নারী ও পুরুষে মানবসভ্যতা পরিপূর্ণ

নারী ও পুরুষে মানবসভ্যতা পরিপূর্ণ

তানজিল আমির ● নারী ও পুরুষ মিলেই সংসার, মানবসভ্যতা। নারীকে ছাড়া পুরুষ চলতে পা্রে না তেমনি পুরুষকে ছাড়াও নারী অচল। একজনকে আরেকজনের জন্য পরিপূরক করে আল্লাহ তাআলা পাঠিয়েছেন। এ কারণেই বিয়েকে ‘ফাসতাকমালাল ঈমান অর্থাৎ ঈমানের পরিপূর্ণতা বলা হয়েছে। মূলত দয়াময়ের করুণাতেই তো বেঁচে আছি আমরা। তার করুণা ছাড়া কোনো সৃষ্টির অস্তিত্বের কল্পনাও সম্ভব নয়। জগতের চিরস্থায়ী সুখ অথবা দুঃখ নির্ধাণের পরীক্ষার জন্যই আমাদের পাঠানো হয়েছে এ দুনিয়ায়। কোরআনে এরশাদ হচ্ছে ‘যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমাদের পরীক্ষা করেন যে, তোমাদের মধ্যে কাজে কে অধিক উত্তম’।

দুনিয়ার সামান্য এ ক্ষণটি আমাদের পরীক্ষার সময়, মূল গন্তব্য আখিরাতের পথে। দুনিয়ার সময়টি যথার্থ ও আনন্দময় করার জন্য মানবজাতিকে সৃষ্টিগতভাবে নারী ও পুরুষের সমন্বয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে, নারী ও পুরুষ মিলেই পূর্ণ হয়েছে মানবসভ্যতা। আর নারী ও পুরুষের মাঝে সামান্য কিছু যে পার্থক্য রয়েছে,তা মূলত কোনো বিভাজন নয়, বরং সৃষ্টির পূর্ণতা ও উৎকর্ষতার জন্যই একে অপরের পরিপূরক হিসেবে সৃজিত জুটি সৃষ্টার অপরূপ ও মমতাময়ী সৃষ্টি নারীজাতি। পবিত্র কোরআনে নারীদের ব্যাপারে আল্লাহর বাণী- হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় করো, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন, আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। তেমনি আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচনা করে থাক এবং আত্মীয়-স্বজনদের ব্যাপারে সতর্ক থাক। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন।’ এটি সূরা নিসার প্রথম আয়াত।

[‘নিসা’ শব্দটির অর্থ নারী।] এ সূরা নিসা নামটিই প্রমাণ করে কোরআন নারী জাতিকে, কি সম্মান দিয়েছে। মূলত এ আয়াতটি নারী জাতি সম্পর্কে ইসলামের ভাবধারা, ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি এবং পুরুষ ও নারীর পারস্পরিক দায়িত্ব-কর্তব্য ও সম্পর্কের রূপরেখা সম্পর্কে পূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। প্রথমত আল্লাহতায়ালা এ আয়াতে কারিমায় ইরশাদ করেন, এ দুই শ্রেণীর সৃষ্টি একই পদ্ধতিতে হয়েছে। এ দুই শ্রেণীর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে জড়িত। যেন একই দেহের দুটি অঙ্গ। পুরুষ ও নারীর শারীরিক গঠনাকৃতিতে সামান্য পার্থক্যের কারণ হচ্ছে, যাতে দু’জন তাদের জীবন সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে পাড়ি দিতে পারে। কেননা প্রথমত এ দুই জাতির অস্তিত্ব একই সত্তা থেকে। তারপর ওই এক সত্তাকে দু’ভাগে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। এতদসত্ত্বেও এ দু’জাতির মধ্যে কোনো বিরোধ-বৈপরিত্য নেই। বরং অবশেষে তারা গিয়ে একই কেন্দ্রে মিলিত হয়।

এ পৃথিবীতে সফররত মানুষকে তার সফরসঙ্গী স্বজাতি থেকে দেয়া হয়েছে আর সে তারই শরীরের অংশ। এরপর ওই দু’জনের মাধ্যমে মানব প্রজন্মের সৃষ্টি ও বিস্তার হয়েছে। আল্লাহতায়ালা দু’জনের বন্ধুত্ব, প্রেম-ভালোবাসা ও সহযাত্রায় বরকত দান করেছেন। ফলে যারা মাত্র দু’জন ছিল, তাদের থেকে জন্ম নিয়েছে শত-সহস্র আর হাজার থেকে লাখলাখ কোটি। এমনকি মানব জাতির নির্ভুল পরিসংখ্যান কেউই দিতে পারবে না, কত কত মানুষ সৃষ্টি হয়েছে, তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। ‘কাসিরা’ শব্দে সে ইঙ্গিতই করেছেন আল্লাহ।
এত গেল সৃষ্টির সূচনা ও নারীর সৃষ্টিগত মর্যাদার বিষয়।

এখন আমরা দেখব সামাজিকভাবে ইসলাম নারীর কতটুকু মূল্যায়ন করেছে এবং সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করেছে, সূরা আহযাবের ৩৫নং আয়াতের অর্থ ‘নিশ্চয় মুসলমান পুরুষ, মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ, ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ, ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীলা নারী, রোজা পালনকারী পুরুষ, রোজা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হেফাজতকারী পুরুষ, যৌনাঙ্গ হেফাজতকারী নারী, আল্লাহর অধিক জিকিরকারী পুরুষ ও জিকিরকারী নারী- তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।’

দেখুন, আল্লাহর বাণী কত প্রজ্ঞাময়, পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এ আমলগুলোর চেয়ে উত্তম প্রতিষেধক আর কি হতে পারে। কাজেই মহান আল্লাহ ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদের ঐক্যবদ্ধ আর কল্যাণ তাকওয়ার কাজে পরস্পর সাহায্যকারী রূপে দেখতে চান। তিনি ইরশাদ করেন ‘আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভালো কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবনযাপন করে। এদেরই ওপর আল্লাহর দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, সুকৌশলী’। (সূরা তওবা : ৭১)।

ইসলামে নারীর অবস্থান ও মর্যাদা স্পষ্ট, প্রথমত নারীকে আলাদাভাবে দেখার সুযোগ নেই। তাই শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রে নারীর পিছিয়ে থাকার কোনো অবকাশ নেই। আজকের এ সময়ে আমাদের নারীরা সমাজে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছে। মানুষ হিসেবে এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। বিশ্বজুড়েই নারীরা আজ নিগৃহিত হচ্ছে বিভিন্নভাবে। তাই সৃষ্টির উৎস মমতাময়ী নারী জাতির সামগ্রিক কল্যাণ ও উন্নতির জন্য আল্লাহর বিধানই হতে পারে একমাত্র মুক্তির সনদ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *