এ উত্তরের পরিপ্রেক্ষিতে গৌবা বলেছিলেন, মসজিদে অন্যরা যা করবে, আপনিও তাদের দেখাদেখি সেটাই না হয় করবেন। এমনটা করলেই হবে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করাচীতে জিন্নাহর দিনটা শুরু হতো সকাল সাড়ে আটটার দিকে। একটা বড় টেবিলে তার জন্য ফাইলবন্দি কাগজপত্রের একটা স্তূপ রাখা থাকত। পাশেই থাকত ক্রেভিন নামের সিগারেটের একটা বাক্স। তার কাছে সুগন্ধি কিউবান সিগার থাকত। সুগন্ধির গন্ধে তার ঘর সবসময়ে ম ম করত। জিন্নাহ নিজেকে মুসলমানদের রাজনৈতিক নেতা বলেই মনে করতেন। ধর্মীয় নেতা কখনও হতে চাননি তিনি। সে কারণে তাকে বেশ কয়েকবার ধর্ম-সঙ্কটেও পড়তে হয়েছে।
ভারতের বৈদেশিক গুপ্তচর এজেন্সি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং বা ‘র’-এর প্রাক্তন বিশেষ সচিব ছিলেন তিলক দেভেশর। তার বই, পাকিস্তান ‘এট দ্য হেল্ম’-এ দেভেশর লিখেছেন, ভারত আর পাকিস্তানের স্বাধীনতার মাস খানেক আগে লর্ড মাউন্টব্যাটেন জিন্নাহকে বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন যাতে তিনি দুই দেশের যৌথ গভর্নর জেনারেল পদটা গ্রহণ করেন। তার যুক্তি ছিল যদি জিন্নাহ শুধুই পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল হন, তাহলে তার ক্ষমতা সীমিত হয়ে যাবে।
দেভেশরের কথায়- এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে জিন্নাহ লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে বলেছিলেন, আপনি সেটা নিয়ে চিন্তা করবেন না। আমার প্রধানমন্ত্রী সেটাই করবেন, যেটা আমি বলব। আমি তাকে উপদেশ দেব, আর সেটা পালন করা হবে।
বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জিন্নাহর শরীরে বাসা বেঁধেছিল এক মরণ রোগ। তার চিকিৎসক ডা. জাল প্যাটেল এক্সরে প্লেটে চোখ রেখেই দেখতে পেয়েছিলেন ফুসফুসে ছোপছোপ দাগ। কিন্তু তিনি সবার কাছ থেকে গোপন রেখেছিলেন ব্যাপারটা।
১৯৪৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর জিন্নাহকে কোয়েটা থেকে ভাইকিং বিমানে চাপিয়ে করাচী নিয়ে আসা হয়। ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত পাকিস্তানের জনক কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ওজন তখন মাত্র ৪০ কিলোগ্রাম। যে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে গভর্নর হাউসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, মাঝপথে সেটার পেট্রল শেষ হয়ে যায়।
তিলক দেভেশর বলছেন, এটা ভাবা যায় যে পাকিস্তানের জন্মদাতা, গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর ওইরকম শারীরিক অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সের তেল শেষ হয়ে গেল মাঝপথে! সামরিক সচিব অনেক চেষ্টা করে ঘণ্টাখানেক পরে একটা অ্যাম্বুলেন্স সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। অ্যাম্বুলেন্সেই জিন্নাহর পালস কমে আসছিল। সেই রাতেই তিনি মারা যান। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই সেপ্টেম্বর করাচিতে তার বাসভবনে মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর মৃত্যু হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে যক্ষা রোগে ভুগছিলেন। ১২ সেপ্টেম্বর তাকে দাফন করা হয়।
‘আমি জানি না কীভাবে নামাজ পড়তে হয়।’ তার এ উত্তরের পরিপ্রেক্ষিতে গৌবা বলেছিলেন, মসজিদে অন্যরা যা করবে, আপনিও তাদের দেখাদেখি সেটাই না হয় করবেন। এমনটা করলেই হবে।